দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ নভেম্বর ২০১৫: শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় পার্বত্য অঞ্চলের সামগ্রিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে বলে দাবি ওই অঞ্চলের জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। জুম্ম জনগণের বঞ্চনা ও আশা-আকাঙ্খার প্রতি কোনো তোয়াক্কা না করে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের পরিবর্তে সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ও অস্ত্র শক্তি ব্যবহার করে স্থানীয়দের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দমনপীড়ন করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে শনিবার রাজধানীর হোটেল সুন্দরবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা এমন মন্তব্য করেন। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আইইডি নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমেদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার বিভাগের দীপায়ন খীসা প্রমুখ।
এদিকে শান্তি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ২ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় রাঙামাটি জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে এক গণসমাবেশের কর্মসূচির ঘোষণাও দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে সন্তু লারমা বলেন, সরকার যদি অস্ত্র শক্তি ব্যবহার করে জুম্ম জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দমনপীড়ন করতে থাকে, তাহলে পেছনে ফেরার কোনো উপায় থাকবে না। জুম্ম জনগণ আরো কঠোর ও কঠিন কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, জুম্ম জনগণ তাদের জাতীয় অস্তিত্ব ও আবাসভূমি সংরক্ষণের স্বার্থে আত্মবলিদানে ভীত না হয়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বদ্ধপরিকর। আর যে কোনো অনাকাক্ষিত পরিস্থিতির জন্য সরকার তথা শাসকগোষ্ঠীই দায়ী থাকবে।তবে জনসংহতি সমিতি আশা করে, সরকার তথা দেশের শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের এই বাস্তবতাকে সম্যকভাবে অনুধাবন করে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেবে।
জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা।চুক্তির অষ্টাদশ বার্ষিকী উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ২ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় রাঙামাটি জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে এক গণসমাবেশের কর্মসূচির ঘোষণাও দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়নি দাবি করে সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটি জাতীয় ও রাজনৈতিক সমস্যা। বস্তুত দেশের সামগ্রিক স্বার্থেই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক ও জাতীয়ভাবে সমাধানের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে অনতিবিলম্বে এ চুক্তি বাস্তবায়ন অপরিহার্য।কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রেখেছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় সেখানকার সামগ্রিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক।১৯৯৭ সালে সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তি সই করে স্বাধিকারের দাবিতে পাহাড়ে সশস্ত্র সংগ্রামের ইতি ঘটান সন্তু লারমা।
তারপর থেকে চুক্তি বাস্তবায়নের গতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন তিনি। পুনরায় অস্ত্র হাতে নেওয়ার হুমকিও কয়েকবার দিয়েছিলেন তিনি।সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য রোডম্যাপ তৈরিসহ ছয়টি দাবি জানানো হয়।এর মধ্যে রয়েছে- আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সব বিষয় ও কার্যাবলি কার্যকর করা, অপারেশন উত্তরণ বন্ধসহ সব অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন করে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করা, জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের যথাযথ পুনর্বাসন, ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ও বাংলাদেশ পুলিশ আইন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সব অবাস্তবায়িত বিষয় দ্রুত বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। অ
ন্য দাবিগুলো হচ্ছে- পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের জন্য আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ,সেটেলার বাঙালিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন,পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম অচিরেই বন্ধ করা এবং.পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম স্থগিত রাখা ও এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তির পদক্ষেপ গ্রহণ।