সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত প্যারিস,জরুরি অবস্থা জারি

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ নভেম্বর ২০১৫: ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের অন্তত ছয়টি স্থানে সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১৫৩ জন নিহত হয়েছেন। ভয়াবহ এসব হামলায় আরও কয়েক শ আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় এসব সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।এ হামলার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে দেশটির সকল সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আর নাগরিকদের ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।শনিবার সিএনএন ও বিবিসিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। খবরে বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি ১৫০০ সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে।এই হামলার ঘটনায় শহরের কেন্দ্রলে বাটাক্লঁ কনসার্ট হলেই অন্তত ১২০ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এদিকে, জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ফ্রান্সের প্যারিসে হামলার দায় স্বীকার করেছে। অনলাইনে দেওয়া তাদের বিবৃতির বরাত দিয়ে শনিবার এএফপির খবরে এ তথ্য জানানো হয়। সকালে অনলাইনে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আইএস দাবি করে, ‘বিস্ফোরক কোমরবন্ধনী পরে ও অস্ত্র হাতে নিয়ে আমাদের আট ভাই ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সফল হামলা করেছে। এর আগে এ হামলার ঘটনায় আইএসকে দায়ী করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। তিনি বলেন, স্বাধীন দেশ ফ্রান্সের ওপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট এ হামলা চালিয়েছে।ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে ফ্রান্সের অভিযান অব্যাহত থাকলে দেশটি শীর্ষ টার্গেটেই থাকবে বলে হুমকি দিয়েছে জঙ্গি সংগঠনটি।

শুক্রবারের প্যারিস হামলায় দায় স্বীকার করে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ হুমকি দেয় আইএস। বিবৃতিটি শনিবার (১৪ নভেম্বর) অনলাইনে পোস্ট করা হয়।শুক্রবার দিনগত রাতে থিয়েটার হল বাতাক্লঁ ও স্তেদে দ্য ফ্রান্স স্টেডিয়ামসহ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ও এর আশেপাশের ছয়টি পৃথক স্থানে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনায় অন্তত ১৫৩ জন নিহত ও দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অন্তত ৮০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে।বিবৃতিতে আইএস বলে, আমাদের যোদ্ধারা দেহে বোমাধারণ করে ও মেশিনগান হাতে প্যারিসের হৃদপিণ্ডে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। যদি ফ্রান্স তার নীতি পরিবর্তন না করে, তাহলে টার্গেটের শীর্ষেই থাকে যাবে।

এর আগে একই দিন একটি তারিখবিহীন ভিডিও বার্তা পোস্ট করে আইএস। এতেও সিরিয়ায় ফরাসী অভিযান বন্ধ করা না হলে দেশটিতে হামলার হুমকি দেওয়া হয়। ভিডিও বার্তাটি আইএসের মিডিয়া শাখা আল-হায়াত মিডিয়া সেন্টার’ পোস্ট করে।এদিকে, প্যারিস হামলার ঘটনাকে নজিরবিহীন হিসেবে দেখছেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। তিনি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন সংবাদ ব্রিফিংয়ের সময়।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্যারিসে দেড় হাজার অতিরিক্ত সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শহরের বাসিন্দাদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ফ্রান্সের সীমান্ত।শুক্রবার রাতে প্যারিসের কয়েকটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলায় শতাধিক ব্যক্তি নিহত এবং কয়েক শ ব্যক্তি আহত হন। এ হামলার পর ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। একই সঙ্গে দেশটির সব সীমান্ত বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাশাপাশি দেড় হাজার সেনাসদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে।জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষী ব্যক্তিদের বিচারে দাঁড় করানোর আহ্বান জানিয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের পাশে থাকার কথা বলেছে ন্যাটো।

যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। প্যারিসে এই সন্ত্রাসী হামলার ভয়াবহতায় ক্ষুব্ধ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এক টুইটে বলেন, সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা নিয়ে তাঁরা ফ্রান্সের মানুষের পাশে থাকবেন। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল প্যারিসে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ‘বিস্মিত, হতবাক’ বলে জানিয়েছেন। রাশিয়া এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্সের সরকার ও জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ। দেশটির প্রেসিডেন্ট ওলাঁদের কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় তিনি এ কথা বলেন। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রায় একই সময়ে কয়েকটি স্থানে বোমা হামলা ও বন্দুকধারীদের গুলিতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সন্ত্রাসী হামলার পর পুরো ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ; বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সীমান্ত।হামলার দায়িত্ব স্বীকার করলেও মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসকেই সন্দেহ করা হচিছল। নাম প্রকাশ না করে ওঁলাদ বলেছেন, আমরা জানি, কারা এই সন্ত্রাসী।

হামলাকারী পাঁচজনকে নিরস্ত্র করা হয়েছে বলে প্যারিসের পাবলিক প্রসিকিউটর ফ্রাঁসোয়া মলিয়েঁ জানালেও তারা জীবিত, না মৃত, তা এখনও স্পষ্ট নয়।হামলার পর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন নগরীটিতে সব বাসিন্দাদের যার যার ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। শহরে দেড় হাজার সৈন্য নামানো হয়েছে, বাতিল হয়েছে পুলিশের ছুটি, হাসপাতালগুলোতে কর্মীদের নিরবচ্ছিন্ন কাজে রাখা হয়েছে। মেট্রো রেলের পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে দূরপাল্লার রেল ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক থাকছে।প্যারিসজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার পর ফরাসি জনগণের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনেতারা।

রয়টার্স জানিয়েছে, কয়েকটি স্থানে হামলা হয়। এর মধ্যে প্যারিস সিটি হলে একটি কনসার্টে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ৮৭ জন। আরও চারটি স্থানে বোমা ও গুলিতে মারা যান আরও ৪০ জনের মতো।কনসার্টে গুলিবর্ষণের কাছাকাছি সময় স্টেডিয়াম স্তাদে দে ফ্রান্সের বাইরে বোমাহামলা হয়। ওই সময় স্টেডিয়ামে জার্মানি ও ফ্রান্সের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ চলছিল, খেলা দেখতে গিয়েছিলেন খোদ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ওই সময়ই প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে একটি রেস্তোরাঁ ও বারের সামনে গুলিবর্ষণ হয়, তাতে অন্তত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে রয়টার্স। আরও কয়েকটি স্থানে গুলিবর্ষণের খবর এলেও তার বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে অধিকাংশ গণমাধ্যম বলছিল, অন্তত ১৫৩ জন নিহত হয়েছেন। পরে ওলাঁদ জানান, সব মিলিয়ে নিহত হয়েছেন ১২৭ জন। আহতের সংখ্যা ১৮০। হামলাকারী ৮ জন নিহত হয়েছেন।

বলা হচ্ছে, ২০০৪ সালে মাদ্রিদে ট্রেনে বোমা হামলার পর ইউরোপে এটাই সন্ত্রাসী হামলার সবচেয়ে বড় ঘটনা। প্যারিসে বিদ্রুপ ম্যাগাজিন শার্লি এবদুতে হামলা চালিয়ে ২০ জনকে হত্যার দশ মাসের মাথায় আবারও হামলার ঘটনা ঘটল।শহরের মাঝামাঝি বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে মার্কিন ব্যান্ড দল ইগলস অব ডেথ মেটালের কনসার্ট দেখতে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ।এরই মধ্যে অন্তত তিন হামলাকারী হলে ঢুকে কালাশনিকভের মতো দেখতে রাইফেল নিয়ে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে বলে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান। ইউরোপ ওয়ান রেডিওর সাংবাদিক জুলিয়ঁ পিয়ার্সকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা অন্ধের মতো গুলি চালাচ্ছিল। যে যেদিকে পারে দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করছিল। আমি বহু মানুষকে গুলি খেয়ে পড়ে যেতে দেখেছি।জুলিয়ঁ পিয়ার্স বলেন, হামলাকারীরা সবাই ছিল বয়সে তরুণ। কারো মুখে মুখোশ ছিল না। অন্তত তিনবার তারা রাইফেলের ম্যাগাজিন বদলেছে। তারা পরিষ্কার জানত- তারা কী করছে।

কনসার্ট হলের বাইরে থাকা এক যুবক রয়টার্সকে বলেন, বন্দুকধারী তিন তরুণ ছিল কালো পোশাকধারী। তাদের হাতে ছিল মেশিনগান। এই ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞের পর হামলাকারীরা সেখানে শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের রক্তাক্ত অবসান ঘটায়। ওই অভিযানে অন্তত তিন হামলাকারী নিহত হয় বলে বিবিসির খবর। এই কনসার্ট হলের কয়েকশ মিটারের মধ্যে বিদ্রুপ সাময়িকী শার্লি এবদুর কার্যালয়। ১০ মাস আগে সেখানে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে ২০ জনকে হত্যা করেছিল।

স্টেডিয়ামের বাইরে ম্যাকডোনাল্ডেসর দোকানের সামনে দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সেখানে তিনজন নিহত হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে। নিহতরা আত্মঘাতী বোমাহামলাকারী বলে ধারণা করা হচ্ছে।বাইরে বোমা হামলার পর খেলা চালিয়ে গেলেও স্টেডিয়ামের ভেতরে আতঙ্ককর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই সময় গ্যালারিতে ওলাঁদের সঙ্গে বসে খেলা দেখছিলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্যাঙ্ক ভালটার। বিস্ফোরণের পরপরই পুলিশের হেলিকপ্টারকে স্টেডিয়ামের উপর চক্কর দিতে দেখা যায়। প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ দ্রুত চলে যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, সেখানে বসে সব পরিস্থিতি দেখে জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেন তিনি।

প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে শ্যারোনে একটি এশীয় রেস্তোরাঁর সামনে আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে একজন বন্দুকধারী এলোপাতাড়ি গুলি চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে। রেস্তোরাঁর বাইরের অংশে তখন অনেকেই ডিনার খেতে বসেছিলেন। আকস্মিক এই হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।হামলার সময় সিটি হলের কনসার্টে থাকা একজন রয়টার্সকে বলেছেন, বন্দুকধারীরা ইসলামী স্লোগান’ দিচ্ছিল এবং সিরিয়ায় অভিযানে ফ্রাঁন্সের ভূমিকার প্রতিবাদ জানাচ্ছিল।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ এই ঘটনাকে বর্ণনা করেছেন নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে। রাতেই মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক করে তিনি টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন।হামলাকারীদের কাউকে দয়া দেখানো হবে না’ জানিয়ে ওলাঁদ বলেন, আবারও আমাদের ওপর ভয়াবহ হামলা হলৃ আমরা জানি, এরা কোথা থেকে এসেছে; আমরা জানি, কারা এই অপরাধী, আমরা জানি, কারা এই সন্ত্রাসী।তারা আমাদের ভয় দেখাতে চায়.. কিন্তু আমরা সেই জাতি, যারা নিজেদের রক্ষা করতে জানে; যারা জানে, কীভাবে নিজেদেরে শক্তি কাজে লাগাতে হয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আবারও আমাদের জয় হবে। দেশের এই পরিস্থিতিতে জি টোয়েন্টি সম্মেলনে যোগ দিতে তুরস্কে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ।

হামলার নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন দেশ ফ্রান্সের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে হোতাদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের পাশে থাকার কথা বলেছে নেটো।ফ্রান্সকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত আছে জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে বলেছেন, নিরপরাধ বেসামরিক জনগণকে সন্ত্রস্ত করার আরেকটি ভয়ঙ্কর চেষ্টা আমরা দেখলাম।প্যারিসে হামলার এই ভয়াবহতায় ক্ষুব্ধ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এক টুইটে বলেছেন, আমরা ফ্রান্সের মানুষের পাশে আছি। তাদের সাহায্যে যতটা সম্ভব, আমরা তা করব।” জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল বলেছেন, প্যারিসের যে খবর আর ছবি তিনি পেয়েছেন. তাতে তিনি বিস্মিত, হতবাক।

শুক্রবারের হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে আইএসের মিডিয়া গ্র“প আল হায়াত মিডিয়া সেন্টারের একটি বার্তা এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে পাঠানো ওই বার্তায় বলা হয়েছে, আমাদের আট ভাই বিস্ফোরকভর্তি ভেস্ট পরে, অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্যবস্তু ঠিক করে ফ্রান্সের রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।শিল্প-সাহিত্যের শহর প্যারিসকে ‘বিকৃতির রাজধানী আখ্যায়িত করে হামলার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে ওই বার্তায়। আল্লাহর রাস্তায় এই হামলা চালিয়েছেন আমাদের একদল বিশ্বাসী ভাই, যারা ইসলামী খেলাফতের সৈনিক।

ইসলামিক স্টেটের (আইএস) একটি ভিডিও পোস্ট হয়েছে ইন্টারনেটে। এতে হুমকি দেওয়া হয়েছে- সিরিয়ায় বোমা হামলা বন্ধ না হলে ফ্রান্সের উপর হামলা হবে।তবে এই ভিডিওটি কবেকার, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।রক্তাক্ত হামলার পরদিন শনিবার নিরাপত্তা নিয়ে এক জরুরি বৈঠকের পর ওলাঁদ বলেন, ফ্রান্সের বাইরে থেকে করা পরিকল্পনায় ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের সহায়তায় এই হামলা চালিয়েছে দায়েশ (আইএস)।

ফরাসি ভাষায় দেওয়া বক্তব্যে আইএসের নাম আরবিতে দায়েশ’ উচ্চারণ করেন তিনি। আইএস দমনে সিরিয়ায় যে বিমান হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, তার অন্যতম সহযোগী ফ্রান্স।ওলাঁদ বলেন, প্যারিসে হামলাকারীরা যুদ্ধ চালিয়েছে। আর সে যুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে ফ্রান্সের সম্ভাব্য সব কিছু করতে হবে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় এক যোগে প্যারিসের কেন্দ্রের কয়েকটি স্থানে হামলা চালায়। এর মধ্যে সিটি হলে একটি কনসার্টে গুলিবর্ষণে নিহত হন অন্তত ৮৭ জন। স্টেডিয়াম ও রেস্তোরাঁসহ পাঁচটি স্থানে বোমা ও গুলিতে মারা যান আরও ৪০ জনের মতো।এর মধ্যে স্টেডিয়াম স্তাদে দে ফ্রান্সের বাইরে বোমাহামলা হয়। ওই সময় স্টেডিয়ামে জার্মানি ও ফ্রান্সের ফুটবল খেলা দেখছিলেন খোদ ফরাসি প্রেসিডেন্ট।তিনটি স্থানে হামলাকারী আটজনের সবাই মারা গেছে বলে জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট। হামলায় ১২৭ জন নিহত এবং ১৮০ জন আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।

হামলার পরপরই দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ওলাঁদ। নিহতদের স্মরণে তিন দিনের জাতীয় শোকও শনিবার ঘোষণা করেছেন তিনি। এই সঙ্কটময় অবস্থায় তিনি সোমবার পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন।জনগণের জীবন এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষায় সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এই হামলাকে কাপুরুষোচিত আখ্যায়িত করে ওলাঁদ এই সময়ে ফ্রান্সের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সাহসের সঙ্গে সঙ্কট মোকাবেলার আহ্বানও জানান তিনি।

জনগণকে উদ্দীপ্ত করে ওলাঁদ বলেন, যদি ফ্রান্স আহত হয়, তবে ফ্রান্স জেগে ওঠে।তারা আমাদের ভয় দেখাতে চায়.. কিন্তু আমরা সেই জাতি, যারা নিজেদের রক্ষা করতে জানে; যারা জানে, কীভাবে নিজেদেরে শক্তি কাজে লাগাতে হয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আবারও আমাদের জয় হবে।