দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ নভেম্বর ২০১৫: তৃণমূল বিএনপি নামের নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির সাবেক নেতা ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে তৃণমূল বিএনপি গঠন করা হয়েছে।শুক্রবার সকালে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্র, আদর্শ ও কাঠামো নিয়ে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত তথ্য জানান তৃণমূল বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল হুদা। এর আগে নাজমুল হুদা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স নামে একটি জোট গঠন করেছিলেন।নাজমুল হুদা জানান, ত্রিশ দলের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স বা বাংলাদেশ জাতীয় জোটের চালিকাশক্তি হিসেবে তৃণমূল বিএনপি নেতৃত্ব দেবে। ভবিষ্যৎ জাতীয় নির্বাচনে প্রতীক হিসেবে তিনি ধানের শীষ, ধানের ছড়া কিংবা পাট গাছ প্রতীক হিসেবে চাইবেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান।
বিএনপির এই সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নাজমুল হুদা বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিতে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবে দল হিসেবে বিএনপি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সে জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে তৃণমূল বিএনপি গঠন করা হয়েছে।
নাজমুল হুদা বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করায় বিএনপি এখন সরকারে কিংবা সংসদে নেই। আর হরতাল অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচিতে ব্যর্থ হয়ে অনেকটা পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই দলটি এখন নিষ্ক্রিয় ও নিশ্চিহ্ন প্রায়। তার ওপর বিএনপিকে অস্তিত্বহীন করতে একদলীয় শাসনে বিশ্বাসী শাসক দলের আগ্রাসী ভূমিকা তো রয়েছেই। মামলা, হামলা কোনোটি থেকে দলের নেতা কর্মীরা রেহাই পাচ্ছে না। দলের নেতৃত্বে অ-রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাব, সিদ্ধান্তহীনতা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচিত কমিটি গঠনে ব্যর্থ ইত্যাদি কারণে দলটি আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে।মাঠ পর্যায়ে দলটির এখন ত্রাহি অবস্থা উল্লেখ নাজমুল হুদা বলেন, দল পরিচালিত হচ্ছে উত্তরাধিকার সূত্রে লন্ডন থেকে নির্দেশিত পথে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ডয়াত মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে স্বজন-বিরোধী কঠোর অবস্থান বিএনপিকে সম্পূর্ণভাবে শাসকগোষ্ঠীর আত্মীয়দের প্রভাবমুক্ত রেখেছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, খালেদা জিয়ার রাজনীতি তাঁর ঠিক বিপরীত। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেই নয়, সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন এমনকি সেনাবাহিনী প্রধান নিয়োগেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তে নিকট আত্মীয়দের প্রচণ্ড প্রভাব প্রতিফলিত হতে দেখা গেছে।নেতৃত্বে পরিবর্তন না এলে বিএনপির আর ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন এই সদস্য।বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে প্রথমে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এবং পরে বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি- বিএমপি নামে নতুন দল গড়েছিলেন নাজমুল হুদা। দশ মাস আগে ৩০ দল নিয়ে ‘বাংলাদেশ জাতীয় জোট’ নামে নতুন একটি মোর্চা গঠনেরও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।সংবাদ সম্মেলনে হুদা বলেন, আমি মনে করছি, নেতা-নেত্রীর কারণে কোটি কোটি মানুষের সমর্থনপুষ্ট বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন হতে দেয়া যাবে না। বিএনপির যাত্রা নতুন করে শুরু করতে হবে নতুন নামে। এই লক্ষ্যে তৃনমূল বিএনপির যাত্রা শুরু করলাম।
নাজমুল হুদা বলেন, বিএনপিকে ভাঙার জন্য নয়, দেশে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ও তৃণমূলে যে অহেলিত নেতাকর্মীরা রয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনতে আমার এ উদ্যোগ। আমি চাই দেশে সুষ্ঠু ধারার গণতন্ত্র ফিরে আসুক।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়া, তৃণমূল নেতাকর্মীদের অবহেলা করায় তারা আজ বিচ্ছিন্ন। দেশে আজ আইনের শাসন নেই। দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতেই এ নতুন দল গঠন।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে দল গঠনে সরকার যদি সহযোগিতা করে আমি তা নেবো। এছাড়া আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে এ দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।তৃণমূল থেকে নেতা হতে হতেই কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আসতে হবে বলেও জানান নাজমুল হদা।আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তার দল অংশ নেবে কি না জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তবে এ বিষয়ে বলা যাচ্ছে না, মাত্র শুরু করেছি। তবে দলের কেউ যদি স্থানীয় নির্বাচন করতে চান আমার কোনো সমস্য নেই। অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রী নাজিম উদ্দিন আজাদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তার এই সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের জনা চল্লিশেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা আগে কোন দল বা সংগঠনে ছিলেন, তা জানানো হয়নি।মঞ্চে নাজমুল হুদার পাশে ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) একাংশের চেয়ারম্যান এম নাজিমউদ্দিন আল আজাদ, যিনি এইচ এম এরশাদের সরকারে ধর্মমন্ত্রী ছিলেন।এছাড়া লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান সেকান্দর আলী মনি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান এ আর এম জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিনও মঞ্চে ছিলেন।এর মধ্যে এলডিপি ও লেবার পার্টির আরেক অংশ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে।রাশিয়া দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব ক্রিস্টিনা বয়কোকেও সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়। মঞ্চের পেছনে ব্যানারে দেখা যায় তৃনমূল বিএনপি’র লাল সবুজ পতাকা।