দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ নভেম্বর ২০১৫: জাপানের ঋণদানকারী সংস্থা জাইকার অর্থায়নে দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতি সেতু প্রকল্পের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।বুধবার দুপুরে হোটেল রেডিসনে জাপানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওএসজেআই, জেএফই ও আইএইচআই এবং বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের মধ্যে এ চুক্তি সাক্ষরিত হয়। বুধবার সকালে চার জাপানি কোম্পানির সঙ্গে মহাসড়কের দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর হয়।চুক্তি সম্পাদন অনুষ্ঠানে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি ছিলেন ।মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই জাপান সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে প্রধান প্রধান অবকাঠামোগুলোয় জাপান সরকার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে আসছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চার লেন নির্মাণের সুফল চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে দেশের অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।ওবায়দুল কাদের বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৯২ কিলোমিটার সড়কের ১৫৮ কিলোমিটার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কনক্রিট বেইসমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে ১৬৮ কিলোমিটার।আশা করছি, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই এই মহাসড়কের সুফল দেশের জনগণ, যাত্রী এবং আমাদের দেশের অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করবে। এর মাধ্যমে আমাদের কানেক্টিভিটি অনেকদূর এগিয়ে যাবে।তবে প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে এসে পাথর সংকটের কথাও জানান মন্ত্রী।
ইদানিং আমরা পাথর সংকট তীব্রভাবে অনুভব করছি। এটি আমাদের কিছুটা সমস্যায় ফেলেছে। আশা করি, শীঘ্রই সংকটের সমাধান হয়ে যাবে।মহাসড়কের শীতলক্ষ্যা, মেঘনা ও গোমতি নদীর উপর নতুন তিনটি সেতু নির্মাণ ও বিদ্যমান সেতুর সংস্কার করতে জাপানি চার ঠিকাদারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরে রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।জাপানের ওবায়শি করপোরেশন, শিমিজু করপোরেশন, জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন এবং আইএইচআই ইনফ্রাস্টাকচার সিস্টেম- এই চার প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ কাজ করবে।চুক্তি স্বাক্ষরের পর এ ঘটনাকে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার জন্য ঐতিহাসিক মাইলফলক’ হিসেবে উল্লেখ করেন সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি আমাদের দেশের অর্থনীতিতে রক্ত সঞ্চালন করে। এই মহাসড়কে এ তিনটি সেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।বিদ্যমান সেতু তিনটির পাশে নতুন তিনটি সেতু নির্মাণ, বিদ্যমান সেতুগুলো পুর্নবাসনের কাজও আমরা করব। এর পাশাপাশি কাঁচপুর ইন্টার সেকশনে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ হবে।এ প্রকল্প বাস্তবায়নের খরচ হিসেবে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যার মধ্যে জাপান সরকার সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুসারে, এ প্রকল্পে ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০১৯ সালের অক্টোবরে।ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিদ্যমান কাঁচপুর সেতু, মেঘনা সেতু এবং গোমতী সেতু নির্মাণ করা হয় ১৯৭৮, ১৯৯১ এবং ১৯৯৫ সালে। এর মধ্যে কাঁচপুর সেতু চার লেনের, বাকি দুটি দুই লেনের।নতুন তিন সেতু নির্মাণ করতে ১৪ অক্টোবর জাপানের চার ঠিকাদারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’ অনুমোদন দেয়।এই প্রকল্পের নকশা ও তত্ত্বাবধানে আরও চার জাপানি ও এক অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানির সঙ্গে তিন বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান পরামর্শক হিসেবে কাজ করবে।
তিন সেতু নির্মাণ প্রকল্প শেষ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানান সড়ক পরিবহন মন্ত্রী।চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত মিৎসু ওয়ানাবে, সড়ক সচিব এমএএন সিদ্দিক, সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ফিরোজ ইকবাল, জাইকা প্রতিনিধি মিকি হাতিকাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।