দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ নভেম্বর ২০১৫: পৌরসভা নির্বাচনে একক মেয়র প্রার্থী দেওয়ার পাশাপাশি একক কাউন্সিলর প্রার্থী নিশ্চিত করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।দলটির নেতারা বলছেন, কেন্দ্রের পৌর মনোনয়ন বোর্ড মেয়র প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবেন। আর স্থানীয়ভাবে সদ্য গঠিত মনোনয়ন বোর্ড চূড়ান্ত করবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের। কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় নির্বাচন হওয়ায় কেন্দ্রীয় ভাবে এখানে কোনো তৎপরতা চালাবে না দলটি। এদিকে, পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী মনোনয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হিসেবে থাকছেন দলের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবীর কাউসার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেন।এতে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিটি গ্রহণ করেছেন ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম।বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট পৌর নির্বাচনের আসার সিদ্ধান্তের কারণে আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত করতে কেন্দ্র থেকে একক কাউন্সিলর মনোনয়ন দেওয়ার কঠোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি জোট নির্বাচনে আসায় সব পদেই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হবে দলকে।
দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর দুজন সদস্য বলেন, নির্দলীয় থাকা অবস্থায়ও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় সব সময় একক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ। আর এবার মেয়র প্রার্থী দলীয়ভাবে দেওয়ার বিধান হওয়ায় একক প্রার্থী হবে। ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে পৌরসভার মেয়র প্রার্থী চূড়ান্তের পাশাপাশি যত দূর সম্ভব দলীয় একক কাউন্সিলর প্রার্থী চূড়ান্তের সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়। কাউন্সিলর প্রার্থী চূড়ান্তের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডেই সমঝোতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে স্থানীয় নেতাদের বৈঠক করার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের দলীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। আর যেখানে সমঝোতা হবে না, সেই ওয়ার্ডের বিষয়টি স্থানীয় মনোনয়ন বোর্ডকে জানানোর কথা বলা হয়েছে।
এরপরেও সমঝোতা না হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে কাউকেই দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে না বলে জানান তাঁরা।এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দলের জয় নিশ্চিত করতে সব স্তরে একক প্রার্থী নিশ্চিত করা হবে। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন বলেন, জয় নিশ্চিতের জন্য তৃণমূল নেতারা বসে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারলে অবশ্যই দলের জন্য ভালো। তবে কাউন্সিলর নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ায় কেন্দ্রের কোনো তৎপরতা থাকবে না।দলের একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, শহরের মানুষ রাজনৈতিক সচেতন, ব্যস্ত, ঝামেলায় জড়াতে চায় না। তারপরেও ঢাকা সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর হিসেবে একক প্রার্থী নির্ধারণ করা যায়নি। তাহলে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় কীভাবে সম্ভব হবে? বরং সবাই নির্বাচন করুক। যে জিতবে সে তো আমাদেরই লোক হবে। দু-একটি এদিক-ওদিক হলে তেমন কিছুই হবে না। তবে স্থানীয়ভাবে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে একক কাউন্সিলর প্রার্থী চূড়ান্ত করা গেলে তা দলের জন্য স্বস্তির হবে।
এদিকে, পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যয়নপত্র নিয়েই ইসিতে নিজেদের দলীয় সমর্থন নিশ্চিত করবেন।তা জানিয়ে শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিভাগীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক এ বি এম রিয়াজুল করিম কাওসার ইসি সচিবালয়ে চিঠি দিয়ে এসেছেন।এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে পৌরসভায় মেয়র নির্বাচন হবে বলে কে প্রার্থীদের প্রত্যয়ন করবেন, তা শনিবারের মধ্যে জানাতে দলগুলোকে সময় বেঁধে দেয় ইসি।আওয়ামী লীগের আগে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে তাদের প্রার্থীদের প্রত্যয়নের ক্ষমতাবান ব্যক্তির নাম জমা দিয়ে আসেন। এই দায়িত্ব খালেদা জিয়া দিয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহানকে। পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ঠিক করতে গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও সংসদীয় বোর্ডের যৌথসভা হয়। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি, শহর বা পৌর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা স্থানীয় সাংসদদের পরামর্শ নিয়ে একজন মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন।তা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সভানেত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। তা থেকে স্থানীয় সরকার/ পৌর মেয়র মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত কবে।
আওয়ামী লীগের পর তাদের জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি তার দলীয় মেয়র প্রার্থী প্রত্যয়নের ক্ষমতাবান ব্যক্তির নাম জমা দেন ইসির উপ সচিব শামসুল আলমের কাছে। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী প্রত্যয়ন করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।ওয়ার্কার্স পার্টির মতো জাসদেরও প্রার্থী প্রত্যয়নের ক্ষমতা দলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে দিয়ে ইসিতে দলীয় সভাপতি হাসানুল হক ইনুর চিঠি এসেছে। এদিকে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী প্রত্যয়নের ক্ষমতা দলীয় চেয়ারপারসন এইচ এম এরশাদ নিজের হাতেই রেখেছেন। এই সংক্রান্ত চিঠি শনিবারই ইসিতে দিয়ে আসেন দলের যুগ্ম মহাসচিব নুরুল ইসলাম। বাংলাদেশের ২৩৬ পৌরসভায় ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নিতে ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন।
নতুন বিধি অনুযায়ী, মেয়র পদে দল মনোনীত প্রার্থীদের প্রত্যয়ন করতে পারবে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সম পর্যায়ের পদাধিকারী বা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাতে হবে ।নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপদাধিকারীর প্রত্যয়ন নিয়ে ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা নেই।কিন্তু এর বাইরে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যয়নের ক্ষমতা কাউকে দেওয়া হলে তার নাম, নমুনা স্বাক্ষর ও পদবী ২৮ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ও ইসিতে পাঠাতে হবে।