Rajibpur pictur 01.12.2015 (1)

দৈনিকবার্তা-রাজীবপুর(কুড়িগ্রাম), ০১ ডিসেম্বর ২০১৫: আখ চাষ করে লাভের মুখ দেখছে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত এলাকার অসংখ্য কৃষক। আখ বিক্রি করে পাচ্ছেন নগদ টাকা। বদলে যাচ্ছে তাদের ভাগ্য, স্বচ্ছলতা ফিরে আসছে সংসারে। আখ চাষ করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে অনেক কৃষক পরিবার। গত কয়েক বছরে আখ বিক্রি করে অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলের দৃশ্য দেখে কৃষক ঝুঁকছেন এখন আখ চাষে। আখ চাষে কাঁচা টাকা পেয়ে কৃষকের ঘরে আনন্দ উৎসব চলছে। মনের আনন্দে কৃষকের ক্ষেত থেকে আখ সংগ্রহ এবং ট্রাকে ভর্তি করার ওই চিত্র এখন উপজেলার পূর্বাঞ্চল এলাকা জুড়ে।

ঢাকা নারায়নগঞ্জ শহরে গ্লাস ভর্তি যে আখের রাস বিক্রি হয়ে থাকে তার সিংহ ভাগ আখ আসে রৌমারী থেকে। রৌমারীর মাটিতে চাষ করা আখ আকারে বড়, রস বেশি ও মিষ্টি। আর এ কারনে এখানকার আখের ব্যাপক চাহিদা। আমি গত ৫ বছর ধরে রৌমারী থেকে আখ কিনে ঢাকায় ব্যবসা করছি। কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা যাত্রাবাড়ি এলাকার আখ ব্যবসায়ি আব্দুস সোবাহান। সম্প্রতি রৌমারীতে তার কথা বললে দৈনিকবার্তাকে জানান ওই সব তথ্য। তিনি আরো জানান, তার মতো আরো অনেক ব্যবসায়ি এখন রৌমারী থেকে আখ কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুরসহ অন্যান্য স্থানে ভ্রাম্যমান ভাবে যে আখের রস বিক্রি হয় রৌমারীর আখে।সরেজমিনে খোঁজ খবর ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে আখ চাষে কৃষকের স্বচ্ছলতার কাহিনী। উপজেলার চরলাঠিয়াল ডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুর রশীদ সর্বপ্রথম ৩০ শতক জমিতে আখ চাষ শুরু করেন ১০ বছর আগে। এতে উৎপাদন খরচ হয়েছিল মাত্র ১০ হাজার টাকা। আর সেখানে আখ বিক্রি করেছিলেন প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তার ক্ষেতের আখ আকারে বড় ও মিষ্টি হওয়ায় হাটবাজারে ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। পরের বছর আরো বেশি জমিতে আখ চাষ করেন এবং আবারও লাভের মুখ দেখেন। তার দেখাদেখি চরলাঠিয়াল ডাঙ্গা গ্রামের প্রায় সকল কৃষক অন্য ফসল কমিয়ে আখ চাষে ঝুঁকে পড়েন। এতে গ্রামের সব কৃষক উৎপাদনের খরচ বাদে দ্বিগুন টাকা লাভের মুখ দেখেন। তারপর থেকে ওই গ্রামের মানুষ প্রতিবছরই আখ চাষ করে থাকেন। এখানকার আখ ট্রাকে করে নারায়নগঞ্জ ঢাকায় চলে যায়।

অন্যান্য ফসলের চেয়ে আখ চাষ লাভজনক হওয়ার কারনে আস্তে আস্তে শিবেরডাঙ্গী, বালিয়ামারী নয়াপাাড়া, খেওয়ারচর, লালকুড়া, মরিচাকান্দি, চররাজীবপুর, লাঠিয়ালডাঙ্গা এলাকার কৃষক আখ চাষ শুরু করে। ওইসব এলাকার কৃষকও আখ বিক্রি করে কাঁচা টাকা ঘরে তোলে। আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতা ফেরে এলাকার কৃষকদের। এ অবস্থায় উপজেলার পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৩০ গ্রামের কৃষক এখন আখ চাষকেই তাদের প্রধান ফসল হিসেবে নিয়েছে। এ বছর প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সীমান্ত ঘেষা ওইসব এলাকার জমি বেলে মাটি হওয়ায় আখ চাষ ভালো হচ্ছে। এছাড়া অনুকূল আবহাওয়া এবং উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বক্ষনিক পরামর্শে কৃষক লাভবান হচ্ছে।

চরলাঠিয়াল ডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান জানান, এক বিঘা জমিতে আখ চাষ করলে ৭০ থেকে ৮০হাজার টাকা আখ বিক্রি করা যায়। একটা আখ ১০ টাকা করে পাইকারি বিক্রি করা যায়। খুচরা বিক্রেতারা এক আখ ১৫ থেকে ২০ টাকা বিক্রি করে। এখানকার চাষকৃত আখ অন্য যে কোনো স্থানের আখের চেয়ে আকারে বড় ও খুবই মিষ্টি। আব্দুর রশীদ নামের ওই কৃষক বলেন, ‘আখ চাষ করে গত ১০ বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা আয় করেছি। এখন আমি আমার সব জমিতেই আখ চাষ করছি।

রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজিজুল হক জানান, রৌমারীর মাটি আখ চাষের উপযোগী। সাধারণ বেলে মাটিতে আখের চাষ ভালো হয়। আর এখানকার জমিগুলো হলো বেলে মাটির। এখানে প্রতিবছর আখ চাষির সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে প্রায় এক হাজার কৃষক তাদের জমিতে আখ চাষ করছে। আমাদের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের সময়মতো পরামর্শ দিয়ে থাকে।