দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০১ নভেম্বর ২০১৫: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নিয়ে সৃষ্ট বৈষম্যের সমাধান চলতি সপ্তাহের মধ্যেই হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, পে- স্কেলের সংশোধনী প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। রোববার দুপুরে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। দুপুর দেড়টার দিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়। সাড়ে ৩টার দিকে বৈঠক শেষ হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, কারো কোনো সুযোগ-সুবিধা কমানো হয়নি। সবার সুযোগ-সুবিধা সমান রেখেই এই সপ্তাহের মধ্যেই আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে সংশোধিত পে-স্কেলের সুপারিশ পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এরপরে মন্ত্রিসভা এটিকে অনুমোদন করবে।অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা সবার অভিমত নিয়ে বেতন কাঠামোর যে বৈষম্য রয়েছে তার ইতিবাচক সমাধান চাই। এটি কালকেই হয়ে যাবে না। এরজন্য এই সপ্তাহ সময় লাগবে।সরকারি চাকুরেদেরে বেতন কাঠামো থেকে টাইম স্কেল ও সিলকশন গ্রেড বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধুমাত্র শিক্ষা ক্যাডারের ক্ষেত্রে ভেবে দেখা যেতে পারে। তবে অন্য ক্ষেত্রে এটি ফিরিযে আনার কোনো সুযোগ নেই।অষ্টম বেতন কাঠামো নিয়ে আপত্তি যারা আপত্তি জানিয়ে আসছেন, তাদের আশ্বস্ত করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, কারও সুযোগ না কমাতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।মন্ত্রিপরিষদ কয়েক মাস আগে অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদনের পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্যে এই মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করা হয়।
সাতজন মন্ত্রী এবং পাঁচ সচিবকে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠকের পর মুহিত বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সব সময়ই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং আজকের সভার আগেও তার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখান (প্রধানমন্ত্রী) থেকেও ওই নির্দেশনা এসেছে, কারও সুযোগ কমানো যাবে না। যার যা ছিল, সেটা প্রটেক্ট করে যদি আরও কিছু ভালো করা যায়, সেটা করার নির্দেশ এসেছে।কারও সুযোগ-সুবিধা কমানোর কোনো উদ্দেশ্য সরকারের নেই বলে অর্থমন্ত্রী জানান।এই স্কেল যারা এতদিন পেয়ে আসছেন বিভিন্ন ক্যাডারের লোকজন, তাদের সুযোগ কমানোর কোনো উদ্দেশ্য নেই। কমিশনের নির্দেশেও সেটা ছিল না, মন্ত্রিসভার নির্দেশেও সেটা ছিল না, যে আইন ( গেজেট) করা হচ্ছে, সেখানেও নেই।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তারা টাইম স্কেল বাতিল এবং গ্রেডে মর্যাদাহানির অভিযোগ জানিয়ে আসছে।অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ কয়েক দিন ধরে পাচ্ছি তার মধ্যে প্রকৃচি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বিসিএস শিক্ষক সমিতি, ২৬ ক্যাডার সমিতির।এসব প্রতিষ্ঠান বেতনভাতা সম্বন্ধে অনেক আপত্তি তুলেছে, অনেক দাবি-দাওয়া পেশ করেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে দেখা করেছেন। যেসব বিষয় উঠছে সেসব বিষয়ে সকলের অভিমত হল এসব বিষয়ের পজিটিভ সমাধান চাই।এসময় পজিটিভ এর বাংলা অর্থ খোঁজ করতে থাকেন অর্থমন্ত্রী। সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত অনেকেই বলেন, এর বাংলা ইতিবাচক।তখন মুহিত বলেন, ইতিবাচক অত শক্ত লাগে না, তাই পজিটিভ শব্দটাই ব্যবহার করলাম। তবে কালকেই এটা পাবেন সেটা আশা করবেন না। আরও দুই-তিন দিন লাগবে। আমরা খেলাম, হজম করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিসিএস শিক্ষক সমিতি তাদের সুযোগ-সুবিধা কমে গেছে বলে যে ধারণা করছেন, তা ঠিক নয় বলে পুনর্বার মন্তব্য করেন তিনি।
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে এই ধারণা হয়েছে উল্লেখ করে মুহিত বলেন, তারা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ফলো করেই উপরে উঠেন।টাইম স্কেল আনব না। সেখানে দিয়ে দেব এত বছর যখন চাকরি হবে তখন আপনি অটোমেটিকৃ। কেউ ১০ বছর এক গ্রেডে চাকরি করলে ১১ বছরে সে পরের গ্রেডে যাবে। যদি সে আরও ছয় বছর চাকরিতে থাকে তবে পরের গ্রেডে যাবে। এটাই সকলের সুযোগ বৃদ্ধির শ্রেষ্ঠ উপায়।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য আছে স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ রকম বেতন বৈষম্য আমরা রাখতে চাই না। যেভাবেই হোক একটা ব্যবস্থা হবে। ছোট ছোট কিছূ ইস্যু আছে, সেগুলো করতে দুই তিন দিন সময় লাগবে।আমরা আশা করছি, যে এই সপ্তাহে নির্দেশনা (বেতন কমিশনের গেজেট) আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগবে।
মুহিত বলেন, অষ্টম বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর নতুন যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা বাস্তবায়িত হবে। এর আগ পর্যন্ত যা কিছু হচ্ছে সবই আগের নিয়মে হচ্ছে।আমাদেরটা ( গেজেট) যেদিন জারি হবে সেদিন থেকেই এটা কার্যকর হবে এবং এর আগে যেসব হয়ে গেছে সেটা কোনো কিছুই নাকচ করছি না।অর্থমন্ত্রী বলেন, আজকের আলোচনায় সব থেকে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে বেতনভাতা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছি, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে এ রকম আর কোনো কমিশন হবে না, এটা প্রতি বছর।আমরা মনে করি এখন যে স্কেল আমরা দিচ্ছি সেটা অত্যন্ত ভালো স্কেল যেখানে এরমধ্যেই প্রত্যেকে সুখে-শান্তি তে নিজের জীবন নির্বাহ করতে পারবেন।অর্থমন্ত্রী জানান, প্রত্যেক ক্যাডারই যেন গ্রেড-১ এ যায় ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আগে ৬-৭ ক্যাডার গ্রেড-১ এ যেতে পারত। আর বেশির ভাই কর্মকর্তার চাকরি শেষ হত গ্রেড-২ তে। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী কথা বললেও সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ দেননি।শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বৈঠকে অংশ নেন।মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ছাড়াও মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য অন্য সচিবরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।