pakistan-shuja-alam_12226

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ নভেম্বর ২০১৫: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি দেওয়ার ঘটনায় দেশটির হাইকমিশনারকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তলবে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সোমবার দুপুরে হাজির হন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলম। তিনি ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে হাইকমিশনারকে বলা হয়, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিচার নিয়ে মন্তব্য করা নাক গলানোর শামিল। এটা দুঃখজনক। মিজানুর রহমান পরে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি।

এদিকে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের এড়াতে পশ্চিম গেট দিয়ে বেরিয়ে গেছেন পাক হাইকমিশনার সুজা আলম। সোমবার দুপুর ৩টা ০৩ মিনিটে তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ৩টা ১০ মিনিটের দিকে পররাষ্ট্র সচিব (দ্বিপাক্ষিক) মো. মিজানুর রহমানকেও বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলবের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আমরা অত্যন্ত হতাশ। আগের বারও ভেবেছি, বিচারের রায় নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবে না। এবারও ভেবেছিলাম, তারা কোনো মন্তব্য করবে না। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, একমাত্র তারাই বিচারের রায় নিয়ে মন্তব্য করল। অন্য কোনো দেশ এ নিয়ে মন্তব্য করেনি।সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর রোববার এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে পাকিস্তান সরকার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ওই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের নেতা আলী আহসান মুজাহিদের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা লক্ষ করেছি। ঘটনায় আমরা গভীরভাবে অসন্তুষ্ট।এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ১৯৭১-এর ঘটনাবলি (মহান মুক্তিযুদ্ধ) নিয়ে ত্র“টিপূর্ণ বিচার প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে প্রতিক্রিয়া আমরা লক্ষ করছি, তা আগের মতো আবার গুরুত্ব দিচ্ছি।পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেন, ১৯৭১ সালে কেউ পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া বন্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময়। এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন বলে জানায় পাকিস্তানের জিয়ো টেলিভিশন।

মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তান জামায়াত-ই-ইসলামির সিরাজুল হক বলেন, পাকিস্তানের আদর্শের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার কারণেই মুজাহিদকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছেমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর আমরা গভীর উদ্বেগ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করলাম।একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের এই বিচারকে প্রহসন আখ্যায়িত করে এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার কথা বলা হয় ওই বিবৃতিতে।

পাশাপাশি ১৯৭৪ সালের ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ চুক্তির আলোকে দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে ঢাকার প্রতি আহ্বান জানায় ইসলামাবাদ।বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এ ধরনের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে রোববারই পাকিস্তানের হাই কমিশনারকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর সুজা আলম সোমবার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরও উদ্বেগ জানিয়েছিল পাকিস্তান।পাকিস্তানের প্রতি অনুগত এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সমর্থন করায় কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে দাবি করে সে সময় দেশটির পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবও গৃহীত হয়।

তা নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন মহলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে ওই প্রস্তাব গ্রহণের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার।২৫ বছরের শোষণ-বঞ্চনার পর বাঙালিদের স্বাধিকারের দাবিকে দমন করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নির্বিচার হত্যাকাণ্ড শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।তখন প্রতিরোধ যুদ্ধে নামে বাঙালিরা। নয় মাসের রক্তাক্ত সংগ্রামের পর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেএকাত্তরে বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি বাহিনী এদেশেরই কিছু দোসর পেয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে তাতে সমর্থন দেয়; গঠন করে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী।মুসলিম লীগ নেতা পাকিস্তান গণপরিষদের সাবেক স্পিকার ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের একাত্তরে চট্টগ্রামের ত্রাস হিসেবে কুখ্যাত ছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দালাল আইনে গ্রেপ্তার হয়ে বন্দি অবস্থায় মারা যান ফজলুল কাদের। তার ছেলে সালাউদ্দিন বাংলাদেশের মন্ত্রীও হয়েছিলেন। একাত্তরে আল বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন মুজাহিদ। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন তারই নেতৃত্বে হয়েছিল বলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে উঠে এসেছে। তিনি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন, মন্ত্রীও হয়েছিলেন তিনি।স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত এই অঞ্চলে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী নামে একটি শাখা কাজ করত। স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে সক্রিয় হয় দলটি। যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের মধ্যে অধিকাংশই জামায়াত নেতা এবং তাদের রায়ের পর পাকিস্তান জামায়াত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আসছে।