দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫: আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্র“তিবদ্ধ সরকার। সংবিধান নাগরিকের মৌলিক অধিকারকে কে সুরক্ষা দিয়েছে। তাই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী যেই হোক, সরকার কঠোর হাতে তাদের দমন করবে। রোববার সকালে সিরডাপ মিলনায়তনে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দু’দিনব্যাপী সেমিনারের উদ্বোধনী আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।নির্দিষ্ট সময় পর পর দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনার (ইউপিআর) একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। দ্বিতীয় পর্যায়ের ‘ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউ- ইউপিআর’ প্রণয়ন উপলক্ষে দু’দিনব্যাপী সেমিনারের আয়োজন করেছে জাতীয় এ সংস্থাটি।
দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে দাবি করে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, দেশে আইনের শাসন আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু একটি গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এরাই এক সময় এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করেছে। দেশি-বিদেশি নানা চাপের মধ্যেও সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করেছে। এ বিচার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ধসঢ়;ক্ষার কথা তুলে ধরতেই আমাদের এ আয়োজন। আজ এমন একটি মাসে আমরা এ আয়োজন করেছি, যে মাসে আমারা আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলাম।গুম, খুন, বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশ নাগরিক-রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। অপরাধ-অপরাধীর কাছ থেকে নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রের এ দায়িত্ব পালন করে সরকার। ফলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর এবং সহনশীল দুটোই হতে হবে।
মিজানুর রহমান বলেন, আজকে যখন কন্যাশিশুর বিয়ের বয়স ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ বছর প্রস্তাব করা হয়, তখন আমরা আঁতকে উঠি। আমাদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়। রাষ্ট্রের দায়িত্বই হলো নাগরিকের সকল ধরনের সংশয় দূর করা।আইনমন্ত্রীর কাছে বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে মানবাধিকার কমিশনের এ প্রধান ব্যক্তি বলেন, জাতীয় আইন কমিশন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যৌথভাবে এ আইনটির খসড়া তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আইনটি পাস হয়নি। অর্থনৈতিক-সামাজিক এমনকি সাংস্কৃতিকভাবে বৈষম্য রোধ করতে না পারলে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব না। আইনটি পাস করে বৈষম্যের পথকে রোধ করতে হবে।
আন্তর্জাতিকভাবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এখনো স্বাধীন সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, স্বাধীন সংস্থা দাবি করা হলেও অর্থনেতিকভাবে কমিশন এখনো স্বাধীন নয়। যেকোনো কিছুর জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্ত হতে হয় কমিশনকে।কমিশনের জনবল সঙ্কটের কথাও তুলে ধরেন চেয়ারম্যান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউএনডিপি, ডিএএনআইডি, এসআইডি, আইএলও’র প্রতিনিধিরা ছাড়াও বক্তব্য দেন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন’র শরৎ চন্দ্র দাশ, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কাজী রেজাউল হক।আরো পাঁচটি সেশনে এ বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার (০৭ ডিসেম্বর) কয়েকটি পর্যায়ে দিনব্যাপী সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ২০০৬ সাল থেকে ১৯৩ সদস্য দেশের মানবাধিকার-পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে ইউপিআর-প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০০৯ সালে সদস্য দেশগুলো নিজেদের মানবাধিকার প্রতিবেদন কাউন্সিলে জমা দেয়। এরপর আলোচনা শেষে প্রতিটি দেশের পরিস্থিতির উন্নয়নে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই এর দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়েছে।
এসব সেমিনারে বাংলাদেশ প্রথম পর্যায়ে পরিস্থিতির উন্নয়নে যেসব অঙ্গীকার করেছিল, তার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকারকর্মী, উন্নয়ন-সহযোগী, সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সুপারিশ তৈরি করবে।