দৈনিকবার্তা- গাজীপুর, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫ : নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের নুহাশ পল্লীতে শুক্রবার জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক, লেখক ও নাট্যকার হুমায়ুন আহমেদের ৬৭তম জন্মদিন পালন করা হয়েছে। এবারের জন্ম দিনে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের প্রতিকৃতির ম্যুরাল উন্মোচন করা হয়েছে। হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবী জানিয়েছে হুমায়ুনের পরিবার ও ভক্তরা।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২ টা ১মিনিটে নুহাশ পল্লীর সকল স্থাপনায় ৩৬০টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করার মধ্য দিয়ে নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমদের জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এদিনটি উদযাপন করছে হুমায়ুনের পরিবার সদস্য, ভক্ত ও নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা কর্মচারীরা। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে নিশাদ-নিনিতকে নিয়ে শাওন নুহাশ পল্লীতে আসেন। পরে ভক্তদের সঙ্গে নিয়ে শাওন প্রয়াত হুমায়ুন আহমদের কবর জিয়ারত ও তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। এসময় হুমায়ূন আহমেদের হাতে গড়া নুহাশ পল্লীতে এবারের জন্ম দিনে উন্মোচন করা হয় তাঁর প্রতিকৃতির ম্যুরাল। হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যুরালটি উদ্বোধন করেন। পরে তিনি হুমায়ুন আহমদের কবরে পুস্পস্তবক অর্পন এবং জন্ম দিনের কেক কাটেন। এ সময় হুমায়ুন আহমেদের দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত এবং কন্ঠ শিল্পী এস আই টুটুল তার সঙ্গে ছিলেন। এছাড়াও নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে কেক কাটা হয়। জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকার বাসায় মোমবাতি জ্বালিয়ে কেক কাটা হয়।
মেহের আফরোজ শাওন বলেন, আমি প্রতিদিন যেভাবে ভাবি আজকেও সেভাবেই ভাবছি। বিখ্যাত মানুষ গুলোর ক্ষেত্রে যা হয়, জন্ম দিন মৃত্যু দিন, বিশেষ দিনগুলোতে খবর গুলো আমরা পাই। আমরা তার খোঁজ করি, পরিবার পরিজনদের সঙ্গে কথা বলি। পরিবারের লোকজন কিন্তু প্রতিটা মূহুর্তেই তাকে স্বরণ করে। আমিও প্রতিটি মূহুর্তে প্রতিটি নি:শ্বাসে হুমায়ুন আহমেদকে যেভাবে স্বরণ করি আজকেও সেভাবে স্বরণ করছি। হুমায়ুন আহমদের জন্মদিনটি উদাপন করতে ভাল লাগে। বাংলাদেশের এমনকি পৃথিবীর আনাচে কানাচে যেখানে বাংলা ভাষাভাষির মানুষ আছেন তারও ছোট্র করে হলেও হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিনটা উদযাপন করে। এ উদযাপনটা দেখতে আমার ভাল লাগে। এ উদযাপনের খবর যখন পাই, ছবি দেখি। আমার খুব ভাল লাগে।
তিনি বলেন, আমি মানতেই পারি না যখন কোন অনুষ্ঠানে বলা হয় আজ ‘প্রয়াত’ হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিন। সাহিত্যিক, চিত্র শিল্পী, কবি এ ধরণের মহান মানুষ কখনো প্রয়াত হন না। আমি চাই না ‘প্রয়াত’ হুমায়ুন আহমেদ কথাটা বলা হউক। তিনি বলেন, আমি চাই রাষ্ট্রীয়ভাবে হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিন পালন হউক।
হুমায়ুনের ম্যুরালঃ
হুমায়ুন আহমদের বাসভবনের পাশের আপেল গাছের নীচে তার একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। নুহাশ পল্লীর মূল ফটক দিকে ঢোকার পরই তা নজরে পড়বে। ৭০বর্গফুট (১০ফুট /৭ফুট) আকৃতির এ ম্যুরালটির নির্মাতা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অয়েল পেইন্টিং বিভাগ থেকে (মাস্টার্স অব ফাইন আর্টস) পাশ করা কুমিল্লার হাফিজ উদ্দিন বাবু। ঢাকার শাহবাগ এলাকায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ম্যুরাল, ধানমন্ডিতে ভাষা সৈনিকদের ম্যুরাল, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের সামনে প্রধানমন্ত্রীর ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধু হলের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও তার তৈরি বলে জানান বাবু।
হিমুদের কর্মসূচীঃ
হিমু পরিবহনের সদস্য মাহমুদুল হাসান মাঝি জানান, তাদের একটি দল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে থেকে পায়ে হেটে নুহাশ পল্লীতে যাত্রা শুরু করেছে। পথে তারা ক্যান্সার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরন করেন। নুহাশ পল্øীতে পৌঁছার পর পথশিশুদেও নিয়ে একটি কেক কাটবেন বলে জানান তিনি। এছাড়া বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার পলাশীর মোড় এলাকায় ফ্রেপড মিলনায়তনে হিমু পরিবহনের ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন হিমু জার্নালের প্রথম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন, আলোচনা ও কেক কাটা হবে। সেখানে হুমাযুন স্যারের ছোট ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব, আবৃতি শিল্পী, অভিনেতা ও শিক্ষক ভাস্কর বন্দোপধ্যায়, ফোক গায়ক কুদ্দুস বয়াতিসহ স্যারের দুই বোনও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।