09-12-15-PM_Rokeya Podok-3

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলাম নারীদের সুযোগ দিয়েছে এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের অধিকার নিশ্চিত করেছে তাই কোন অজুহাতে চাকরি করা থেকে দেশের নারীদের নিরস্ত করার কোন অবকাশ নেই।তিনি বলেন, শালীনতা বজায় রেখে মহিলারা সকল কাজ করতে পারে। ইসলাম তাদের সেই সুযোগ দিয়েছে। ইসলাম একমাত্র ধর্ম, যে ধর্ম নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছে, হোক তা সম্পদ অথবা কর্মক্ষেত্র। তিনি বিবি খাদিজার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, তিনি নারীদের মধ্যে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, পেশার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী।মহানবীর (সা.) স্ত্রী বিবি আয়েশা যুদ্ধ ক্ষেত্রে সব সময় মহানবীর (সা.) পাশে থাকতেন এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি আমাদের সামনে সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত এবং আমরা এটি সর্বদা সামাজিকভাবে ধারণ করবো।বুধবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবসের উদ্বোধন এবং বেগম রোকেয়া পদক-২০১৫ বিতরণকালে তিনি একথা বলেন।

এ বছর বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লোকহিতৈষী ও সমাজকর্মী ড. তাইবুন নাহার রশিদ সম্মানজনক বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন।বিবি রাসেল এবং মরহুম তাইবুন নাহারের পুত্র আলী আসগর খুরশীদ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছেন। ১৯৯৫ সালে বেগম রোকেয়ার নামে সরকার এই এ্যাওয়ার্ড চালু করে। বেগম রোকেয়া অবিভক্ত বাংলার নারী স্বাধীনতা আন্দোলনের পথিকৃৎ, তিনি ছিলেন শীর্ষ নারীবাদী লেখিকা এবং বিশ শতকের প্রথমদিকের বিশিষ্ট সমাজকর্মী এবং লিঙ্গ সমতা ও নারী শিক্ষায় তাঁর অসামান্য প্রচেষ্টার জন্য তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই এ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এতে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।এ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করে বিবি রাসেল নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন। মাইক্রো ক্রেডিট নয়, মাইক্রো সেভিংসের মাধ্যমেই দেশের সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকদের উন্নয়ন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, মাইক্রো ক্রেডিট নেওয়ার পর এই সুদ তাদের শোধ দিতে হয়। এই সুদ দিতে দিতে তারা কিন্তু আর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পায় না; কোনো স্থায়ী কার্যক্রমও হাতে নিতে পারে না।কীভাবে দ্রুত কিছু উপার্জন করবে আর ওই সুদটা শোধ করবে- সেই চিন্তাই থাকে।বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে শোনা তার পরিকল্পনাগুলো অনুসরণ করেই দারিদ্র্য বিমোচনে আত্মকর্মসংস্থানমূলক একটি বাড়ি একটি খামার এবং আশ্রয়ন প্রকল্প চালু করার কথা জানান সরকার প্রধান।তিনি বলেন, একটি বাড়ি একটি খামারে আমি যেটা নিয়ে এসেছি- মাইক্রো সেভিংস। অর্থাৎ তাদের সঞ্চয়।আমরা তাদের টাকা দেব, কিছু প্রশিক্ষণ দেব, তারা উপার্জন করবে। উপার্জন করে তারা যদি একশ টাকা সঞ্চয় করতে পারে, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে আরও একশ টাকা দেওয়া হবে। সরকারের পক্ষ থেকে দুই বছর পর্যন্ত এই টাকা দেওয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য, এর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিনোচন করা। প্রত্যেকটা পরিবার যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। আর্থিকভাবে যেন স্বচ্ছল হতে পারে। আরেকটা কথা হচ্ছে, তার সঞ্চয় যেন হয়।তাদের একটা আত্মমর্যাদা বোধও হবে, আর কারও ভয়ভীতিতে থাকতে হবে না। দরিদ্রের হাত থেকে তারা উঠে আসতে পারবে।

একটি বাড়ি একটি খামার এবং আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী অনেকেই এখন নিজেদের বাড়িতে থাকছেন উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে ওইখানে থেকে নিজে বাড়ি কিনে উঠে গেছে। আমাদের লক্ষ্য কেউ যাতে অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়। নিজেদের কর্মসংস্থান যেন নিজেরা করতে পারে।দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত থাকলেও পরে তা সংশোধন করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত করা হয়। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সারা দেশে ৪০ হাজার ৫২৭টি গ্রামে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।প্রকল্পের আওতায় উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতে ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ বাজার গড়ে তোলা হয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা ও গ্রোথ সেন্টারে এসব পণ্য বিক্রির জন্য সমবায়ভিত্তিক বাজার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করা হয়েছে।জাগরণের কাজ‘কঠিন সাধনার মন্তব্য করে বেগম রোকেয়া লিখেছিলেন, কোনো ভাল কাজ অনায়াসে হয় না। বেগম রোকেয়ার এই লাইন উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কতো বাস্তব কথাটা উনি বলে গেছেন। যখনই আমরা কোনো কাজ করতে গেছি। বাধা অতিক্রম করে করতে হয়েছে। কিন্তু, আমরা করেছি।শালীনতা বজায় রেখে নারীরা সব কাজ করতে পারি- মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্ম নারীদের সেই সুযোগ দিয়েছে।

ইসলাম ধর্ম একটা ধর্ম, যেখানে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা আছে। সেটা সম্পদেই হোক বা কর্মক্ষেত্রেই হোক।কোনো অযুহাতে মেয়েদের কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে রাখা যাবে না- একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তা ইসলাম ধর্মে নেই। বরং ইসলাম ধর্ম সেই সুযোগ করে দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, নারীকে তার আপন ভাগ্য জয় করে নিতে হবে। কাজ নিজে করার মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস, সেই আত্মবিশ্বাসই আত্মমর্যাদার পথ করে দেবে।তাঁতশিল্প ও তাঁতীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখায় ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল এবং নারীর উন্নয়ন ও সমাজসেবায় অবদানের জন্য কবি তাইবুন নাহার রশীদ মরণোত্তর বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন এ বছর।প্রয়াত তাইবুন নাহারের পক্ষে তার ছেলে আলী আজগর খুরশীদ পদক গ্রহণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বিবি রাসেলের গলায় পরিয়ে দেন রোকেয়া পদক।প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক ছাড়াও এক লাখ টাকা এবং একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।পদক পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বিবি রাসেল বলেন, আজকে আমার জন্য খুবই খুশির দিন। জীবন চলার পথে যখন আমার একটা শক্তির দরকার, তখনই বেগম রোকেয়া পদক পেলাম। আমি অনেক খুশি। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতেই ভুল স্বীকার করে বলেন, মিসেস রশীদ (তাইবুন নাহার রশীদ) নেই। আমাদের ভুল হয়ে গেছে, আমাদের ওনাকে অনেক আগেই পুরস্কৃত করা উচিত ছিল।বিবি রাসেলকে অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রংপুরের নিশবেতগঞ্জে সতরঞ্জি তৈরি হয়। তারাই তীর ধনুক নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথম রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করেছিল।নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের নিজ পায়ে দাঁড়াতে সহায়তা করেছেন09-12-15-PM_Rokeya Podok-3

নারীর অগ্রগতির লড়াইয়ে সময় দেওয়ায় নিজের মেট্রিক পরীক্ষা দেওয়া হয় নাই বেগম রোকেয়ার। তিনি এক চিঠিতে লিখেছিলেন, আমার মেট্টিক পরীক্ষা কেয়ামতের পরদিন দেওয়া হইবে। শেখ হাসিনা বলেন, তার স্বপ্ন তো পূরণ হয়েছে। তৃণমূল ও গ্রামের মানুষের ধীরে ধীরে উন্নয়ন এবং নারীর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র প্রসারিত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মৎস্য চাষ, কৃষি, হাঁস ও মুরগী পালন, হাউজ কিপিং অ্যান্ড কেয়ার গিভিং, বিউটিফিকেশন, মাশরুম চাষ, রন্ধন প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণন, বেসিক কম্পিউটার, আধুনিক গার্মেন্টস, মধু চাষ, লন্ড্রি, এমব্রয়ডারি বিষয়ে আবাসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নগরভিত্তিক প্রান্তিক মহিলা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। প্রায় ২৫টি ক্ষেত্রে সরকার পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে নারীদের ব্যাপক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালাচ্ছে, যাতে নারীরা আত্মকর্মসংস্থান করতে পারে।