দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২ নভেম্বর ২০১৫: পাঁচ পাকিস্তানিসহ আটজন সাফাই সাক্ষীর প্রতি সমন দেওয়ার আরজি জানিয়ে বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর করা আবেদন খারিজ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এদিকে, যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ তাদের আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) যে আবেদন করেছেন, তার শুনানি হবে ১৭ নভেম্বর।প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।গত ১৯ অক্টোবর সাকা চৌধুরীর আইনজীবী পাঁচ পাকিস্তানিসহ আটজন সাফাই সাক্ষীর প্রতি সমন দেওয়ার আরজি জানিয়ে আপিল বিভাগে একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, সাকা চৌধুরী যে ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ থেকে ১৯৭৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিলেন না, এ বিষয়ে আটজন সাক্ষ্য দিতে চান। আদালতের সমন পেলে তাঁরা এসে সাক্ষ্য দেবেন।
সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন শুনানির জন্য সোমবার ধার্য ছিল। আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় সাকা চৌধুরীর পুনর্বিবেচনার আবেদনটি ১৭ নম্বরে ছিল। এর সঙ্গে ছিল সাক্ষীদের প্রতি সমন জারির নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদনটি। সাকা চৌধুরীর আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্বিবেচনার আবেদন শুনানির জন্য ১৭ নভেম্বর তারিখ পুনর্নিধারণ করেছেন আপিল বিভাগ। অন্যদিকে সাফাই সাক্ষীদের প্রতি সমন জারির নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদনটি খারিজ করেন আদালত।পরে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আটজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য সমন জারির নির্দেশনা চেয়ে যে আবেদনটি করা হয়েছিল, আদালত তা খারিজ করেছেন।এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আবেদনটি খারিজ করার আগে আদালত মন্তব্য করেছেন ১৯৭১ সালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যে বাংলাদেশে ছিলেন, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে।
আদালত তা বিশ্বাস করে রায় দিয়েছেন। ফলে আসামিপক্ষের আরজি এখানে বিশ্বাস করার সুযোগ নেই।অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আদালত বলেছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যে একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আহত হয়েছিলেন, এ বিষয়ে ওই সময় পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। পরে তাঁকে আসামি করে চারটি মামলা হয়েছে।মাহবুবে আলম বলেন, এসব বিষয় বিবেচনা করেই আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এরপর গত ২৯ জুলাই ট্রাইব্যুনালের ওই রায় বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ। ৩০ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর সাকা চৌধুরী রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন।
গত ১৬ জুন একাত্তরের বদর প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের যুদ্ধাপরাধ মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে। আর মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আপিলের রায় আসে ২৯ জুলাই।দুই আপিলের রায়েই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল থাকে। তাদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় একই দিনে, ৩০ সেপ্টেম্বর।এরপর নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল দুজনের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুজাহিদকে এবং গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে থাকা সালাউদ্দিন কাদেরকে সেই মৃত্যু পরোয়ানা ১ অক্টোবর পড়ে শোনানো হয়।দণ্ড কার্যকরের আগে দুই যুদ্ধাপরাধীর শেষ আইনি সুযোগ এই রিভিউ আবেদন। এ আবেদনে রায়ের কোনো পরিবর্তন না হলে তাদের শেষ সুযোগ থাকবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার।এর আগে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন একদিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাননি, পরে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, রিভিউ নিষ্পত্তির আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না। রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করবে।সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদ রিভিউ আবেদন দায়েরের পর রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য গত ১৫ অক্টোবর আবেদন করে।এরপর সালাউদ্দিন কাদের রিভিউ শুনানিতে পাঁচ পাকিস্তানিসহ আটজনের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য ১৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন, যাতে আদালতে এসে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ওই আটজনের নামে সমন জারির আরজি জানানো হয়।
২০ অক্টোবর এসব আবেদন অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওঠে, আদালত রিভিউসহ এ আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়।পরে মুজাহিদের রিভিউ শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে কনিষ্ঠ দুই আইনজীবী যাতে নির্বিঘ্নে সহায়তা করতে পারেন, সে নির্দেশনা চেয়ে ২৫ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করা হয়।দুটি মামলায়ই প্রধান আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহায়তা করতে যে আইনজীবী দল রয়েছে, তাতে শিশির মনির ও আসাদ উদ্দিন সদস্য রয়েছেন।আসামির আইনজীবীদের অভিযোগ, ওই দুই আইনজীবীকে শুনানি থেকে বিরত রাখতে সরকার হয়রানি করছে। তাদের জন্যই আবেদন দুটি করা হয়।