দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫: বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম না করলে সীমান্তে হত্যা কমে আসবে। বর্তমানে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়নি এটা সত্য। তবে কিছুটা কমে এসেছে।দায়িত্ব নেয়ার তিনবছর পূর্তি উপলক্ষে রোববার দুপুরে বিজিবি সদর দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও নিজের বিভিন্ন অর্জন নিয়ে কথা বলেন বিজিবি মহাপরিচালক।২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর দায়িত্ব নেন সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের জঙ্গি তৎপরতা ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারি ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
আজিজ আহমেদ বলেন, তিন বছরে বিজিবির জন্য ২৭৬টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। রণকৌশল নির্ধারণে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রশিক্ষণে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবারই প্রথম বিজিবিতে একশ নারী সদস্য যুক্ত হচ্ছে। জানুয়ারিতে তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে।মতবিনিময় সভার পর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবিপ্রধান বলেন, জঙ্গি কর্মকাণ্ড ঠেকাতে বিজিবি সতর্ক রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।মাদক পাচারও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে দাবি করে তিনি বলেন, ফেনসিডিল অনুপ্রবেশ কমে এসেছে। এরপরও যা আসছে তা আমাদের উদ্বেগের কারণ। এক্ষেত্রে চাহিদার জায়গা নিয়ন্ত্রণ করলে সাপ্লাই কমে যাবে।
কেবল সীমান্ত এলাকা দিয়ে নয়, বিমান ও নৌপথেও অনেক সময় নিষিদ্ধ মাদক দেশে আসছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।এসব ঘটনায় বিজিবির কেউ জড়িত থাকছে কি না জানতে চাইলে মহা পরিচালক বলেন, আমাদেরও দুর্বলতা আছে। আমি কখনও বলব না, আমাদের শতভাগ লোক ধোয়া তুলসিপাতা। তবে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। চোরাচালানে সম্পৃক্ততা ও নারীঘটিত কারণে গত তিন বছরে প্রায় একশ জনকে বিজিবি থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের জন্য শিগগিরই সীমান্ত ব্যাংক চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।ডিজি বলেন, বিজিবি সদস্যদের কল্যাণ ও সহযোগিতায় সীমান্ত ব্যাংক চালুর চেষ্টা চলছে।তিনি বলেন, সেনা কল্যাণে গঠন করা হয়েছে সেনা কল্যাণ ট্রাস্ট।
তেমনি বিজিবি সদস্যদের সহযোগিতায় বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে ও সীমান্ত ব্যাংক স্থাপনের চেষ্টা চলছে।বিজিবি সদস্যরাও যেনো চাকরি থেকে অবসরের পর সেনা সদস্যদের মতো সুযোগ-সুবিধা পান সেজন্য ব্যাংক ও ট্রাস্ট কাজ করবে।তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে ১২ হাজারের বেশি ইপিআর (বিজিবি’র তৎকালীন নাম) সদস্য অংশ নেন। তাদের মধ্যে ৮শ ১৭ জন শহীদ হন। শহীদ হওয়া ও খেতাবপ্রাপ্ত সদস্যদের পরিবারকে সহযোগিতার জন্য কাজ করবে এই ব্যাংক।ইতোমধ্যে বিজিবি’র তহবিল ও ট্রাস্ট থেকে সহযোগিতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। গত তিন বছরে ৪৮ জন খেতাবপ্রাপ্ত ইপিআর সদস্যের বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ফেলানী হত্যা মামলাসহ সীমান্তে হত্যা, নারী ও শিশু পাচার, মাদক চোরাচালান রোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ( বিজিবি) ও ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের মধ্যে ২২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সীমান্ত সম্মেলন।বিজিবর সদর দফতরে (পিলখানায়) ২২ থেকে ২৭ ডিসেম্বর দু’দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ডিজি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের ৩ বছরের মেয়াদকালের এই বাহিনীর সফলতার বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।বিজিবি’র মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ বলেন, দেশের নাগরিকরা সচেতন হলে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব।
আমাদের দেশের জনগণ যদি রাতের আধারে অবৈধ ভাবে সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ না করে তাহলেই সম্ভব। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নাগরিকদের সচেতনতা প্রয়োজন। নাগরিকরা সচেতন হলেই এটা আর থাকবে না।সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, গত বছর সীমান্তে ৪০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ৩৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে।তিন বছর আগে বিজিবি’র ডিজি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় আজিজ আহমেদ বলেছিলেন, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনবো। তার সেই প্রতিশ্র“িিত পূরণ না হওয়ার পেছনে নাগরিকদের অসচেতনতাকেই দোষারোপ করলেন ডিজি।
ডিজি বলেন, নাগরিকরা সচেতন না বলেই সীমান্ত হত্যাকাণ্ড শূণ্যের কোটায় আনা যায়নি। ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর আমি বিজিবি’র জিডি হিসেবে দায়িত্ব নেই। এরপর সফলতা ব্যর্থতার মধ্যদিয়ে আমার পথচলা। সীমান্তের খবর মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি।তিনি বলেন, আমার আমলে আমি ২৭৩ টি স্থপনা নির্মাণ করেছি। আরও ১৬৭ টি প্রক্রিয়াধীন। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি বিজিবি ব্যাটালিয়ন সাহসিকতার সঙ্গে সহযোগিতা করে আসছে। বিজিবি’র ট্রেনিংয়ে আনা হযেছে আমূল পরিবর্তন। স্বশস্ত্র বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিজিবির সদস্যদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।ডিজি বলেন, ওয়ারলেস কমুউনিকেশন ছাড়াও এখন প্রতিটি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য চালু করা হয়েছে ভিডিও কনফারেন্স। এর ফলে বিজিবি-ব্যাটেলিয়ানের মধ্যে কানেকটিভিটি আরও জোরদার হয়েছে।
বিজিবির অপারেশন কার্যক্রমে সংযুক্ত করা হয়েছে ২০টি ডগ (কুকুর) স্কোয়াড। মাত্র ২৫ হাজার রুপিতে কুকুর গুলো ভারত থেকে কিনে ও প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এ ডগ স্কোয়াড মাদক স্বর্ণ ও ইয়াবা ধরতে কার্যকরী।বর্ডার আউটপোস্ট বা বিওপি বিজিবি’র চালিকা শক্তি উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বিজিবি’র রয়েছে সাড়ে ৭শ’ বিওপি। আমাদের প্রধান ফোকাস হচ্ছে বিওপি’র উন্নয়ন। আগামী বছর আরও ৬০টি বিওপি স্থাপণ করা হবে।বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বিজিবি সদস্যদের তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য ৩টি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। টেল মেডিসিন কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এজন্য ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সফওয়্যার। এছাড়া বিজিবি সদর দফতরে বিজিবি সদস্যদের সন্তানদের লেখা পড়ার সুবিধার্থে আলাদা ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে।বিজিবির ডিজি বলেন, বিজিবির সদস্যদের কল্যাণে বিজিব ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখানে চাকুরি করতে পারবে।