দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ নভেম্বর ২০১৫: ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার চাকরিচ্যুত শিক্ষক পরিমল জয়ধরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।বুধবার দুপুরে ধর্ষণ মামলার এ রায় দেন ঢাকার ৪ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সালেহ উদ্দিন আহমেদ।যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয়মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে পরিমল জয়ধরকে। রাষ্ট্রপক্ষে ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি ফোরকান মিয়া এবং পরিমলের পক্ষে অ্যাডভোকেট মাহফুজ মিয়া মামলা পরিচালনা করেন।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা দিবা শাখার দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ২০১১ সালের ৫ জুলাই রাজধানীর বাড্ডা থানায় মামলা করেন ওই ছাত্রীর বাবা।মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে ২০১১ সালের ২৮ মে ধর্ষণ করেন পরিমল। এ সময় ওই ছাত্রীর নগ্নদৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করা হয়। পরে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে ১৭ জুনও ধর্ষণ করা হয়।মামলার পর ২০১১ সালের ৬ জুলাই কেরাণীগঞ্জে পরিমলের স্ত্রীর বড় বোনের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর অধিকতর তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাহবুবে খোদা ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার প্রধান লুৎফর রহমান ও অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমকে অব্যাহতির সুপারিশ করে শুধু পরিমল জয়ধরকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন।২০১৩ সালের ৭ মার্চ পরিমলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।২০১৩ সালের ২২ আগস্ট রুদ্ধদ্বার কক্ষে (ক্যামেরা ট্রায়াল) ধর্ষিতা ছাত্রীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। এর আগে ধর্ষিতার মাও এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। তারাসহ রাষ্ট্রপক্ষের ২৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
গত ১০ নভেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বুধবার রায়ের দিন ধার্য করা হয়।রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি ফোরকান মিয়া জানান, জরিমানা টাকা ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীকে দিতে বলেছে আদালত।৩০ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শোনানোর সময় বিচারক বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন ও মাহবুবে খোদা এ মামলায় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ‘চরম গাফিলতি দেখিয়েছেন।রায়ের পর আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পরিমল বলেন, আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। মহামান্য বিচারক যে রায় দিয়েছেন সে ব্যাপারে আমি আর কী বলতে পারি? আমি নির্দোষ। আর কিছু বলতে আমার হাত-পা বাঁধা।তার আইনজীবী মাহফুজ মিয়া জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
রাজধানীর খ্যাতনামা ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা ক্যাম্পাসের শিক্ষক পরিমলই ছিলেন এ মামলার একমাত্র আসামি। আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছিলেন তিনি। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার লাটেংগা গ্রামের পরিমল ২০১০ সালে ভিকারুননিসার বসুন্ধরা শাখায় বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।২০১১ সালে করা মামলায় ভিকারুননিসার তৎকালীন অধ্যক্ষ হোসনে আরা এবং বসুন্ধরা শাখার প্রধান লুৎফর রহমানকে আসামি করেছিলেন ধর্ষিত ছাত্রীরা বাবা। ২০১৩ সালের ৭ মার্চ আদালতে অভিযোগ গঠনের সময় অধ্যক্ষ ও লুৎফরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে ২০১১ সালের ২৮ মে প্রথম ধর্ষণ করেন পরিমল। ওই সময় ছাত্রীর নগ্ন ভিডিও চিত্র মোবাইলে ধারণ করা হয়। এরপর ওই ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ১৭ জুন আবারও ধর্ষণ করা হয়।বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর ভিকারুননিসার ছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখন পরিমলকে বরখাস্ত করে।এরপর ৫ জুলাই ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এই মামলা দায়ের করেন।এর একদিন বাদে পরিমলকে ঢাকার কেরানীগঞ্জে তার স্ত্রীর বড় বোনের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি।