দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫: আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পৌর নির্বাচনে অংশ নিতে ২১টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা তাদের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। মেয়র পদে মোট মনোনয়ন জমা পড়েছে ১ হাজার ২১৯টি। এরমধ্যে দলীয় ৭১১টি ও স্বতন্ত্র ৫০৮টি। রোববার নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব শামসুল আলম প্রাথমিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জাকের পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণতন্ত্রী পার্টি ও গণফোরাম প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির তালিকা দিলেও কোনো প্রার্থী তাদের দলের পক্ষে মনোনয়ন গ্রহণ করেনি।ইসি কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে ২৫টি দল কমিশনকে জানিয়েছিল।
এরমধ্যে চারটি দলের মনোনয়নপত্র পাওয়া যায়নি।পাইকগাছা পৌরসভা নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের প্রত্যয়নপত্রসহ একজন মনোনয়ন জমা দিলেও প্রত্যয়নপত্র ছাড়া নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাবি করে দুজন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এছাড়া বেতাগী পৌরসভাতেও আওয়ামী লীগ থেকে একজন প্রার্থীকে প্রত্যয়নপত্র প্রথমে দেয়া হলেও পরে তা প্রত্যাহার করে অন্য প্রার্থীকে প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়। উল্লেখ্য, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মোট ১৩ হাজার ৬৮৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে ১ হাজার ২১৯ জন সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৬৬৮ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯ হাজার ৭৯৮ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রোববার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৩ ডিসেম্বর। ১৪ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। আর ২৩৪ পৌরসভায় ভোট গ্রহন করা হবে ৩০ ডিসেম্বর।প্রাথমিকভাবে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৩৬টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আদালতের নির্দেশে মংলা ও মানিকগঞ্জের সিংগাইর পৌর নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে, দলীয় প্রধানরা পৌর নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে পারলেও জনসভা বা শোভাযাত্রা না করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। রোববার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি ব্যাতীত দলীয় প্রধান হোক বা সাধারণ মানুষ হোক সবাই নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে পারবেন।
তবে বিশাল বহর নিয়ে মিছিল, শোভাযাত্রা, শোডাউন করা যাবে না। আমাদের কথা হচ্ছে, অনুগ্রহ করে আইন ভাঙবেন না, সে যেই হোক বিধি ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নিতে হবে, যা সুখকর হবে না।নির্বাচনী বিধি অনুসারে, সরকারি সুবিধাভোগী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও সিটি মেয়রদের পৌর নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে দলীয় প্রধানদের প্রচারনায় বাধা নেই। সে হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৌর নির্বাচনের প্রচারণায় যেতে পারবেন। চলতি বছরে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। যদিও ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে মাঝপথে নির্বাচন ছেড়ে চলে যান বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।
সাংসদদের নির্বাচনী প্রচারণায় না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে শাহ নেওয়াজ বলেন, ইতোমধ্যে অনেক সাংসদ প্রচারণার জন্য এলাকায় যাচ্ছেন। তবে দল থেকে এখনো কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। সাংসদরা জ্ঞানী-গুনী ব্যক্তি। আপনারা আইন প্রণেতা। আপনারা আইন ভাঙবেন না। এমন কিছু করবেন না যাতে আমরা অপ্রস্তুত ও বিব্রত অবস্থায় পড়ে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হই।তিনি আরো বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি। এরপরও ইসিতে কোনো অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেব। কোনো সাংসদও যেনো প্রচারণায় না যান সে বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।কোনো কর্মকর্তা বা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য ইসির নির্দেশনা না মানলে বা মাঠ পর্যায়ে কাজে অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন শাহনেওয়াজ। বিএনপিসহ যেসব দল সংসদের বাইরে রয়েছে, তাদের প্রধানরা পৌর ভেটে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নামার সুযোগ পেলেও তাদের আইন মনে করিয়ে দিয়ে সতর্ক করেছে নির্বাচন কমিশন।নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কথা হচ্ছে- অনুগ্রহ করে আইন ভাঙবেন না। সে যেই হোক, বিধি ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নিতে হবে- যা সুখকর হবে না।
তিনি সরকারি সুবিধাভোগীদের নির্বাচনের প্রচারে না যেতে অনুরোধ করেন এবং যারা সুবিধাভোগী নন, তাদেরও বিধি অনুসরণ করার আহ্বান জানান।সরকারি সুবিধাভোগী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও সিটি মেয়রদের পৌর নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আইনে। তবে দলীয় প্রধানদের প্রচারে বাধা নেই। শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হয়েও প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকায় এবার পৌর ভোটের প্রচারে যেতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদে থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।তবে সংসদের বাইরে থাকায় সরকারি কোনো সুবিধা নিচ্ছেন না বলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভোটের প্রচারে বাধা নেই।বিএনপিনেত্রীর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শাহনেওয়াজ বলেন, পথসভা করতে বাধা নেই। কিন্তু পথসভা যেন শোভাযাত্রা বা জনসভায় পরিণত না হয়।ইসিকে যেন ‘বিব্রতকর বা অস্বস্তিকর সিদ্ধান্ত নিতে না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, পৌর ভোটের প্রচারে পথসভা বা ঘরোয়া সভা করতে হলে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। বিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের দণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।আর দল বিধি ভঙ্গ করলেও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে নির্বাচনী আইনে।আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় ভোট হবে। ইতোমধ্যে ১৩ হাজারেরও বেশি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা।১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হবে। এরপরই প্রতীক নিয়ে প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা।
শাহনেওয়াজ বলেন, ইতোমধ্যে অনেক সাংসদ প্রচারে নামার চেষ্টা করছেন বলে ইসি খবর পাচ্ছে। তবে দলীয়ভাবে এখনো কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আসেনি।আপনারা আইন প্রণেতা, আপনারা আইন ভাঙবেন না। এমন কিছু করবেন না যাতে আমরা অপ্রস্তুত ও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি।তিনি বলেন, বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া আছে। এরপরও ইসিতে কোনো অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো কর্মকর্তা বা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য ইসির নির্দেশনা না মানলে বা মাঠ পর্যায়ে কাজে অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান শাহনেওয়াজ।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রী, এমপিসহ সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দিতে স্পিকার ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হবে।এক প্রশ্নের জবাবে শাহনেওয়াজ বলেন, কেউ ইচ্ছে করে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা সুন্দর নির্বাচন করতে চাই। কেউ যাতে সরে যেতে বাধ্য না হয় সে বিষয়ে সজাগ রয়েছি; সে ব্যবস্থাও নেব। কিন্তু ইচ্ছে করে সরে গেলে করার কিছু থাকবে না। পৌর ভোটে কেউ যেন হস্তক্ষেপ না করে সে বিষয়েও সবাইকে সতর্ক করেন এ নির্বাচন কমিশনার।তিনি বলেন, কেউ যেন ভোটে হস্তক্ষেপ না করেন। স্বপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ যেন বাড়াবাড়ি নাক না গলায়। গত সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে অন্য কেউ যেন হস্তক্ষেপ না করে সে ব্যবস্থা নিয়েছি।