জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপন

দৈনিকবার্তা-গোপালগঞ্জ, ৩১ অক্টোবর ২০১৫: জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে শনিবার কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে তাঁর কার্যালয়ে ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে রেখে বাইরে দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে যায়।নিহত ফয়সালের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবুল কাশেম ফজলুল হক সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ ফয়সাল বাসায় তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। পরে তিনি শাহবাগে তাঁর প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানে যান। খোঁজ নেওয়ার জন্য তিনি কয়েকবার ছেলেকে ফোন করেন। কিন্তু ছেলে ফোন ধরেননি। বিকেল চারটার দিকে তিনি আজিজ সুপার মার্কেটের তিন তলায় ১৩১ নম্বর রুমের সামনে যান। এটি তাঁর ছেলের কার্যালয়।নিহতের বাবা আরও বলেন, ওই সময় তিনি কার্যালয়টি ভেতর থেকে বন্ধ অবস্থায় দেখেন। তবে কার্যালয়ের কাচের দরজা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল, ভেতরে আলো জ্বলছে। তখন তিনি ছেলে বাইরে গেছে ভেবে সেখান থেকে চলে যান।পরে ছেলের বউকে ফোন করলে জানতে পারেন, লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এই কথা শুনে তিনি লোকজন নিয়ে ছেলের কার্যালয়ে গিয়ে দরজা ভেঙে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর ছেলে পড়ে আছে।

ওই অবস্থায় ফয়সাল আরেফিনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে হাসপাতালের আবাসিক সার্জন রিয়াজ মোর্শেদ তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রাজধানীর লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে প্রকাশকসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করার কয়েক ঘণ্টার মাথায় অভিজিত রায়ের বইয়ের আরেক ড্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করলো সন্ত্রাসীরা।ব্লগার মাহমুদুল হক মুন্সী বাঁধন বলেন, আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় দীপনের উপর ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা হয়।গত ফেব্র“য়ারিতে টিএসসিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বিজ্ঞান লেখক অভিজিত রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি প্রকাশ করেছিল জাগৃতি প্রকাশনী।এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে লালমাটিয়ায় ডকাশনী সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা।

টুটুলের সঙ্গে থাকা ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসুকেও কোপানো হয়। টুটুল ও রহিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তাদের ধারালো অস্ত্রের কোপে ও গুলিতে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা ঢাকামেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।আহত অন্য দুজন হলেন তারেক রহিম ও রণদীপম বসু। কতিপয় দুর্বৃত্ত বেলা আড়াইটার দিকে লালমাটিয়ার সি ব্লকে পাঁচতলা একটি ভবনের চারতলায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এ হামলা চালায়। এ সময় তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে কার্যালয়ের বাইরে তালা লাগিয়ে চলে যায়। পরে খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এদিকে, অস্ত্রোপচারের পর ঢাকা মেডিকেলের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের সার্জন কে এম রিয়াজ বিকাল ৫টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, টুটুল ও তারেকের অবস্থা ক্রিটিকাল। রণদীপম আশঙ্কামুক্ত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি সূত্র প্রাথমিকভাবে জানায়, তারেক রহিমের বুকের বাম দিকে গুলি লেগেছে। এ ছাড়া তাঁর মাথা ও হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত করা হয়েছে। আহমেদুরের মাথা ও হাতে এবং রণদীপম বসুর হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, দুপুর আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটে। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ খবর পেয়ে ওই কার্যালয়ের তালা ভেঙে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।ঢাকা মেডিকেল থেকে মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুন বলেন, আহত অবস্থায় আমি দুজনকে নিয়ে এসেছি। তাঁদের হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে।অভিজিৎ রায়ের অবিশ্বাসের দর্শন’সহ কয়েকটি বই বের করেছে শুদ্ধস্বর। নিহত দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, আমরা দুপুরে টেলিভিশনে শুদ্ধস্বরের প্রকাশকের উপর হামলার খবর পেয়ে দীপনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারছিলাম নরা। পরে সাড়ে ৫টার দিকে ওর স্ত্রীসহ আমরা এসে দেখি রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে আছে।তিনি আরও বলেন, অভিজিতের বই জাগৃতি থেকে প্রকাশ হয়েছে। এ কারণে হুমকি ছিলো। উগ্র মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।জাগৃতি প্রকাশনীর ম্যানেজার আলাউদ্দিন জানান, তার গলার পেছনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে।শুদ্ধস্বরের মতো জাগৃতিও মুক্তমনা লেখকদের বই প্রকাশ করতো।