দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৭ নভেম্বর ২০১৫: আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার (একিউআইএস) নামে বিবৃতি পাঠিয়ে আনসার আল ইসলামের টুইট নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই দাবি করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম।জঙ্গি সন্দেহে চার পাকিস্তানি ও তিন বাংলাদেশিকে ঢাকায় গ্রেপ্তারের পর শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো: মনিরুল ইসলাম একথা জানান।এসময় গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার(উত্তর) শেখ নাজমুল আলম, এডিসি মো: শাহজাহান ও উপ-পুলিশ কমিশনার(ডিসি) মিডিয়া মুনতাসিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
গত সপ্তাহে দুই প্রকাশকের উপর হামলায় আনসার আল ইসলামের টুইটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাদের দায় স্বীকার আংশিক সত্য।আংশিক সত্যের’ ব্যাখ্যায় মনিরুল বলেন, দীপনকে হত্যা এবং টুটুলসহ তিনজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার ঘটনার দায় যারা দায় স্বীকার করেছে, তারা তা বাংলাদেশে বসেই করেছে।দায় স্বীকারের সময় তারা ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা বলে যে দাবি করেছে, তা ঠিক নয়। পুলিশ তদন্ত করে এর কোনো সত্যতা পায়নি।প্রকাশক হত্যার পর আনসার আল ইসলামের টুইটে বলা হয়েছিল, আমরা, আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা এই অপারেশনের দায় স্বীকার করছি। গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল তখন বলেছিলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে যারা পরিচিত, তারা এই জাতীয় ঘটনা ঘটিয়ে এভাবে দায় স্বীকার করে। কখনও সেভেন (আনসার আল ইসলাম সেভেন), কখনও ফোর বা কখনও থ্রি নামে তারা দায় স্বীকার করে।তারা যে নামেই দায় স্বীকার করুক না কেন, সবার অবস্থান এক ছাতার নিচে, শনিবার বলেন তিনি।
নিহত লেখক অভিজিৎ রায়ের দুই প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং আহমেদুর রশীদ টুটুলের উপর শনিবার হামলার পর ওই টুইটটি করা হয়। অভিজিতের পর ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায়কে কুপিয়ে হত্যার পরও একই ধরনের বার্তা এসেছিল।ব্লগার হত্যাকাণ্ডের পর আল কায়দার নামে আনসারুল্লার দায় স্বীকারের বার্তা এলেও সম্প্রতি দুই বিদেশি খুন, পুলিশ খুন এবং শিয়াদের মিছিলে হামলার পর দায় স্বীকারের বার্তা আসে আইএসের কাছ থেকে।এর আগে পুলিশ আল কায়দা সম্পৃক্ত জঙ্গি, আইএস সম্পৃক্ত জঙ্গিদের ঢাকায় গ্রেপ্তারের খবর বেশ ফলাও করে দিলেও দুই বিদেশি খুনের পর অনেকটাই সংযত।বাংলাদেশে আইএসের কোনো তৎপরতা নেই বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। তাদের বিবৃতি প্রকাশকারী সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্র“পের তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।জঙ্গি তৎপরতার জন্য বাংলাদেশে নিষিদ্ধ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। ২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যামামলায় এখন বিচারের মুখোমুখি তিনি।গত ফেব্র“য়ারিতে ঢাকায় অভিজিৎ হত্যার পর আনসারুল্লাহর নামে টুইটার থেকে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার বার্তা আসে প্রথম। তখন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছিলেন, আল কায়দার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে আনসারুল্লাহ।গত ৩১ অক্টোবর বিকালে রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই সময়ে লালমাটিয়ায় আরেক প্রকাশক শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।
দেশকে অস্থিতিশীল ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদ্বীন বাংলাদেশ(জেএমবি) পরিকল্পিতভাবে নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।তিনি জানান, শুক্রবার রাতে রাজধানীর বিমানবন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেএমবি’র ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।তাদের মধ্যে ৪জন পাকিস্তানি ও ৩জন বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছে।তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে জঙ্গিবাদ ও জিহাদীবই, পাসর্পোট ও পাকিস্তানি রুপি উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন,এর আগেও তারা(জেএমবি) সদস্যরা দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকান্ডের পরিকল্পনা করেছিল।আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেসব নাশকতা রুখে দিয়েছি।তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ উগ্রবাদীদের ঘৃণা করে।যুগ্ম কমিশনার বলেন, শনিবার গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তারা অন্য কোন নাশকতামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন,ব্লগার ও প্রকাশক হত্যার ঘটনায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সন্দেহের তালিকায় রয়েছে।তাদেরকে টার্গেট করে তদন্ত করা হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্যদের সাথে আর্ন্তজাতিক কোন জঙ্গিগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার তথ্য এখনও পর্যন্ত খুজেঁ পাওয়া যায়নি।