28-10-15-PM-5

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ অক্টোবর ২০১৫: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,দেশে কোন অস্থিরতা সৃষ্টি করে তাঁর সরকারের নেয়া উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থবির করে দেয়া যাবে না।প্রধানমন্ত্রী বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে পদ্মা (জশলদিয়া) পানি শোধনাগার প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) উদ্বোধনকালে বলেন, কয়েকটা বোমা মেরে ও ঢিল ছুঁড়ে উন্নয়নের গতি রোধ করা যাবে না।তিনি বলেন, স্বার্থান্বেষী একটি মহল আমাদের উন্নয়ন কর্মকান্ড ও দেশের অগ্রগতি পছন্দ করে না। জনগণ যখন সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে তখন তারা উন্নয়নের প্রয়াস নস্যাতের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্রকে দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের দুঃসহ ভোগান্তির কারণে যাত্রীদের স্বস্তির জন্য ক্রয়কৃত অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি বাস তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে তারা এখন পরিকল্পিতভাবে বিদেশী নাগরিক হত্যায় নেমেছে এবং স্থানীয় লোকজনকে খুন করে দেশকে পঙ্গু করার ব্যর্থ তৎপরতা চালাচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর হোতাদের সম্পর্কে মানুষ এখন সম্পূর্ণ অবগত রয়েছেন।স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেইনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান।এতে চীনের রাষ্ট্রদূত ম্যা মিংকিয়াং, প্রকল্পটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চীনের সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান লু ইয়ান ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এ মালেক অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার শহর ও গ্রামের উন্নয়নে সমতা বিধানের পাশাপাশি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যও হ্রাস করেছে এবং এটি হচ্ছে দেশের চলমান উন্নয়নের মূল ভিত্তি।তিনি বলেন, তাঁর সরকার কোন অন্যায়ের প্রশ্রয় দেয়নি এবং ভবিষ্যতেও দেবে না।সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে তাদের কোন স্থান নেই।এক্ষেত্রে তিনি সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের কাক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে অশুভ শক্তির প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে সরকারের প্রত্যেক মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।

চীনের আর্থিক সহায়তায় ৩ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মুুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার যশলদিয়ায় পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) নির্মিত হবে। এখানে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহের জন্য প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রকল্প সমাপ্ত হবে।ওয়াসা সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীর মিটফোর্ড, নবাবপুর, লালবাগ, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও সংলগ্ন এলাকায় পানির চাহিদা মেটাতে এই পানি সরবরাহ করা হবে।সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাবে এবং ঢাকা মহানগরীতে একটি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। নগরীর পানি সংকট নিরসনে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর সায়েদাবাদ পানি শোধন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) নির্মাণ করা হয়। তাঁর সরকার প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও, বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে তা বাতিল হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সায়েদাবাদ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। এতে ওয়াসার উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় ২৪২ কোটি লিটার। তখন মহানগরীতে পানির দৈনিক চাহিদা ছিলো ২২০ থেকে ২২৫ কোটি লিটার। এর আগে মহানগরীতে পানির চাহিদা ছিল ২১২ কোটি লিটার। তখন ১৮৮ কোটি লিটার উৎপাদিত হতো বলে রাজধানীতে তীব্র পানি সংকট ছিলো।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরো তিনটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণের অপেক্ষায় রয়েছে। নগরীর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ধলপুর (সায়েদাবাদ ৩য় পর্যায়), নারায়ণগঞ্জের চর গন্ধপপুর এবং সাভারের তেতুলঝরায় এসব প্লান্ট নির্মিত হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে ঢাকা মহানগরীর ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা ৮০ ভাগ কমবে এবং পরিবেশগত দিক থেকে ঢাকা শহর আরো নিরাপদ ও টেকসই হবে। বর্তমানে ওয়াসার ৭২ শতাংশ সরবরাহ আসে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে।

শেখ হাসিনা বলেন,তাঁর সরকার ঢাকা মহানগরীর জন্য পানি সরবরাহ মাস্টার প্লান এবং স্যুয়ারেজ মাস্টার প্লান সম্পন্ন করেছে এবং ড্রেনেজ মাস্টার প্লান অচিরেই সম্পন্ন হবে।পানি ব্যবহারে জনগণকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বায়ত্বশাসিত, বাণিজ্যিক ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াসাকে অবশ্যই টেকসই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনগণ পানির অপচয় রোধে অবশ্যই সতর্ক হবেন এবং ওয়াসা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সিস্টেম লস কমিয়ে আনার ব্যাপারে অবশ্যই আরো সতর্ক হবেন।বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকা মহানগরীর চারপাশের নদীগুলো দূষণ মুক্ত করতে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীর দূষণ যদি বন্ধ করা যায়, তাহলে রাজধানীর পরিবেশ আরো উন্নত হবে।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গার কাদা-আবর্জনা সরাতে আরো পদক্ষেপ নিতে এবং নদীতে শিল্পবর্জ্য নিষ্কাশন বন্ধ করতে হবে।পরে প্রধানমন্ত্রী প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল থেকে মোবাইল এ্যাপস ব্যবহার করে মুন্সিগঞ্জে পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন।তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।