দৈনিকবার্তা- বগুড়া, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন,শিগগির বাংলাদেশ-ভারত- নেপাল-ভুটানের মধ্যে বাস ও কার্গো সার্ভিস চালু হবে। এই উদ্যোগ এই অঞ্চলের গেম চেঞ্জার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ান নর্থইস্ট: এক্সপ্লোরিং অপরচুনিটিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ইনটারেস্ট’ শীর্ষ দুই দিনব্যাপী ওই সেমিনারের আয়োজন করে।উদ্বোধনী বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হবে সেতুবন্ধন।এখানে ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, পানি, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। ভারতের নুমালিগর রিফাইনারি থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পার্বতীপুর হয়ে বাংলাদেশে ডিজেল আসবে। ভারতের উত্তর–পূর্ব অংশের সঙ্গে হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্টে যৌথ বিনিয়োগ এবং বিদ্যুৎ আমদানি/বিনিময়ের সম্ভাব্যতা দেখা হচ্ছে। ভারতের এই অংশের সঙ্গে যোগাযোগের উন্নয়নে নতুন সড়ক ও রেলপথ সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। ভারতের এই অঞ্চলে বাংলাদেশ কূটনৈতিক উপস্থিতিও বাড়াচ্ছে। শিগগির আগরতলা ভিসা কার্যালয়ে একজন সহকারী হাইকমিশনার যোগ দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি, কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। বিবিআইএন মোটর ভেইকেল চুক্তির আওতায় শিগগির বাংলাদেশ-ভারত- নেপাল-ভুটানের মধ্যে বাস ও কার্গো সার্ভিস চালু হবে। এটি এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যে জনগণের যোগাযোগ এবং বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের টওতিবেশী হিসেবে পারস্পরিক স্বার্থ, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং বোঝাপড়ার মাধ্যমে। যদিও পারস্পরিক সম্পর্ক মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই ছিল। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে আঃন্তযোগাযোগের মাধ্যমে সামাজিক অর্থনীতির ক্ষেত্র বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে এই অঞ্চলের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখে ব্যবসা ও অন্যান্য সুযোগ সৃষ্টি করতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য মাহমুদ আলী ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমরা যদি ভারতের কথা বলি তাহলে পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হয়।ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের এই ত্যাগের সম্পর্ক। অতএব, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ-ভারত দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গসহ আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় রাজ্যগুলো নিজেদের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমাদের এক কোটি মানষকে আশ্রয় দিয়েছে। এই ইতিহাস থেকেই ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে, যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা সস্তায় ভাল মানের পণ্য রপ্তানি করে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করছি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। আমরা বিশ্বমানের ইলেকট্রিক পণ্য, মোটর সাইকেল পণ্য উৎপাদন করছি এই অঞ্চলে ব্যবসার জন্য।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী। এ ছাড়া সেমিনারের আহ্বায়ক আকমল হোসেন, সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ এ জামাল বক্তব্য দেন।দুদিনব্যাপী এই সেমিনারের প্রথম দিনে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন, পানি, যোগাযোগ, নিরাপত্তা এসব বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন ও আলোচনার কথা রয়েছে। দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সেমিনারের প্রথম দিনে টাইটেল পেপার উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. শরিফ উদ্দিন আহমেদ।
সেমিনারে বিষয় ভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসফাক হোসেন, ড. আমেনা হোসেন এবং গবেষণাপত্র তুলে ধরেন ভারতের ঋষি বঙ্কিম কলেজের সহকারী অধাপক ড. অনিন্দিতা ঘোষাল।