দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলাম। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কোথায় আজ গণতন্ত্র? ডেইলি স্টার পত্রিকাও লিখেছে গণতন্ত্র কত দূর? জানি না, গণতন্ত্রের মুখ কখন দেখব।রোববার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ উপলক্ষে জাপা আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এরশাদ এ মন্তব্য করেন। ৬ ডিসেম্বর অন্য দলগুলো স্বৈরাচার পতন দিবস হিসেবে পালন করলেও এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি দিনটিকে ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ হিসেবে পালন করে। জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিঃশেষ করার চেষ্টা করে এখন বিএনপিই নিঃশেষ হওয়ার পথে বলে মন্তব্য করেছেন জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।এরশাদ বলেন, বিএনপি জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিঃশেষ করতে চেয়েছিল। আমার নামে ৪২টি মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর বিচার আছে। আজ তাদের ঠিকানা নাই। বিএনপিই এখন নিঃশেষ হওয়ার পথে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, তিনি অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন, কিন্তু এক্স-রে করে তার মেরুদণ্ড পাওয়া যায়নি। তিনি একজন মেরুদণ্ডহীন মানুষ। মেরুদণ্ড থাকলে তিনি যেন আগামী পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দেখান।বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, তারা দু‘দলই জিঘাংসার রাজনীতি করে। জনগণ তাদের পছন্দ করে না, জনগণ পরিবর্তন চায়, জাপাকে চায়। আল্লাহ আমাদের সুযোগ দিয়েছেন, এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ কোথাও গণতন্ত্র? আজকে ডেইলি স্টার লিখেছে গণতন্ত্র কত দূর? গণতন্ত্রের মুখ কখন দেখব, জানি না। জনগণ ভাবছে, এরশাদ সাহেব থাকলেই মনে হয় ভালো হতো, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতো।এরশাদ বলেন, পৌরসভা নির্বাচন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের অতীতের অপকর্মের কথা মানুষ ভুলে যাবে। একটা কথা আমি বারবার বলি, এই নির্বাচনে সব আসনে আওয়ামী লীগ হেরে গেলেও ক্ষমতা তাদের যাবে না। কিন্তু আমরা কী আশা করি, তোমরা কী আশা কর? সুষ্ঠু নির্বাচন হবে?’ তখন দলটির নেতা-কর্মীরা না না বলে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। এরশাদ তাঁদের থামিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি হবে না, এটা তাদের বুঝতে হবে। মানুষের মনের সংশয় দূর করতে হবে। আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, যে তাদের অধীনে সব নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।সব সরকার তাঁর ও জাপার নেতা-কর্মীদের ওপর অন্যায় করেছে উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ বলেন, সুবিচার আমরা কোথাও পায়নি। বিএনপি ক্ষমতায় এসে ৪২টি মামলা দিল। খুনের মামলা দেওয়া হয়েছে, দুর্নীতির মামলা দেওয়া হয়েছে। অত্যাচারের শিকার হলাম আমি ও আমার দল। আল্লাহর অশেষ মহিমায় যারা আমাকে অত্যাচার ও নির্মূল করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের আজ ঠিকানা নেই। তারা নির্মূল হয়ে যাওয়ার পথে। এই হলো আল্লাহর বিচার।
এরশাদ বলেন, টিআইবি বলেছে বাংলাদেশে বাংলাদেশে দুর্নীতির সূচক কমেছে। দুর্নীতি বাড়ছে। কোথায় যাচ্ছে সম্পদ, কীভাবে যাচ্ছে। আমরা সবই জানি। কিন্তু আমাদের বলার সাহস নাই।সাবেক মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যায় মামলা তাঁকে জড়ানো প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, খালেদা জিয়া দিয়েছেন মঞ্জু হত্যা মামলা। ১৪ বছর নয় মাস পর মামলা। হত্যা হয়েছে ৮১ সালে, মামলা দিলেন ১৯৯৫ সালে। সেই মামলা এখনো শেষ হয়নি। কখনো শেষ হবে না। কবরে গেলেও সেখানে সমন যাবে। এ সরকারও শেষ করবে না। কিচ্ছু যায় আসে না। কারণ আমি জানি, আমি নির্দোষ। আমার হাতে রক্তের দাগ নাই।জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম ফয়সাল চিশতী, দেলোয়ার হোসেন খান, মীর আবদুস সবুর আসুদ, সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।