02-11-15-PM_Public Meeting-5

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২ নভেম্বর ২০১৫: রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে খালেদা জিয়া এখন বিদেশে গিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন।তিনি বিদেশি,লেখক,প্রকাশক,আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর গুপ্ত হত্যা চালাচ্ছেন। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এমন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন তিনি।সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই জনসভার শুরুতেই পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের উল্টোযাত্রার বিষয়টি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে সেই জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯৩ দিন নিজেই নিজের অফিসেই বিএনপি অফিসে বসে থেকে বললেন, সরকার উৎখাত না করে নাকি ঘরে ফিরবেন না। তাঁর আন্দোলন কী? মানুষ পুড়িয়ে মারা, মানুষ খুন করা, মানুষ হত্যা করা? ছোট্ট শিশু, দুধের শিশু, সেও রেহাই পায়নি। কলেজের ছাত্রী, সেও রেহাই পাইনি। বাসের ড্রাইভার, হেলপার, সাধারণ মানুষ—তারা রেহাই পায়নি।

শেখ হাসিনা বলেন,আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করার মতো বীভৎস ঘটনা সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘটিয়েছে। এরপর ঘটালেন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। যখন বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর এ মানুষ খুন করার রাজনীতি প্রতিহত করল, এখন কিন্তু তিনি অবরোধ প্রত্যাহার করেননি, তাঁর অবরোধ চলছেই। কিন্তু মানুষ সাড়া দেয়নি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে মানুষ হত্যা করে যখন পারলেন না, তখন তিনি নিজেই নাকে খত দিয়ে বের হলেন, মামলায় কোর্টে হাজির হলেন। নিজের ঘরে ফিরে গেলেন। রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে এরপর তিনি গেছেন এখন বিদেশে। আর বিদেশে গিয়ে এখন ষড়যন্ত্র কি, এ দেশে বিদেশিদের হত্যা করতে হবে, তাহলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এখন তিনি গুপ্তহত্যায় নেমেছেন। এ গুপ্ত হত্যায় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী, এমনকি লেখক, প্রকাশক, বিদেশি সবার ওপর গুপ্ত হত্যা। খুনিদের পরিচয় কী? যারা ধরা পড়ছে, দেখা যাচ্ছে তারা ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির অথবা বিএনপি-ছাত্রদল করত। অর্থাৎ, দেশে না পেরে এখন বিদেশে বসে দেশে গুপ্তহত্যা শুরু করেছেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে। শেখ হাসিনা বলেন, কোনো কোনো মহল প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, এ দেশে আইএস আছে, এ দেশে সন্ত্রাস আছে। এ দেশে সন্ত্রাসী সৃষ্টি করেছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই সন্ত্রাস কঠোর হস্তে দমন করেছে। কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে তাকে রেহাই দেওয়া হয় না। তার বিরুদ্ধে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং ব্যবস্থা নেব, সে যে দলেরই হোক না কেন।

সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্য খালেদা জিয়াকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের উদ্দেশ্যে বিদেশে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলের সমালোচনার পর তাদের এবারের আন্দোলনের প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, তাতে ব্যর্থ হয়ে এখন খালেদা জিয়া দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।তিনি বলেন, এদেশের মানুষকে নিয়ে বারবার ষড়যন্ত্রের খেলা হয়েছে। কোনো কোনো মহল বলছে, আইএস আছে, জেএমবি আছে। যখন আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি, রায় কার্যকর হচ্ছে, তখন এই খুনিদের রক্ষার করার জন্যই এই গুপ্তহত্যা।যখনই দেশের মানুষ স্বস্তিতে তখনই এই হত্যাকাণ্ড, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এই হত্যাকাণ্ড।

এই গুপ্তহত্যার পেছনে বিএনপি-জামায়াতের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাকেই ধরা হয়, তারা শিবিরের অথবা বিএনপির লোক।যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনে বিএনপিকে দায়ী করে তিনি বলেন, আমাদের লাখো শহীদের রক্তে রাঙা পতাকা তাদের (যুদ্ধাপরাধী) হাতে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আজ যারা সাজাপ্রাপ্ত তারা তাদের কেবিনেটে বসিয়েছিল।এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, গুপ্তহত্যা যারা করছে, তাদের কিছুকে খুঁজে বের করা হয়েছে। আরও হবে। তাদের লিংক কোথায়, বড় ভাই কোথায়, তা বের করে এই বাংলার মাটিতে শাস্তি দেওয়া হবে।খুনিদের শাস্তি দেবই দেব, আমি শুধু বাংলাদেশের মানুষের সহযোগিতা চাই।পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুনের রাজত্ব কায়েম করে দেশকে ভিন্ন পথে নেওয়ার চেষ্টার জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন শেখ হাসিনা।জিয়াউর রহমান খুনিদের রাজত্ব কায়েম করেছিল, মন্তব্য করে শেখ হাসিনা ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলের কথা তুলে ধরেন।খুনের রাজত্ব কায়েম করে দেশকে ভিন্ন পথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। খালেদা জিয়া একটা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র তৈরি করেছিল। জিয়াউর রহমানের পথ ধরে তার স্ত্রী খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল।

দেশের মানুষ অশিক্ষিত থাকবে, দরিদ্র থাকবে, ধুঁকে ধুঁকে মরবে এটাই তিনি চান। গুপ্তহত্যা করুক আর যাই করুক এদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না,বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, বাবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে বলেন শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শুরুতেই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনাবলি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মোশতাক আহমেদের পর জিয়াউর রহমান খুনিদের পুনর্বাসিত করেছিলেন।খুনিদের বিচার করা হয়নি, বরং বিভিন্নভাবে খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে বিচারের পথ বন্ধ করা হয়েছিল।জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং আশপাশের জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা বাস-ট্রাকে করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে থাকে।ক্ষমতাসীন দলের জনসভা ঘিরে উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে হত্যার পর গ্রেপ্তার করা হয় মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষ চার সংগঠক তাজউদ্দীন আহমদ,সৈয়দ নজরুল ইসলাম,এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে।একই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় এই চার নেতাকে। এরপর থেকে জাতীয় কলঙ্কময় এই দিনটি ‘জেল হত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।