দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৮ নভেম্বর ২০১৫: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, দলীয় স্বার্থ বা দাবি আদায় নয়, জাতীয় স্বার্থেই সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নোমান এই কথা বলেন।গত বৃহস্পতিবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, বর্তমান সংকট উত্তরণে সরকার কর্তৃত্ববাদী মনোভাব থেকে সরে এসে একটি জাতীয় সংলাপের সূচনার পরিবেশকে উন্মুক্ত করবে বলে তাঁরা আশা করছেন।এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রোববার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোনো খুনির সঙ্গে সংলাপে বসার ইচ্ছা নাই। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সমর্থন দিলে বিষয়টি ভেবে দেখব।বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়ার জাতীয় সংলাপের আহ্বান নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুনিদের সঙ্গে সংলাপে বসার কোনো ইচ্ছা তার নেই।তিনি বলেন, এতো দৈন্য দশায় বাংলাদেশ পড়েনি, যাতে যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে- তাদের সঙ্গে সংলাপে বসতে হবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া যে উচিৎ তা যখন স্বীকার করবেন, তখনই তিনি সংলাপে বসার যোগ্যতা অর্জন করবেন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপিনেত্রী বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করেন, সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে দেশের এই ক্রান্তিকাল ও সঙ্কটজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে গণতন্ত্র বিকাশের ক্ষেত্রকে সংকোচন না করে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব থেকে সরে এসে একটি জাতীয় সংলাপের সূচনার পরিবেশকে উন্মুক্ত করবে।এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোন করার কথা মনে করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, নির্বাচনের আগে আমি তাকে ফোন করি। তখন কী ধরনের কথা শুনতে হয়েছে। ফোন করে আমার ঝাড়ি খেতে হয়েছে।খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর সমবেদনা জানাতে খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে গিয়েও ঢুকতে না পারার কথাও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনি যদি কারও বাড়িতে যান, আর আপনার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, আপনি কি তার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন?সংলাপের কথা বলার আগে খালেদা জিয়াকে মানুষ পোড়ানোর রাস্তা থেকে বেরিয়ে আসার এবং জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা।উনি বলুক- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে সমর্থন করেন। উনি বলুক- যুদ্ধাপরাধের যে বিচার হচ্ছে, তা সঠিক হচ্ছে।এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় সংলাপের জন্যই খালেদা জিয়া মানুষ হত্যা করে এ পরিস্থিতির’ সৃষ্টি করছেন।যার হাতে মানুষ পোড়ে, তার সাথে সংলাপের ইচ্ছা আমার নাই। দয়া করে আমাকে ওই খুনি মানুষের সাথে বসতে অনুরোধ করবেন না। কারণ বসলেই পোড়া গন্ধ পাব।সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া হত্যা ও হামলার জন্যও যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যা ইচ্ছা বলতেই পারেন। কিন্তু তিনি যে প্রশ্নগুলো অবতারণা করেছেন, শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাজনীতিকের বক্তব্য এমন হতে পারে না। বিএনপি কী করবে না করবে তা বিএনপির বিষয়। বিএনপি জাতীয় সংলাপের কথা বলেছে। সুনির্দিষ্ট কোন দফা আদায়ের কথা বলেনি, বা কোনো দাবি আদায়ের জন্য সংলাপ চায়নি। দেশে এখন একটি সংকট চলছে, অস্থিরতা বিরাজ করছে। মানুষের মধ্যে সৃষ্ট উৎকণ্ঠা দূর করা ও আস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। সে জন্য জাতীয় সংলাপের প্রয়োজন।