দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৮ নভেম্বর ২০১৫: নাশকতাসহ বিভিন্ন ধরনের মামলায় সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে আমাদের সংবাদদাতার জানিয়েছেন, শনিবার রাত এবং রোববার বার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এই অভিযান চালানো হয়।বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের যৌথবাহিনী ময়মনসিংহ জেলায় গত চব্বিশ ঘণ্টায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীসহ কমপে ১৬৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে বিএনপির ১২ নেতাকর্মী, জামায়াতের ছয়জন, শিবিরের দু’জন ও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির দুই সদস্য রয়েছেন। বাকিদেরকে জেলার ১৪টি থানা থেকে গ্রেফতার করা হয়।কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, গত চব্বিশ ঘন্টায় যৌথবাহিনী শহরের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে যুবদলের জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক খন্দকার মাসুদুল হক মাসুদ, ছাত্রশিবিরকর্মী আব্দুস সালাম ও তাইজুল ইসলাম পাপ্পুসহ ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। নাশকতা সৃষ্টিকারী এবং জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ঝিনাইগাতী ঃজামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ৭নভেম্বর শনিবার দিবাগত গভীর রাতে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা ব্যাপী অভিযান চালিয়ে ২জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের ধানশাইল গ্রামের মৃত জামিল উদ্দিনের ছেলে ও বনগাও জিগেতলা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শাহ আলম সিদ্দিকী(৪০) ও গৌরীপুর ইউনিয়নের বনগাও পূর্বপাড়া গ্রামের ছাইদুল ইসলাম মাষ্টারের ছেলে জাহিদ হাসান(২২)। থানার সূত্রে জানা যায়, উপজেলাব্যাপী অভিযান চালিয়ে এ দু’জনকে আটক করে। পরে তাদের বিরুদ্ধে ঝিনাইগাতী থানায় একটি মামলা দায়ের করে শেরপুর কোর্টে প্রেরন করা হয়। মামলা নং-৫, তারিখ-৮.১১.১৫,ধারা ১৪৪/৩৪১/৩৫৩/৪৩৫/৪২৭/৩৪দঃবিঃ। তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে ঝিনাইগাতী থানার ওসি মিজানুর রহমান নিশ্চিত করেন।
বাগেরহাট : বাগেরহাটে নাশকতার আশঙ্কায় জেলাব্যাপী পুলিশের বিশেষ অভিযানে রোববার সকাল পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ১৯ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে বিএনপির ৭ ও জামায়াত-শিবিরের ১২ নেতাকর্মী রয়েছে। আটক অপর ১৬ জন নাশকতাসহ বিভিন্ন নিয়মিত মামলার আসামি। এছাড়া নাশকতার আশঙ্কায় জেলার জনগুরুত্বপূর্ন স্থানগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বাগেরহাটের অতিরুক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাতভর অভিযান চালিয়ে রোববার সকাল পর্যন্ত জেলার ৬টি থানা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।তিনি জানান, সদর থানা এলাকা থেকে বিএনপির ৪, চিতলমারীতে বিএনপির ২, রামপালে বিএনপির ১ ও জামায়াতের ৪, কচুয়ায় জামায়াত ৩ ও শিবির ১,ফকিরহাটে জামায়াত ৩ ও মোল্লাহাট থেকে ১ জামায়াত নেতাকর্মীকে পুলিশ বাগেরহাটে নাশকতা সৃষ্টির আশঙ্কায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে আটক করে।আটকদের মধ্যে নাশকতার মামলায় আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ১৬ আসামিও রয়েছে। রোববার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জয়পুরহাট :জয়পুরহাটে নাশকতা মামলায় শনিবার রাতে জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমানসহ বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের মোট ২৯ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বিশেষ অভিযান চালিয়ে পুলিশের একাধিক দল জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের এ নেতাকর্মীদের আটক করে।জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, ২০দলীয় জোটের গত হরতাল-অবরোধ চলাকালে জামায়াত ও বিএনপি নেতাকর্মীরা রেল লাইন উপড়ানোসহ- ট্রেন, যাত্রীবাহি বাস, ট্রাক- প্রাইভেটকারে আগুন ধরিয়ে দেয়া ও ভাঙচুর করা ছাড়াও বিভিন্ন নাশকতা করে। এসব নাশকতার ঘটনায় জয়পুরহাটের ৫টি থানায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদে বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ওই সব নাশকতার মামলায় এই ২৯ বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম: নগরীর বাকলিয়ায় বিভিন্ন বস্তিতে অভিযান চালিয়ে ১৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী। রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে যৌথবাহিনীর কয়েক’শ সদস্য তিনটি টিমে বিভক্ত হয়ে অভিযান শুরু করে। একটানা অভিযান চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত।বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, বাকলিয়ার বাস্তুহারা কলোনি, ক্ষেতচর, শহীদ এনএমজে কলেজের আশপাশের এলাকা ঘিরে অভিযান চালিয়ে ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের যাচাইবাছাই চলছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, নাশকতাকারীদের ধরতে পুলিশ, এপিবিএন, বিজিবি এবং র্যাব মিলে যৌথভাবে নগরীতে এ অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ওসি।এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) নগরীতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবি এলাকা ঘিরে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। সিআরবিতে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমনের অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর এ অভিযান শুরু করে যৌথবাহিনী।এরপর শুক্রবার নগরীর আন্দরকিল্লাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করে যৌথবাহিনীর টিম।
গাজীপুর :গাজীপুরের সিটি করপোরেশনের ভোগড়া বাইপাস এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে পুলিশ অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে হোটেল ম্যানেজারসহ ২০ নারী-পুরুষকে আটক করেছে।শনিবার রাতে তাদের আটক করা হয়।জয়দেবপুর ভোগড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই জাকির হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাতে ভোগড়া বাইপাস এলাকার রংধনু আবাসিক হোটেলে অভিযান চালানো হয়। এ সময় অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ১০জন নারী, ৯ জন খদ্দের এবং হোটেল ম্যানেজারকে আটক করা হয়।মেহেরপুর : মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জামায়াতের ১৫ কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার দিবাগত রাতে গাংনী উপজেলার কষবা, করমদি, বাঁশবাড়ীয়া, চৌগাছা, চাঁদপুর ও এলাঙ্গিসহ বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে গ্রেফতার দেখানো হয়।আটককৃতরা হলেন গাংনী উপজেলার এলাঙ্গি গ্রামের আবুল হোসেন (৬০), ভোলাডাঙ্গার ফরমান আলী (৪৫), চাঁদুপুরের রওশন আলী (৪৫), চৌগাছার বিপ্লব হোসেন (২৭) ও রুস্তম আলী (৫৭), বাঁশবাড়ীয়ার আফসার আলী (৫০), আদম আলী (৪৭) ও এনামুল হক রানা (৪৮), নওপাড়ার মনিরুল ইসলাম (৫৬), জুগিন্দার খাইরুল ইসলাম (৪৯), বাগুন্দার আব্দুস সামাদ (৫০) ও আবুল কাশেম (৫৫), কষবার ইমতিয়াজ আলী (৩৫), করমদির হযরত আলী (৫০) এবং কোদালকাটির মনিরুল ইসলাম (৩৩)।অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান জানান, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে দেশব্যাপী যৌথবাহিনীর অভিযানের অংশ হিসেবে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তিনি দাবি করেন, আটককৃতদের মধ্যে পুর্বের নাশকতার মামলার কয়েকজন আসামি রয়েছেন। ১৫ জনকেই বিভিন্ন মামলার আসামি হিসেবে আদালতে সোপর্দের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।