দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ নভেম্বর ২০১৫: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।ঢাকার বকশীবাজার এলাকার উমেশ দত্ত রোডে আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। দেশে ফিরলেও পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় আদালতে অনুপস্থিতির জন্য মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে আবেদন জানান তার আইনজীবী এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি জানান, সুস্থতা সাপেক্ষে আগামী ধার্য তারিখে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হতে পারেন।এর আগে মামলায় কয়েকটি ধার্য তারিখে বিদেশে অবস্থান করার কারণে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হননি।
বৃহস্পতিবার আদালত খালেদার অনুপস্থিতির আবেদন মঞ্জুর করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষীর জেরা ও নতুন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আদেশ দেয়া হয়। উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল থাকায় আসামিপক্ষের আবেদনে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার জেরা ও সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি রেখেছেন আদালত। আদালত খালেদার অনুপস্থিতির আবেদন মঞ্জুর করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষীদের জেরার আদেশ দেন।অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বিধিসম্মত বলে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল বিচারাধীন থাকার কথা উল্লেখ করে এ মামলার জেরা-সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাতে সময়ের আবেদন করেন একই আইনজীবী। এ আবেদনটি মঞ্জুর করে তা মুলতবি রেখেছেন আদালত।
মামলাটির ২০ ও ২১তম সাক্ষী (জব্দ তালিকার সাক্ষী) মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ডিএমডি মাইনুল ইমরান চৌধুরী ও মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের সাবেক ডিজিএম (ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস) জাকারিয়া খানকে আসামিপক্ষে জেরা করেন অ্যাডভোকেট টিএম আকবর, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজ্জাক খান।আগামী ধার্য তারিখে আগে সাক্ষ্য দেওয়া ২২ থেকে ২৫তম সাক্ষী সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এসইভিপি জিয়াউদ্দিন এম ঘুর্নি, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার কামরুজ্জামান এবং দুদকের দুই কনস্টেবল মঞ্জুরুল হক ও সিরাজুল হককে আসামিপক্ষের জেরা ও নতুন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল।জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ২৫ জন সাক্ষী।
বাকি ১৯ জন হচ্ছেন মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ, মামলার রেকর্ডিং অফিসার মাহফুজুল হক ভূঁইয়া এবং জব্দ তালিকার ১৬ সাক্ষী সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ইনসান উদ্দিন আহমেদ, ক্যাশ অফিসার শাহজাহান খান, পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার এইচ এম ইসমাইল, জনতা ব্যাংকের সাত মসজিদ শাখার জিএম শেখ মকবুল ও ফাহমিদা রহমান, সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম ড. মো. হাফিজুর রহমান, এজিএম মো. আমিরউদ্দিন ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার পরিতোষ চন্দ্র দে, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার নওশাদ মোহাম্মদ, রিলেশনশিপ ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম ও কাস্টমার সার্ভিসেস ম্যানেজার অলোক কান্তি চক্রবর্তী, সোনালী ব্যাংক ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট শাখার ক্যাশ অফিসার ওয়ালিদ আহমেদ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মো. মামুনুজ্জামান, মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের সাবেক সিনিয়র অফিসার সাইফুল আলম, মেট্রো মেকার্স কর্মকর্তা চৌধুরী এম এন আলম, সোনালী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার মেজবাউল হক এবং মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের এমডি এএফএম জাহাঙ্গীর হোসেন। তাদেরকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়েছে।
অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ। তাকে আসামিপক্ষের জেরা বাকি রয়েছে।মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের সাত সাক্ষীর অন্য ছয়জন হচ্ছেন- সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার হারুনুর রশিদ, অফিসার (ক্যাশ) শফিউদ্দিন মিয়া, আবুল খায়ের, প্রাইম ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দা নাজমা পারভীন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আফজাল হোসেন।লিভ টু আপিল নিষ্পত্তির পর এ সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী।জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।জামিনে থাকা জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন। খালেদা ছাড়া অন্য পাঁচজন হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক, বাকিরা জামিনে আছেন।
তাদের মধ্যে তারেক রহমানের পক্ষে হাজিরা দেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া এবং কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে হাজির ছিলেন।২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।অন্যদিকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়।
কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।গত বছরের ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।
গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।