দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ নভেম্বর ২০১৫: নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই দেশের যৌথ প্রচেষ্টা লাখো মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। বৃহস্পতিবার হেগে ডাচ ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে এক সেমিনারে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।তিনি বলেন, বাংলাদেশে বস্ত্র, চামড়া, পাট, সিরামিক, ওষুধ, পেট্রোক্যামিকেলস, জাহাজ নির্মাণ, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, প্ল্যাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল এবং ইলেকট্রনিক্স, টেলিযোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি আর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামো উন্নয়নের মত খাতে ডাচ কোম্পানিগুলোকে আমরা বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।বাংলাদেশ এরইমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছে গেছে জানিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যের কথাও সেমিনারে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ডাচ ব্যবসায়ীদের বলেন, আমি আপনাদের, ডাচ ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা আসুন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের, মুনাফা ও সমৃদ্ধির অংশীদার হোন। আমরা একজোট হলে লাখো মানুষের জীবন বদলে দিতে পারি। শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশে শুধুমাত্র রপ্তানিমুখী শিল্পোর জন্য আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোন রয়েছে। সরকার এখন ১০০টি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং বেশ কয়েকটি হাই-টেক পার্ক গড়ে তুলতে কাজ করছে, যেখানে ডাচ কোম্পানিগুলো ব্যবসার সুযোগ নিতে পারে।তিনি বলেন, বিনিয়োগ নীতির দিক দিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উদার দেশ। এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যেমন আইনি সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তেমনি তারা শুল্ক ও কর রেয়াতের মত সুবিধা পাচ্ছেন।লিখিত বক্তব্য দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ডাচ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং আবাসন, জলবায়ুর পরিবর্তন ও নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা সত্যিকারের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চাই। আমরা এক সাথে কাজ করলে দেশে ও বিশ্বে কোটি জনতার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারব।বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারেটা কুলিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তার ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে বলেন, সেখানে এক জায়গায় আমি জর্জ হ্যারিসনের ভাস্কর্য দেখেছি, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় গান গেয়ে সকলকে উজ্জীবিত করেছিলেন। এখন তিনি বাংলাদেশকে দেখলে সমৃদ্ধির গান গাইতেন।অন্যদের মধ্যে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সভাপতি মার্টিন ফারব্রুগেন, দেশটির সাবেক কৃষিমন্ত্রী চিজ ফিরমান, বাংলাদেশ সরকারের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির প্রথম সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।মার্টিন ফারব্রুগেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত কর্মঠ। বাংলাদেশ অত্যন্ত সুন্দর একটি দেশ।বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল ইসলাম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
এদিকে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস।বুধবার সন্ধ্যায় নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের রাষ্ট্রীয় বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ ঐকমত্য হয় হয় এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়।বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, কৃষি, বন্দরের উন্নয়ন ও আইনের শাসন নিয়ে আলোচনা হয়। পরে শেখ হাসিনার সম্মানে নৈশভোজে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়েও আলোচনা হয়। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন।ব-দ্বীপ অঞ্চলে থাকায় বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে পানি সম্পদের ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে বলেও মত দেন তারা।সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে গত জুনে দুদেশের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য জোরদার ও টেকসই ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক ও বাংলাদেশে ভূমি পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের ক্ষেত্রে’ আগ্রহপত্র সই হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।বাংলাদেশের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডসের পক্ষ থেকে আরও সহযোগিতার উপর জোর দেন তিনি শেখ হাসিনা।অন্যদিকে বাংলাদেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী।দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা ও মার্ক রুট দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করার আশা প্রকাশ করেন।অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতাকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের মূল বিষয় বলে উল্লেখ করেন তারা।নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম রপ্তানিকারক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী অন্যতম শীর্ষ দেশ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।দুই পক্ষই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আগ্রহহর কথা জানান। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ওষুধ, চামড়া, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, হালকা প্রকৌশল শিল্প, পাট, জাহাজ নির্মাণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, অবকাঠামো, তথ্য ও প্রযুক্তি এবং পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করতে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ীদেও প্রতি আহ্বান জানান।ডাচ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রস্তাবটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। দেশের তৈরি পোশাক খাতকে টেকসই শিল্পায়নের মডেল হিসেবে দাঁড় করাতে নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী।এই প্রেক্ষাপটে পোশাক শিল্পে ‘অর্থায়নের সুযোগ’ ও ‘পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে’ নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতা চান তিনি।ডাচ প্রধানমন্ত্রী এই শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুই দেশের মধ্যে বর্তমানের সহযোগিতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।এসময় বিশ্ব শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন দুই পক্ষ।