টি-টোয়েন্টি সিরিজেও জয় তুলে লিড নিলো টাইগাররা

দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫ : ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নেওয়ার পর দুই ম্যাচ টি- টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। জিম্বাবুয়েকে ৪ উইকেটে হারিয়ে ১-০ তে লিড নিয়েছে স্বাগতিকরা। ১৩২ রানের টার্গেটে নেমে ১৪ বল হাতে রেখে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় মাশরাফি-তামিম-মুশফিক-মুস্তাফিজরা। মাহমুদউল্লাহ ২২ ও মাশরাফি ১৫ রানে অপরাজিত থেকে দলকে ১৭ ওভার ৪ বলে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ম্যালকম ওয়ালার।তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে সফরকারী জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ’ করে দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ। শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগারদের দলপতি মাশরাফি। টাইগার বোলারদের বোলিং তোপে পড়ে নির্ধারিত ২০ ওভারের ৩ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস। অলআউট হওয়ার আগে জিম্বাবুয়ে ১৯.৩ ওভারে করে ১৩১ রান। বাংলাদেশ ১৭.৪ ওভারে ১৩৬ রান তোলে।টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। তবে, সে বিপদ সামলে নেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং লিটন দাস। এ দুজন আরও ৩৮ রান যোগ করেন স্কোরবোর্ডে। ১৬তম ওভারে আউট হওয়ার আগে লিটন ১২ বলে দুই চারে ১৭ রান করেন। টেন্ডাই চিশোরোর বলে পয়েন্টে গ্রায়েম ক্রেমারের হাতে ধরেন এই তরুণ।গ্রায়েম ক্রেমারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে নাসির হোসেন ও তামিম ইকবালের বিদায়ে বিপদ শুরু হয় বাংলাদেশের। গুগলি বুঝতেই পারেননি নাসির আর সঠিক লাইনে গিয়ে খেলেননি তামিম।জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শুরুতেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। রান আউট হয়ে ফিরে যান দলে ফেরা এনামুল হক।তামিম ইকবালের সঙ্গে ৩৯ রানের জুটি গড়ে ফিরে যান সাব্বির রহমান। টেন্ডাই চিশোরোর বলে মিড অনে গ্রায়েম ক্রেমারের ক্যাচে পরিণত হন তিনি।দলের ওপর চাপ বাড়িয়ে ফিরে যানন মুশফিকুর রহিম। লেগ স্পিনার গ্রায়েম ক্রেমারের বল পুল করতে গিয়ে তার ব্যাটের কানায় লেগে কাভারে উঠে যায়। সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করতে কোনো ভুল করেননি সিকন্দার রাজাদলীয় ৬ রানের মাথায় বিজয়ের উইকেট হারিয়ে এগুতে থাকে টাইগাররা। তবে, ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে চিসোরোর বলে বিদায় নেন সাব্বির রহমান। আরভিনের অসাধারণ ক্যাচে আউট হওয়ার আগে ১৬ বলে তিনটি চারে ১৮ রান করেন সাব্বির। সাব্বিরের বিদায়ের পর নামা মুশফিক ২ রান করে দলীয় অষ্টম ওভারে ক্যাচ তুলে দেন।১৩২ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ শুরুতেই ওপেনার এনামুল হক বিজয়কে হারায়। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে রান আউট হয়ে ফেরেন বিজয়।

এগারোতম ওভারে নাসির আর তামিমের উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। গ্রায়েম ক্রেমারের বলে দুই ব্যাটসম্যানই এলবির ফাঁদে পড়েন। নাসির আউট হওয়ার আগে ১২ বলে একটি করে চার ও ছয়ে করেন ১৬ রান। আর ওপেনার তামিম খেলেন ৩১ রানের ইনিংস। ২৮ বল মোকাবেলা করে এ বাঁহাতি ওপেনার তিনটি চার মারেন।এর আগে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে সফরকারী জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ। শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগারদের দলপতি মাশরাফি। টাইগার বোলারদের বোলিং তোপে পড়ে নির্ধারিত ২০ ওভারের ৩ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস। অলআউট হওয়ার আগে জিম্বাবুয়ে ১৯.৩ ওভারে করে ১৩১ রান। প্রথমে ওয়ার্নার, এরপর ওয়ালার! ক্রিকেটের আজকের দিনটা বোলারদের ওপর ছড়ি ঘোরালেন এই দুই ডব্লিউ। ম্যালকম ওয়ালারের ৩১ বলে ৬৮ রানের ইনিংসে এক সময় ঝড়ই তুলেছিল জিম্বাবুয়ে। চার যেমন মেরেছেন চারটি, ছক্কাও ছয়টি। অথচ ওয়ালার এর আগে ১৩ ইনিংস মিলিয়েই ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন সাতটি। ফিফটি করেছেন মাত্র ২০ বলে।ওয়ালারকে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজ। পানিয়াঙ্গারাকেও এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে ৩ বল আগে অলআউট করেছেন জিম্বাবুয়েকে। তাঁর সঙ্গে আল আমিনও রানে বাঁধ দেওয়ায় রেখেছেন বড় ভূমিকা। আর শুরুতে মাশরাফি বিন মুর্তজার মাপা বোলিং শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়েকে আটকে রাখল ১৩১ রানে। এই তিন বোলারই দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। মাশরাফি-আল আমিন দুজনই দিয়েছেন ২০ রান, মুস্তাফিজ দিয়েছেন ১৬। টি-টোয়েন্টিতে নিজের সেরা বোলিংটা আজ করলেন এই বাঁ হাতি পেসার।টাইগারদের হয়ে বোলিং উদ্বোধন করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই ওপেনার সিকান্দার রাজাকে ফিরিয়ে দেন নড়াইল এক্সপ্রেস। ম্যাশের বলে লিটন দাসের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন ৫ রান করা রাজা।পরের ওভারেই আল আমিনের শিকারে সাজঘরের পথ ধরেন আরেক ওপেনার রেগিস চাকাভা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন শূন্যহাতে ফেরা চাকাভা।ওপেনার সিকান্দার রাজাকে ফিরিয়ে দিয়ে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আবারো আঘাত হানেন মাশরাফি। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে জিম্বাবুয়ের দলপতি এলটন চিগুম্বুরাকে সরাসরি বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন টাইগার দলপতি। বিদায় নেওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে কোনো রানই আসেনি।ব্যাটিংয়ের কিছুটা হাল ধরার চেষ্টা করেন ক্রেইগ আরভিন এবং শন উইলিয়ামস। স্কোরবোর্ডে ২৮ রান যোগ হতে ইনিংসের নবম ওভারে বোল্ড করে শন উইলিয়ামসকে ফিরিয়ে দেন নাসির হোসেন। ব্যক্তিগত ১৫ রান করে ফেরেন উইলিয়ামস। ইনিংসের ১৫তম ওভারে এসে আরেকবার উইকেটের দেখা পেল টাইগাররা। ক্রেইগ আরভিনকে বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আউট হওয়ার আগে তিনি ২০ রান করেন। এছাড়া ওয়ালারকে সঙ্গ দিয়ে স্কোরবোর্ডে আরও ৬৭ রান যোগ করেন। ক্রেইগ আরভিনের বিদায়ের পর নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে আসা লুক জঙ্গোকে এলবির ফাঁদে ফেলেন জুবায়ের হোসেন। জিম্বাবুয়ের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন তিনি। একই ওভারে এ স্পিনার ফিরিয়ে দেন মাদজিভাকে।মাত্র ২০ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক হাঁকানো ১৫তম ম্যাচ খেলতে নামা ম্যালকম ওয়ালার ক্যারিয়ার সেরা ৬৮ রান করে মুস্তাফিজের বলে আউট হন তিনি। মাত্র ৩১ বলে ৪টি চার আর ৬টি ছক্কায় ওয়ালার তার ইনিংসটি সাজান। পরের ওভারে আল আমিনের বলে ফেরেন গ্রায়েম ক্রেমার। বোল্ড হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩ রান। ২০তম ওভারে পানিয়াঙ্গারাকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজ। শেষ ওভারে টিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ১৩১ রানে অতিথিদের থামিয়ে দেন মুস্তাফিজ। মুস্তাফিজ, মাশরাফি, আল আমিন ও জুবায়ের দুটি করে উইকেট নেন।জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে (ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি) সিরিজে প্রথমবারের মতো দলে আসেন এনামুল হক বিজয় এবং জুবায়ের হোসেন লিখন। এ দুই টাইগারদের সুযোগ দিতে জায়গা ছেড়েছেন ইমরুল কায়েস এবং আরাফাত সানি।এ ম্যাচে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান এবং জিম্বাবুয়ের হ্যামিল্টন মাসাকাদজা নেই। নেই অতিথিদের প্রসপার উতসেয়া। সাকিব এবং মাসাকাদজা দু’জনই দুই দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টির মুখোমুখি লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি রান, সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিক। ৭টি করে উইকেট নিয়ে সাকিব এবং উতসেয়া সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক। তবে, ব্যক্তিগত ইংনিস সর্বোচ্চতে এবং সেরা বোলিংয়ে দুই জিম্বাবুইয়ানের থেকেও এগিয়ে সাকিব।টাইগারদের টি-টোয়িন্টর অতীত পরিসংখ্যান কিছুটা বিবর্ণ। এ পর্যন্ত ৪৪টি ম্যাচ খেলে এ ফরমেটে টাইগারদের জয়ের সংখ্যা মাত্র ১২টি। ক্রিকেটের ক্ষুদ্র ফরেমেটে ৩১টি ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। এ ফরমেটে ১২ ম্যাচ জয়ী বাংলাদেশের অবস্থানও ১২ নম্বরে। তালিকায় বাংলাদেশের ওপরে আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, আর নেদারল্যান্ডস।আগামী বছর টি-টোয়েন্টির এশিয়া কাপ (ফেব্র“য়ারি-মার্চে, বাংলাদেশের মাটিতে) ও মার্চ-এপ্রিলে ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ। আর চলতি বছরের ২২ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া বিপিএল টি-টোয়েন্টির উত্তাপ ছড়াতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজটি টাইগারদের জন্য ভালো প্রস্তুতির মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে।ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে দাঁড়াতেই দেয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু টি- টোয়েন্টিতে বড় দল-ছোট দলের পার্থক্যের হিসেবে জিম্বাবুয়ের কাছ থেকে কিছুটা প্রতিরোধ প্রত্যাশিত। ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচেই প্রতিরোধহীন আত্মসমর্পণ সফরকারীদের। অপরদিকে, ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করায় স্বাগতিকদের প্রত্যাশার পারদ এখন চূড়ায়। তবে, ৫০ ওভারের ক্রিকেটে গর্ব করার মতো বাংলাদেশের অনেক কিছু থাকলেও টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে ব্যর্থতার পাল্লাটাই ভারী।টি-টোয়েন্টিতে ২০টি সিরিজে খেলে বাংলাদেশের জয় মাত্র একটি সিরিজে, দুটি সিরিজ ড্র করেছে টাইগাররা।