দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ নভেম্বর ২০১৫: হোসেনী দালানে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিতে বোমা হামলার মামলায় ৫ জেএমবি সদস্যের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। জেএমবি সদস্যরা হলেন- চান মিয়া (৩২), ওমর ফারুক ওরফে মানিক (২৮), হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ (২৯),শাহজালাল (৩৮) এবং কবির হোসেন ওরফে রাশেদ।বৃহস্পতিবার রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউনুস খান এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।এদিন আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান আনসারী।গত ২৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে পুরান ঢাকার হোসেনী দালানে যান নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। রাত পৌনে ২টার দিকে সেখানে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় দুজন নিহত হন ও শতাধিকেরও বেশি মানুষ কম- বেশি আহত হন।
এদিকে, ঢাকার দারুস সালামে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন এক জেএমবি জঙ্গি নিহত হওয়ার পর আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যারা হোসাইনী দালানে বোমা, আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যা, সাভারে ব্যাংক ডাকাতি ও ত্রিশালে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় অংশ নিয়েছে অথবা সহযোগিতা করেছে বলে পুলিশের দাবি।পুলিশ বলছে, বুধরাত রাতে ঢাকার দারুস সালাম এলাকায় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত আল বাণী ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ভাই ছিলেন জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান।ওই ঘটনার পর রাত ৩টা থেকে থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত মীরপুর, আবদুল্লাহপুর, গুলিস্থান ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাকি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান।এরা হলেন- চান মিয়া, মো. ওমর ফারুক ওরফে মানিক, মো. শাহজালাল, হাফেজ আহসানুল্লাহ মাহমুদ ও মো. কবির হোসেন রাশেদ ওরফে আশিক।বৃহস্পতিবার মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ভাই এবং রাশেদ ওরফে আশিক আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা হোসাইনী দালানে বোমা হামলায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন।বাকিরা বাড়ি ভাড়া করে দেওয়া এবং অর্থ জোগানোসহ বিভিন্নভাবে এই জেএমবি সদস্যদের সহযোগিতা দিয়েছিলেন বলে পুলিশের অভিযোগ।
গত ২৩ অক্টোবর প্রথম প্রহরে পুরান ঢাকার হোসাইনী দালানে আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে ওই বোমা হামলায় ১১৫ জন আহত হন। ওই রাতেই ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাজ্জাদ হোসেন নামের এক কিশোর এবং পাঁচ দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জামাল উদ্দিন নামে ৫৫ বছর বয়সী আরেকজনের মৃত্যু হয়।ঘটনার দুই দিন পর অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করে পুলিশ।এরপর দুই সপ্তাহ না যেতেই ৪ নভেম্বর সকালে সাভারের আশুলিয়ায় বাড়ইপাড়া তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে মুকুল হোসেন নামের এক কনস্টেবলকে হত্যা এবং আরও একজনকে জখম করে মোটর সাইকেলে পালিয়ে যায় তিনজন।মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ভাই ওই ঘটনারও প্রধান আসামি ছিলেন বলে পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।বুধবার মধ্যরাতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে দ্বীপনগর বালুর মাঠে আনুমানিক ৩৮ বছর বয়সী একজন নিহত হওয়ার খবর দেয় দারুস সালাম থানা পুলিশ।
রাতে তার পরিচয় পুলিশ জানাতে না পারলেও সকালে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তিনি মাহফুজ ওরফে শাহাদাত ওরফে আল বানী ওরফে আবদুল্লাহ বাকী ওরফে রেজাউল ওরফে হোজ্জা ভাই ওরফে মেম্বার।গত ২১ এপ্রিল দুপুরে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া বাজার শাখায় ঢুকে বোমা মেরে, গুলি চালিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, নিরাপত্তারক্ষীসহ সাতজনকে হত্যা করে ক্যাশ থেকে টাকা লুটের যে ঘটনা ঘটেছিল, সেখানেও মাহফুজ জড়িত ছিলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান যুগ্ম কমিশনার মনিরুল।তিনি জানান, গ্রেপ্তারদের মধ্যে চান মিয়া জেএমবি জঙ্গিদের গাড়ি চালনার প্রশিক্ষণ দিতেন। গতবছর ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে বোমা হামলা ও গুলি চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জেএমবির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার যে ঘটনা ঘটেছিল তাতে চান মিয়াও অংশ নিয়েছিলেন। গ্রেপ্তার বাকিরা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া করে দিয়ে এবং অর্থের যোগান দিয়ে এই জেএমবি জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড চালাতে সহযোগিতা দিয়ে আসছিল বলে পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।