khaleda_266119

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ নভেম্বর ২০১৫: নাইকো দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করার অনুমতি চেয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আবেদনের শুনানি চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত মুলতবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত।মামলাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার করা রিট আবেদন ও এ-সংক্রান্ত রুল গত ১৮ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে হাইকোর্ট ওই আদেশে বলেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

তবে জামিন অপব্যবহার না করার শর্তে বিচারিক আদালত তাঁর জামিন বিবেচনা করবেন।হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। বুধবার চেম্বার আদালতে ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, শুনানির সময় আমি বলেছি, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করে তারপর আপিল করতে হবে। কারণ হাইকোর্ট তাঁকে জামিন দেননি। তাই আত্মসমর্পণের আগে তিনি আপিল করতে পারেন না। আদালত এ বিষয়ে দুই পক্ষকে আইনকানুন দেখে আসতে বলে শুনানি এ সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন।

২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে এই মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।পরে নাইকো মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ও নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করার পাশাপাশি রুল দেন হাইকোর্ট।

ওই সময় থেকে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত ছিল।প্রায় সাত বছর পর চলতি বছরের শুরুতে মামলাটির কার্যক্রম আবার চালু করার উদ্যোগ নেয় দুদক। গত ১৯ এপ্রিল শুনানি শুরু হয় এবং ২৮ মে শেষ হয়। ১৮ জুন রুল খারিজ করে রায় দেন হাইকোর্ট। এদিকে, দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস লন্ডন সফর শেষে দেশে ফিরলেও বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) দুই দুর্নীতি মামলার শুনানিতে আদালতে যাচ্ছেন না মামলা দু’টির প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।

খালেদার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বুধবার (২৫ নভেম্বর) জানান, দীর্ঘদিন বিদেশ সফর শেষে বিশ্রামে রয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি পুরোপুরি সুস্থও হননি। এ কারণে বৃহস্পতিবার আদালতে যাচ্ছেন না। আগামী ধার্য তারিখে হাজিরা দেবেন। বৃহস্পতিবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার পাঁচজন সাক্ষীকে আসামিপক্ষের জেরা এবং পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল থাকায় আসামিপক্ষের আবেদনে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার জেরা ও সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি রেখেছেন আদালত।

ব্যক্তিগত সফরে গত ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডন যান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। টানা ২ মাস ১০ দিন লন্ডনে অবস্থানকালে দুই চোখ ও পায়ের চিকিৎসা করান তিনি। শনিবার (২১ নভেম্বর) রাতে দেশে ফেরেন তিনি। এ সময়কালে আসামিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে খালেদার অনুপস্থিতিতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা হয়েছে আদালতে।জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ২৫ জন সাক্ষী, যাদের মধ্যে ৫ জনকে আসামিপক্ষের জেরা বাকি রয়েছে।

অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ। তাকে আসামিপক্ষের জেরা বাকি রয়েছে।২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।অন্যদিকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।খালেদা জিয়া ছাড়াও তার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামি রয়েছেন এ দুই মামলায়।