দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৪ নভেম্বর ২০১৫: এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ১৭টি দেশের প্রতিরক্ষা খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঝুঁকি নিয়ে পরিচালিত এক আঞ্চলিক গবেষণায় বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাত ‘উচ্চ ঝুঁকি’ সম্পন্ন বলে অভিমত দিয়েছে বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)৷লন্ডন থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআই জানায়, ২০১৪ সালে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৭টি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের সম্মিলিত পরিমাণ প্রায় ৪৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যা প্রতিরক্ষা খাতে বৈশ্বিক ব্যয়ের প্রায় এক চতুর্থাংশ৷ এই অঞ্চলের ৬টি দেশেরই প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির ঝুঁকি অতি উচ্চমাত্রা থেকে সঙ্কটাপন্ন অর্থাত্ বাংলাদেশের চেয়েও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আঞ্চলিক নিরাপত্তায় হুমকির সৃষ্টি হয়েছে বলে টিআই মনে করে৷ উল্লেখ্য, এই ছয়টি দেশ হলো : চীন, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া এবং মিয়ানমার৷এই দেশগুলোর মধ্যে ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় সবচেয়ে নিম্ন ঝুঁকিসম্পন্ন নিউজিল্যান্ড৷ এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান, জাপান এবং সিঙ্গাপুর নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে৷ এশিয়ার কয়েকটি দেশে নিয়ন্ত্রণহীন সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং দুর্বল ক্রয় ব্যবস্থার কারণে সামরিক ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়৷ এই কারণেই গবেষণার আওতাধীন ৬৫ শতাংশ দেশের জনগণের সামরিক বাহিনীর প্রতি আস্থা অনেক কম বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়৷
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মানদণ্ডে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাত ‘উচ্চ ঝুঁকি’র তালিকায় স্থান পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংসদীয় জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি৷ বিশেষত জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান হারে প্রতিরক্ষা রসদ ক্রয়ের ক্ষেত্রে তথ্যের অপ্রতুলতা এবং গোপনীয়তার সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার জন্য মঙ্গলজনক নয়৷তবে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে টওতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা খাতের সামগ্রিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির স্বার্থে ভবিষ্যতে এরকম কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মহলের সুযোগ সৃষ্টি করা ও সার্বিকভাবে প্রতিরক্ষা ব্যয়ে সংসদের কার্যকর ক্ষমতা বৃদ্ধি ও কার্যকর করা উন্নত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য৷
উল্লেখ্য, দ্য গভর্নমেন্ট ডিফেন্স অ্যান্টি করাপশন ইনডেঙ্ ে(সংক্ষেপে জিআই) শীর্ষক প্রতিবেদনে ৭৭টি নির্দেশকের ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা খাতের পাঁচটি ঝুঁকির ক্ষেত্র বিশ্লেষণ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঝুঁকি নিরূপণ করা হয়েছে৷ এই পাঁচটি ঝুঁকির ক্ষেত্র হলো : রাজনৈতিক, আর্থিক, জনবল, পরিচালনা এবং ক্রয়৷ গবেষণার অন্তর্ভূক্ত ৭৭টি প্রশ্নের প্রতিটি উত্তরকে ০-৪ পর্যন্ত স্কেলে রূপান্তরের পর একটি দেশের অবস্থানকে এ থেকে এফ শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা হয়৷ এ শ্রেণী হলো সবচেয়ে কম ঝুঁকি সম্পন্ন এবং এফ সবচেয়ে উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন৷ সে হিসাবে, বাংলাদেশের মতো ডি বা উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন দেশের শ্রেণীতে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশ হলো : ভারত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া৷
২০১৫ সালের এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক জিআই সূচকের সামগ্রিক মূল্যায়নের সমীক্ষায় অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার অংশগ্রহণ করেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়৷ বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যয় গত এক দশকে ২০২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাত সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে জনবল ক্ষেত্রে (সি শ্রেণীভুক্ত) এবং সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছে অর্থ,ক্রয় এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে৷আঞ্চলিক টওতিবেদনটি মড়াবত্হসবহঃ.ফবভবহপবরহফবী.ড়ত্ম -ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে৷