file

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ অক্টোবর ২০১৫: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে অর্থায়নই বাংলাদেশের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। দাতাদের কাছ থেকে আলাদা কোনো প্রতিশ্র“তি না থাকায় অভ্যন্তরীণ খাত থেকেই অর্থ সংগ্রহে বেশি জোর দিতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, টাকা পাচার বন্ধ করা, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা; পাইপলাইনে থাকা বিদেশি সহায়তা ব্যবহার করে এসডিজি বাস্তবায়নে টাকার জোগান দেওয়া সম্ভব হবে।শনিবার এসডিজি বাস্তবায়ন নিয়ে এক সংলাপের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এ কথা বলা হয়েছে। রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।এ ছাড়া এ উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে শিগগিরই নাগরিক ফোরাম গঠন করবে সিপিডি। এসডিজি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর জোর দিয়েছে সিপিডি।

সংলাপে সভাপতিত্বকারী বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদ বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন সহজ কাজ নয়, তাই একে হালকাভাবে দেখলে হবে না। তিনি এসডিজি সংক্রান্ত বিষয়গুলো মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন। তাঁর মতে, এতে শিক্ষার্থীরা এসডিজি সম্পর্কে জানতে পারবে। এক ধরনের পর্যবেক্ষণও তৈরি হবে।অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সপ্তম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনায় এসডিজির অনেক বিষয় আসেনি। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এসডিজি লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের কয়েকটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারব। পরবর্তী এসডিজিতে বাকি ইস্যুগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে।এসডিজি বাস্তবায়নে সম্পদ সংগ্রহের উপায়ও বলেছে সিপিডি। সিপিডি বলছে, বর্তমানে রাজস্বের পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১২ দশমিক ১ শতাংশ। একে ১৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২২ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৮-২৯ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এ ছাড়া প্রতি বছর গড়ে জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ টাকা পাচার হয়, যা বন্ধ করার পরামর্শ দেয় সিপিডি। পাইপলাইনে পড়ে থাকা ১৫-২০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর বিদেশি বিনিয়োগ হতে হবে জিডিপির ৩-৪ শতাংশ, বর্তমানে রয়েছে দশমিক ৯ শতাংশ।দেশের শতভাগ মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে বলে দাবি করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, ৯৯ শতাংশ মানুষ স্যানিটেশনের আওতায় এসেছে। শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ মানবসম্পদের উন্নয়ন হচ্ছে।

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের সব ধরনের সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে বলে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, আমরা ভালো করে কো-অর্ডিনেন্স করতে পারি না, সুশাসনের অভাব আছে, এজন্যে আপনারা বলেছেন এসডিজি বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। আমি বলছি, আমাদের এগুলো সব আছে, সেই সঙ্গে এসডিজি অর্জনের সব ধরনের সক্ষমতাও আমাদের আছে।

মন্ত্রী বলেন, ‘সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যের (এমডিজি) থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে তিনগুণ বেশি অর্থ লাগবে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ দিয়ে এসডিজি অর্জন করতে হবে। সেই লক্ষ্যে সরকারি ব্যয় দ্বিগুন বৃদ্ধি করতে হবে। ২০০৯ সালে আমরা রাজস্ব আহরণ করেছিলাম ৫৬ হাজার কোটি টাকা অথচ গত বছরে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৬ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করেছি।’শিক্ষাখাতের বরাদ্দ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, অনেকে বলেন শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কম কথাটা ঠিক নয়। শিক্ষাখাতে প্রত্যক্ষভাবে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ দিচ্ছি। কিন্তু পরোক্ষভাবে শিক্ষাখাতে আরো বরাদ্দ দেয়া হয়। যেমন প্রতিটি প্রকল্পেই শিক্ষা সংক্রান্ত নানা অঙ্গ প্রকল্প থাকে। সেমিনারে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, এসডিজি সিটিজেন এজেন্ডা, তাই এই বিষয়টি পাঠ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করলে ভালো হয়। প্রাথমিকভাবে নবম ও দশম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর ফল পাওয়া গেলে মাধ্যমিকের সকল পর্যায়ে এসডিজি অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। এসডিজি বাস্তবায়নে সুশাসনের উপর গুরুত্ব দিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইদুর রহমান বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের মূল পয়েন্ট হচ্ছে সুশাসন। সেই সঙ্গে মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মকাণ্ডকে সম্বনয় করা। এছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্বনয় করাও দরকার। তাহলে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি অর্জনে আমাদের এমডিজির মতো সাফল্য আসবে।ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এসডিজি অর্জন করা সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জিং তবে এসডিজির বাস্তবায়নে সরকারের ১৫ বছরের লক্ষ্য পরিষ্কার। ইতোমধ্যে ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।তিনি বলেন, এসডিজি অর্জন করতে হলে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধিসহ এসডিজি অর্জনে আমাদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।১০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন আমাদের জন্য কঠিন নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, এজন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ১০ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা থাকা উচিৎ ছিল। বিভিন্ন দুযোর্গ ও অন্যান্য কারণে বাধাপ্রাপ্ত হলেও ৮ ভাগ অর্জন সম্ভব হত। সেমিনারে অন্য বক্তরা বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এসডিজি বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হতে পারে। এর মাধ্যমে আমরা এসডিজি অর্জনের পথ ধরতে পারি। এর জন্য জাতীয় সংস্থাগুলোর দক্ষতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ফলাফলের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। এসডিজি অর্জনে সিভিল সোসাইটি ভূমিকা রাখতে পারে।