দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৪ নভেম্বর ২০১৫: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডনে দেওয়া বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ৷ দলটি মনে করে, লন্ডনে খালেদা জিয়া যে সব কথা বলেছেন, তার অধিকাংশই ছিল অসত্য তথ্যসংবলিত এবং কল্পকাহিনি দিয়ে সরকারের ইমেজ নষ্টের পাশাপাশি সরকারকে বিব্রত করার একটা অপপ্রয়াস৷দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন৷ গত রোববার লন্ডনে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া৷ আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, খালেদা জিয়া জঙ্গি মানসিকতায় বিশ্বাসী৷ ওনার প্রভুদের নির্দেশে তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন৷মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এবং বিরোধী দলে থাকার সময় যে অপকর্ম করেছে, দলের চেয়ারপারসন মিথ্যাচার করে সেগুলো ঢাকার একটা অপচেষ্টা চালিয়েছেন৷ সরকারের বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে কিছু অভিযোগ উত্থাপন করেছেন৷
আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে- খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য রাজনীতি করে৷ এই দল প্রতিহিংসার রাজনীতি করেছে কখনো কেউ দেখে নাই৷ বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি কাকে বলে, সেটা তখন খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমান দেখিয়েছিলেন৷ক্ষমতায় গেলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করব- খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যকে ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘উনি ক্ষমতায় থাকতে দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন৷ দুর্নীতিতে দেশকে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিলেন৷ আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন৷ খালেদা জিয়া এখন দেশের মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম৷ হত্যা-খুনের রানি খালেদাকে মানুষ ক্ষমতায় দেখতে চায় না৷আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামথ্যর্ে ঘাটতির জন্য লেখক-ব্লগারদের খুনিদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা মাহাবুব-উল আলম হানিফ৷খুনিদের গ্রেপ্তারে সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই দাবি করে তিনি বলেছেন, আপনাদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, আমাদের হয়ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়ত তাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণেই বা প্রযুক্তির স্বল্পতার কারণেই অনেক সময় তাত্ক্ষণিকভাবে বা খুব দ্রুত তদন্ত করে আসামিকে ধরা হয়ত সম্ভব হয়নি৷
গত শনিবার এক প্রকাশককে কুপিয়ে হত্যা এবং অন্যজনকে জখম করার জন্য দায়ীদের শনাক্ত করতে না পারায় সরকারের সমালোচনার মধ্যে বুধবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন হানিফ৷আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী দায়িত্বে থাকলেও বর্তমানে সরকারি কোনো পদে নেই৷বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে হানিফ বলেন, তার মানে এই নয় যে সরকার আন্তরিক নয়৷ সরকারের তরফ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, এই সমস্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক৷
তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যে সংগঠন’ বা যে বড় ভাই’ বা যে ‘শীর্ষ নেতারাই’ জড়িত থাকুক না কেন প্রত্যেকেকেই আইনের আওতায় আনা হবে এবং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে৷নিহত প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে নিয়ে মন্তব্য করে পরে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কিছু বলতে রাজি হননি হানিফ৷যুদ্ধাপরাধবিরোধী লেখক এবং গণজাগরণের সমর্থকদের উপর হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করেন আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ৷তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতের পাশাপাশি বিএনপি থেকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে একাধিকবার জনতার মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হবে৷ তাদেরকে নাস্তিক হিসেবেও অভিহিত করা হয়েছিল৷আজকে সেই মুক্তচিন্তার লেখক-প্রকাশকদের উপর তারা সুযোগ পেলেই আক্রমণ চালাচ্ছে৷বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর সবই জামায়াতের দাবি করে হানিফ বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই পার্থক্য নেই৷ উনি (খালেদা জিয়া) প্রকাশ্য জনসভায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও তাদের মুক্তি দাবি করেছেন৷সহিংস আন্দোলন ও নাশকতা চালিয়েও ক্ষমতায় যেতে না পেরে খালেদা জিয়া নিজে প্রতিহিংসায় জর্জরিত বলে মন্তব্য করেন হানিফ৷আমরা ভেবেছিলাম উনি হয়ত অতীত ভুল শুধরে আত্মশুদ্ধি ঘটাবেন৷ কিন্তু সে ইচ্ছা তার নেই৷সমপ্রতি বাংলাদেশে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় ‘বিএনপিই বেনিফিশিয়ারি বলে মন্তব্য করেন হানিফ৷সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কেন্দ্রীয় সদস্য এ কে এম এনামুল হক শামীম, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন