দৈনিকবার্তা-ময়মনসিংহ, ০১ নভেম্বর ২০১৫: মানবজাতির নানা রোগের প্রকোপ থেকে রৰা করে এবং পরিবেশ সংরক্ষণকারী প্রাণিদের মধ্যে অন্যতমএকটি প্রাণী শকুন৷ এ প্রাণী শুধু মৃত পশুপাখি খেয়ে পরিবেশ দূষণ কমায় না পাশাপশি অ্যানথ্রাঙ্সহ বিভিন্ন রোগজীবাণু ছড়ানোর হাত থেকেও পরিবেশকে রক্ষা করে৷ পৃথিবীতে ২৩ প্রজাতির শুকুন রয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশে দেখা যায় ৭ প্রজাতির শকুন৷ কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে এ প্রাণিটি বিলুপ্তপ্রায়৷ ভারতে বর্তমানে ১০,০০০ এর অধীক শকুন বসবাস করলেও বাংলাদেশে বর্তমানে মাত্র ২৫০টি শকুন সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে৷ গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ভেটেরিনারী অনুষদে এক সেমিনারে এসব তথ্য জানিয়েছেন গবেষকরা৷
উপস্থিত গবেষকগণ আরও জানান এ বিলুপ্তির পেছনে প্রধানত দায়ী হচ্ছে গবাদিপশুর ব্যথানাশক ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ঔষধের কথা উলেস্নখ করলেও বাকৃবির ভেটেরিনারী অনুষদের একাধীক প্রবীণ শিক্ষক দ্বিমত পোষণ করে বক্তব্য রাখেন৷ ২০১০ সালে গবাদিপশুর চিকিত্সায় ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ঔষধের ব্যবহার সরকার নিষিদ্ধ করলেও প্রায় ৬৮ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে বলেও জানান তারা৷ একই সাথে শকুনের জন্য ক্ষতিকর কিটোপ্রোপিন ঔষধের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবিও জানিয়েছেন আয়োজকগণ৷ শকুনের বিলুপ্তি ঠেকাতে নেয়া বিভিন্ন পদৰেপের কথা উলেস্নখ করেন গবেষকগণ বলেন সিলেট,ঢাকা ও চট্রগ্রাম বিবাগের ১৯৬৬৩ বর্গ কিলো মিটার ও খুলনা, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের ২৭৭১৭ বর্গ কিলো মিটার এলাকা শকুনের জন্য অভয়ারণ্য-নিরাপদ বসবাসের এলাকা করা হয়েছে৷ শকুনের প্রজনন বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ ইতোমধ্যে বাচ্চা ফুটানোসহ নিরাপদ আবাসব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ তাই আয়োজকগণ আশা প্রকাশ করে বলেন ‘বাংলার আকাশে আবার দেখা যাবে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণি শকুন’৷ আয়োজকগণ শকুনকে বাঁচিয়ে রেখে একটি সুস্থ্য ও নির্মল পরিবেশ নিশ্চিত করার আহবান জানান৷
বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক আনত্মর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার’ (আইইউসিএন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারী অনুষদের মেডিসিন বিভাগের গ্যালারীতে সেমিনারের আয়োজন করা হয়৷ ভেটেরিনারী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সামাদের সভাপতিত্বে এবং বাকৃবির সার্জারি ও অবস্ট্রেট্রিঙ্ বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ রফিকুল আলম এর ব্যবস্থাপনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর৷ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের পাখি গবেষণা প্রকল্পের প্রধান এনাম উল হক ,আইইউসিএন এর বাংলাদেশ অফিসের প্রকল্প পরিচালক ড. হাসিব মো. ইরফানুলস্নাহ, ময়মনসিংহ জেলা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোবিন্দ রায়, সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইউসিএন এর বাংলাদেশে শকুন রক্ষা বিষয়ক প্রকল্পের প্রধান গবেষক এ.বি.এম. সরোয়ার আলম এবং বাকৃবির সার্জারি ও অবস্ট্রেট্রিঙ্ বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ রফিকুল আলম৷সেমিনারে বাকৃবির শিক্ষক-শিক্ষাথর্ী এবং আমন্ত্রিত তিনশতাধিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন৷