high-court_2_1_126075

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ নভেম্বর ২০১৫: পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্সের শুনানি গ্রহণকারী বিচারকদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো.শওকত হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ স্বপ্রনোদিত হয়ে এ আদেশ দেয়। আদেশের অনুলিপি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব,আইন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে আদালত সূত্র জানায়।

আদেশের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজল বলেন, আসামির সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় মামলা হওয়ায় এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বিচারকদের নিরাপত্তা বাড়ানোর এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।তিনি সাংবাদিকদের জানান, হাইকোর্টের এ বিশেষ বেঞ্চে পিলখানা হত্যা মামলার আজ ১৩৯তম দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ ডেথ রেফারেন্সের সমর্থনে যুক্তি পেশ করছে। বহুল আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের এ বিশেষ বেঞ্চে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন গত ৮ নভেম্বর শুরু হয়।আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারওয়ার কাজল। তাদের সঙ্গে আছেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গাজী মো. মামুনুর রশীদ ও মো. আসাদুজ্জামান।আসামিপক্ষে রয়েছেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আমিনুল ইসলাম ও শামীম সরদারসহ।

রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংগঠিত হত্যাকান্ডে আনা মামলায় দায়ের করা সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে বলে আদালত সূত্র জানায়। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। রাজধানীর পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো.আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ইতিহাসের কলঙ্কজনক এবং সর্ববৃহৎ এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে (তিন বছর থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত) কারাদন্ড এবং ২৭৮ জনকে খালাস এবং আর ৪ জন আসামি বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় মামলার দায় থেকে তারা অব্যাহতি পায়। রায়ে খালাসপ্রাপ্ত ৬৯ জন আসামির সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে, দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা তাদের সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিল শুনানির জন্য সুপ্রিমকোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বমোট ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এজন্য মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত দুই কপি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। ডেপুটি এটর্নি জেনারেল কে এম জাহিদ সারোয়ার সাংবাদিকদের জানান, মোট একশ ২৪ কার্যদিবসে মামলায় পেপারবুক উপস্তুাপন করা হয়।

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। মামলায় সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামি দাড়ায় ৮৫০ জনে। এছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি।

পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। বিচার চলার সময়ে বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়। মামলায় আসামীদের মধ্যে বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা তোরাব আলীরও দন্ড হয়েছে। সাজা ভোগকালীন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী এ বাহিনীর নাম পুনর্গঠন করা হয়। নাম বদলের পর এ বাহিনী এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিসেবে পরিচিত।২০০৯ সালে তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।

ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় জজ আদালত।রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল ও জেল আপিল করে আসামিপক্ষ। এছাড়া ৬৯ জনকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে।জাহিদ সারওয়ার জানান, রাষ্ট্রপক্ষ এ পর্যন্ত ১৩২ জনের ডেথ রেফারেন্সের সমর্থনে যুক্তি উপস্থাপন করেছে। এই যুক্তি উপস্থাপন বৃহস্পতিবার শেষ হতে পারে।