সাকা চৌধুরীর প্রাণভিক্ষা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ নভেম্বর ২০১৫: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে তাঁর স্ত্রী ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্যে ভিন্নতা পাওয়া গেছে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রাণভিক্ষা চাইবেন না। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকেও প্রাণভিক্ষা চাওয়া হবে না। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ইচ্ছানুযায়ী, এ বিচার নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলের পর্যবেক্ষণ রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁর পরিবার তুলে ধরবেন। এ ব্যাপারে বিকেলেই রাষ্ট্রপতির কাছে একটি আবেদন (পিটিশন) দেওয়া হয়। শনিবার দুপুরে গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।তবে, গয়েশ্বরের ওই বক্তব্যের পরই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেছেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর আইনজীবীদের দেখা করতে না দেওয়া পর্যন্ত বলতে পারছেন না, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না। প্রাণভিক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। আইনজীবীদের দেখা করার পরই বিষয়টি জানা যাবে।তিনি অভিযোগ করেন, সকালে আইনজীবীরা কারাগারে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে বঙ্গভবনের দিকে যান যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) স্ত্রী ও ছেলেরা।আগে থেকে কোনো ধরনের আবেদন জমা না দিয়ে বা অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পেয়েই সেখানে যান তারা।শনিবার (২১ নভেম্বর) বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে ধানমণ্ডি ১০/এ এর ২৮ নম্বর বাসা কিউসি থেকে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা দেন সাকার পরিবারের সদস্যরা।সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী, বড় ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, ছোট ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী ও তাদের স্ত্রীসহ কয়েকজন স্বজন রয়েছেন তাদের বহনকারী তিনটি গাড়িতে।সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বাবু বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।‘কিউসি’তে অবস্থানরত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ও তার ছেলেরা বঙ্গভবনে যান।

এর আগে শনিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এরপর তাদের আবেদন বঙ্গভবনে পাঠানো হবে।এ সময় তাঁর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, তাঁদের আইনজীবীদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। দুজন ম্যাজিস্ট্রেটকে কারাগারের ভেতরে পাঠানো হয়েছে। এ দুজন ম্যাজিস্ট্রেট তাঁদের সঠিক তথ্য দেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেছেন, বাবা প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করেছেন এটা বিশ্বাস হয় না।শনিবার বিকালে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যান হুম্মাম। তখন সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। হুম্মাম কাদের বলেন, বাবা প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন তা উনার সঙ্গে দেখা না করার আগে বিশ্বাস করছি না।

আবেদন পত্রে কী লেখা আছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হুম্মাম কাদের বলেন, তিনি (রাষ্ট্রপতি) যেন এটিকে মিস ট্রায়াল হিসেবে ঘোষণা দেন। যেন তার অ্যালিবি (অরনর) সাক্ষীর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে কোর্টে যাতে তাদের সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। প্রামাণিক দলিল গ্রহণ করা হয় এবং স্বচ্ছভাবে সত্যতা যাচাই করা হয়।আবেদন পত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনো আবেদন সরাসরি রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেন না। তিনি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদনটি পাঠাতে বলেছেন। সম্ভবত আইনমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠাতে হবে।সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ফাঁসিকাষ্ঠ এড়াতে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করেছেন বলে আইনমন্ত্রী জানালেও তার সত্যতা নিয়ে সন্দিহান এই দুই যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের সদস্যরা। বিএনপি নেতা ও জামায়াত নেতার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তারা নিজেরা কিংবা তাদের আইনজীবীরা বললে তারা বিষয়টি বিশ্বাস করবেন।ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তোড়জোরের মধ্যে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তবে তখন প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তারা।

এরপর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বেলা আড়াইটার দিকে জানান, দুজনই রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছেন।আইনি লড়াই নিষ্পত্তির পর এখন দুই যুদ্ধাপরাধী শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। তা স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে যাবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। নামঞ্জুর হলে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।আইনমন্ত্রী জানানোর পর কিছুক্ষণ পরই গুরুত্বপূর্ণ পত্রাদি লেখা একটি রেজিস্ট্রার খাতা নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে দিয়ে আসেন ডেপুটি জেলার সর্বোত্তম দেওয়ান।আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ক্ষমার বিষয়ে জানতে চাইলে মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর বলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ না দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বা সরকার থেকে বলা হচ্ছে, উনি মার্সি পিটিশন করেছেন। এটা আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না।জামায়াতে ইসলামীর এক বিবৃতিতেও বলা হয়েছে,বিভিন্ন গণমাধ্যমে কারা অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে যে, ‘জনাব আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ মাহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেছেন। প্রচারিত এ খবরটি সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।

আইনজীবীদের সঙ্গে কারাগারে মুজাহিদের সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়ার দাবি আবার জানিয়ে মাবরুর বলেন, উনি যদি ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন, তবে আইনজীবীদের সাথে সাক্ষাত করার সুযোগ দিয়ে আইনজীবীদের মাধ্যমেই যেন তিনি জানাতে পারেন, সেই সুযোগ দেওয়া হোক।উনি যে পর্যায়ে আছেন, উনার ইচ্ছার একটা দাম আছে। এই পর্যায়ে ইচ্ছা অন্য স্বাভাবিক মানুষের মতো না। এই পর্যায়ে এসে উনি বার বার আইনজীবীদের সাথে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, বলেন মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে কারাগারে থাকা জামায়াত নেতার ছেলে।আইনমন্ত্রী জানানোর আগে দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মুজাহিদের পরিবার, মাবরুর সেখানেও ছিলেন। এদিকে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবারের সদস্যরা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর রাষ্ট্রপতির কাছে একটি আবেদন নিয়ে বঙ্গভবনে যায়। তাতে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার প্রতিবিধান চাওয়া হয়।সেখানে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সালাউদ্দিন কাদেরের ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বাবা ক্ষমা চেয়ে মার্সি পিটিশন চাইবেন? এটা আমি তার সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলতে পারব না।আইনমন্ত্রী তা জানিয়েছেন- বলা হলে তিনি হুম্মাম বলেন, আনিসুল হক ভাল করেই জানেন, বাবা কী বলতে পারেন। আমার বাবা কী ধরনের লোক, তা সবাই জানে।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আরেক ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী বিকালে কারাফটকে সাংবাদিকদের একই কথা জানান। দুই যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের সদস্যরা আইনজীবীদের কারাগারে দেখা করার সুযোগ চাইলেও তার সুযোগ এখন আর নেই বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।