দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৮ নভেম্বর ২০১৫: সংলাপের আহ্বান বিএনপির দুর্বলতা নয় মন্তব্য করে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, এত নির্যাতন চালানোর পরও বিএনপি যে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছে এটা সরকারের জন্য সৌভাগ্য। এক্ষত্রে ‘গোয়ার্তুমি’র সুযোগ নেই, সংলাপ না করে দোষারোপের রাজনীতি অব্যাহত রাখলে গণতন্ত্রের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনবে। সেজন্য ‘হিংসাশ্রয়ী’ রাজনীতি পরিহার করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আজ বিকেলে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আসাদুজ্জামান রিপন।দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির সংলাপ নিয়ে করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বিএনপির অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। বিএনপি মানবতাবিরোধী অপরাধের সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানের বিচার চায়। নিছক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোনো বিচার নয়।এখন যে বিচার চলছে বিএনপি তা সমর্থন করে কিনা এমন প্রসঙ্গে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি বিচার চায়, এ বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের নানা পর্যবেক্ষণ রয়েছে। এ পর্যবেক্ষণগুলো মিট করা সরকারের দায়িত্ব।আইএস নিয়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে রিপন বলেন, এ তথ্য সমগ্র জাতিকে উৎকণ্ঠিত করেছে। তিনি আসন্ন হুমকি মোকাবিলায় সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে হলে সর্বদলীয় বৈঠক, জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় সংলাপ হতে হবে।গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে এক সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বর্তমান সরকার রাজনৈতিক সংকটের সূচনা করেছে। সময় থাকতে এ সংকট থেকে উত্তরণের উপায় বের করতে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার জাতীয় সংলাপের ওই আহ্বানকে নাকচ করে দিয়ে রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেনে, ‘খুনিদের সঙ্গে’ সংলাপে বসার কোনো ইচ্ছা তার নেই।তিনি বলেন, ‘এতো দৈন্য দশায় বাংলাদেশ পড়েনি, যাতে যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে- তাদের সঙ্গে সংলাপে
বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম।
আপনারা সবাই জানেন, আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে দলের চেয়ারপার্সন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে একটি জাতীয় সংলাপের আহবান জানিয়েছিলেন এবং এই সংকট সমাধানের ক্ষেত্র চিহ্নিত করেও কিছু সমাধানের প্রস্তাবনাও তুলে ধরেছিলেন তাঁর সর্বশেষ বিবৃতিতে।কিন্তু অত্যন্ত দু:খের বিষয় শাসক দলের কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এই প্রস্তাবনাকে কটাক্ষ করেছেন। আমাদের দল ইতিবাচক রাজনীতি করে বলেই-দেশ ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা থেকেই জাতীয় ঐক্যের স্বার্থেই জাতীয় সংলাপের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার প্রধান বিদেশ থেকে দেশে ফিরেই তার মন্ত্রীদের কথাই পুণুরুচ্চারণ করেছেন-যা দেশবাসীকে সত্যিই হতাশ ও বিস্মিত করেছে।
সরকার প্রধান আজ সংবাদ সম্মেলনে আমাদের দল সম্পর্কে যে অভিযোগ করেছেন-তা নতুন কিছু নয়, এ সব তিনি আগেও বলেছেন। এ সব তিনি ও তার সহকর্মীরা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে বলার জন্য মুখের বুলি হিসেবে প্রতিদিনই আওড়াচ্ছেন। আমরা এর নিন্দা করছি ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ সব তথাকথিত অভিযোগের ব্যাপারে আমাদের দলের অবস্থান হচ্ছে-আমাদের দল ও অন্যান্য সকল বিরোধী দল দেশে নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটিঅবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবী করে আসছে এবং এ দাবীর স্বপক্ষে আমরা গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন করেছি এবং প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু আন্দোলন চলাকালে কোন ধরনের সহিংসতা-জ্বালাও-পোড়াও’র ঘটনার সাথে আমাদের দল-নেতা-কর্মীদের আদৌ কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
এ কথা আমরা বহুবার বলেছি এবং এসব ঘটনায় জাতিসংঘের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক তদন্ত’র দাবী করেছি, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থার দাবীও করেছি। সেন্টার ফর ন্যাশনাল ষ্টাডিজ (সিএনএস) নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের গবেষণালদ্ধ প্রতিষ্ঠান একটি প্রকাশনায় উল্লেখ করেছেন-কিভাবে ওসব ঘটনাগুলোতে সরকারী লোকজন সংশ্লিষ্ট ছিল এবং তারাই জ্বালাও-পোড়াও’র ঘটনায় জড়িত। ঐ তথ্য অনুযায়ী সরকার উদোর-পিন্ডি বুধোর ঘাড়েচাপিেেয় ক্রমাগতভাবে বিরোধী দলকে দেশে-বিদেশে হেয় করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে সরকার কোন ফায়দা এখন পর্যন্ত পেয়েছে কিনা জানিনা, তবে হিংসাশ্রয়ী রাজনীতির বহ্নিশিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে রাজনীতির অঙ্গনে। তবে বলতে পারি, এটি কোনভাবেই সুস্থ রাজনীতির জন্য সহায়ক নয়।
সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন-‘সংলাপে বসার জন্য বিরোধী দলের যে সক্ষমতা থাকা উচিৎ তা নেই’। দম্ভ ও উন্মাষিকতা থেকেই তারা যে এসব বলছেন, তাতে কারো কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তাদের ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে, ভোট বিহীন নির্বাচনে গঠিত সরকারের মন্ত্রীদের মুখে এসব বাগাড়ম্বর মোটেই শোভা পায় না। আমরা প্রশ্ন করতে চাই-যোগাযোগ মন্ত্রী তার নিজের মন্ত্রণালয়ে কোন সক্ষমতা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন ? গোটাদেশের রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরে গেছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো তার মন্ত্রণালয়েও অবাধে দুর্নীতি হচ্ছে। শুধু ৫ বছরে ২৭৫ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে মেঘনা-গোমতি সেতুর টোর আদায়ে।ঢাকার যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর আট লেন প্রকল্পের স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় সম্পাদকীয় পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদকীয়তে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ‘উন্নয়নমুখী নাকি রাষ্ট্রীয় কোষাগার নয়ছয় করা মুখ্য’ ? এ রকম অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।
অর্থমন্ত্রী বিএনপি’র সংলাপ প্রস্তাবকে ‘রাবিশ’ বলেছেন। তার অদক্ষতা-অযোগ্যতা ও শাসকদলীয়দের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার নামে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো থেকে দশ হাজার কোটি টাকার মতো লোপাট হয়ে ওসব ব্যাংকগুলো এখন ফোকলা হয়ে গেছে। তার মতো এরশাদ স্বৈরাচারের একজন সহযোগীর মুখেই এধরনের অমার্জিত শব্দ উচ্চারণ হওয়া স্বাভাবিক। যিনি বর্জ্য জাতীয় কথাবার্তা বলে প্রায়শ:ই ক্ষমা প্রার্থনাও করে থাকেন, যা জাতি বারবার প্রত্যক্ষ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিদেশীদের অবদানে সম্মাননা জানানোর জন্য যে ‘স্বর্ণপদক’ দেয়া হয়েছিল-তাতে কিভাবে স্বর্ণগুলো লোপাট হয়েছে, তা কি দেশবাসী ভুলে গেছেন ? আমরা শুরু থেকেই বলেছি-যুদ্ধপরাধী-মানবতাবিরোধী অপরাধের সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানের বিচার চাই এবং এ প্রশ্নে আমাদের সমর্থন রয়েছে, তারপরেও নিছক রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে শাসকদল এক ধরণের ‘গোয়েবলসীয়’ প্রোপাগান্ডা অব্যাহত রেখেছে।
আমরা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সংলাপের আহবান জানানো বিরোধী দলের কোন দুর্বলতা নয়। সরকারের সৌভাগ্য যে, বিরোধী দলের উপর নির্মম-নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানোর পরও আমরা এই ভোটারবিহীন নির্বাচনে গঠিত সরকারের সাথে সংলাপে বসার প্রস্তাব দিয়েছি, শুধু দেশ-জাতি যাতে অমানিষার ঘোর অন্ধকারে নিপতিত না হয়।সরকার প্রধান আজকের সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত হত্যাকান্ড ‘আইএস’ ঘটিয়েছে এমন স্বীকারোক্তির জন্য সরকারের উপর প্রচন্ড চাপ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। এ তথ্যে সমগ্র জাতি উৎকন্ঠিত হয়েছে। কারন জাতি’র উপলব্ধি করতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়-এর পরিণাম বাংলাদেশের জন্য কতটা বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে।
আর এজন্যই আমরা চাই-সবাই মিলে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে সকল ধরনের আশঙ্কা ও বিপদের হুমকিকে মোকাবেলা করি। কারন নগর পুড়লে দেবালয়ও তাতে রক্ষা পায়না। আর সে কারনেই আমরা দেশকে বাঁচাতে চাই, জনগণকে বাঁচাতে চাই। এখানে ক্ষমতায় কে আছেন, ক্ষমতায় কে আসবেন এখন সেটা মুখ্য নয়। দেশকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই সর্বদলীয় বৈঠক করতে হবে, জাতীয় ঐক্যের সূচনা করতে হবে, সংলাপও হতে হবে। এখানে গোঁয়ার্তূমির কোন সুযোগ নেই। আর তা না করে বিরোধী দলের প্রতি দোষারোপের রাজনীতির চর্চা অব্যাহত রাখলে গণতন্ত্রের জন্য মহা বিপদ ডেকে আনবে।তাই সরকারের প্রতি আমাদের আহবান-আসুন, অতীতাশ্রয়ী রাজনীতির ঘৃণা উদ্রেককারী বক্তব্য পরিহার করে দেশকে নিরাপদ করার জন্য, গণতন্ত্রকে নিরাপদ করার জন্য, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূণ:নির্মানের জন্য আমরা একমত হই এবং ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে বিনির্মানে সচেষ্ট হই।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।