bodiuzzaman

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ নভেম্বর ২০১৫: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি) বন্ধ করা ঠিক হবে না বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান। ১৬ কোটি মানুষের দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে মাত্র এক হাজার ৭৩ জন কাজ করছেন। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর দুর্নীতি নামমাত্র লোকবল দিয়ে কীভাবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করবো? এমন প্রশ্ন খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামানের।রোববার সকালে দুদকের একাদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।সংসদে টিআইবি নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. বদিউজ্জামান বলেন, টিআইবি নিয়ে সংসদ কি বলেছে সে বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। সংসদীয় কমিটির সুপারিশ প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, টিআইবির কিছু কিছু কার্যক্রম আপত্তিকর। তবে তারা যেহেতু সারা পৃথিবীতে যেহেতু নানা ধরনের কার্যক্রম চালায়, সে জন্য টিআইবি বন্ধ করা মনে হয় ঠিক হবে না।

এরপর দুপুরে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত শপথ গ্রহণ ও আলোচনা সভায়’সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের কাজে সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাও রয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। মাত্র তিন শতাধিক তদন্ত কর্মকর্তা দিয়ে দেশব্যাপী দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয় উল্লেখ করে প্রশ্ন তোলেন, এত কমসংখ্যক কর্মকর্তা দিয়ে দুর্নীত প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব? দেশের মানুষ দিন শেষে দুদকের কাজের সফলতা জানতে চায় মন্তব্য করে মো. বদিউজ্জামান বলেন, অভিযোগের অনুসন্ধান, মামলার তদন্ত ও প্রসিকিউশনসহ সব ক্ষেত্রে নিখুঁতভাবে কার্যক্রম চালিয়ে সাজার হার বৃদ্ধি প্রয়াস নিতে হবে। মো. বদিউজ্জামান বলেন, আমাদের কাজে সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাও রয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ১৬ কোটি মানুষের দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে এক হাজার ৭৩ জন কাজ করছেন। এর মধ্যে মাত্র ৩০০ জন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের কাজে জড়িত। এত স্বল্পসংখ্যক লোক দিয়ে বৃহৎ এ জনগোষ্ঠীর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, দুর্নীতি দমন ও নিয়ন্ত্রণই হচ্ছে সুশাসনের প্রধান শর্ত। তাই সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র সমস্যা। সমাজের ৫ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকি ৯৫ শতাংশ মানুষ সচেতন হলেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে তার চেয়ে বড় কথা হলো সরকারের সদিচ্ছা। তিনি মনে করেন, সরকারের সদিচ্ছা দুদকের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে।বিশেষ অতিথি দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয় দুর্নীতি লাঘবের জন্য। দাতাগোষ্ঠীদের চাপে ওই সময়ে (২০০৪ সালে) কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু কমিশন গঠন করা হলেও তাকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়।

তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনীতি অঙ্গনে পরিবর্তন আসে। ওই সময় বিরাজনীতিকরণে দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবহার করা হয়। এক এগারোর সময় এতই আইনগত ত্রুটি ছিল যে সেগুলোর বোঝা এখনো আমাদের টানতে হচ্ছে। আমরা ওই জঞ্জালগুলো দূর করে প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মো. সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযোগ অনুসন্ধান বা তদন্তের ক্ষেত্রে ব্যক্তির পরিচয়কে গুরুত্ব না দিয়ে অভিযোগের বস্তুনিষ্ঠতা, অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাকে বিবেচনা করে। দলীয় পরিচয় বা আমলা বা অন্য কোনো পরিচয় কমিশনের নিকট ন্যূনতম গুরুত্ব বহন করে না।

আরেক বিশেষ অতিথি দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, এ বছর আমরা ভারতের সিবিআইসহ ১৪২টি দেশের অংশগ্রহণে একটি সভা করেছি। পাচারকৃত অর্থ কীভাবে উদ্ধার করা যায় ও অর্থপাচার কীভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে। অর্থপাচার বিষয়ে তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আমরা আশ্বাস পেয়েছি।অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল, মহাপরিচালক মো. শামসুল আরেফিন, ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া, জিয়া উদ্দিন আহমেদ ও মো. মঈদুল ইসলাম, পরিচালক নিরু শামসুন নাহার প্রমুখ।প্রসঙ্গত, ২১ নভেম্বর দুদকের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। তবে সেদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় রোববার এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।