দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ অক্টোবর ২০১৫: মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর আনা আপিল মামলার শুনানির জন্য আগামী ৩ নভেম্বর দিন ধার্য রয়েছে।বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে গত ৯ সেপ্টেম্বর এ আপিল মামলার শুনানি শুরু হয়। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। শুনানি শুরুতে মামলার পেপারবুক থেকে নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ উপস্থাপন করা হয়। এরপর নিজামীর বিরুদ্ধে আনা প্রথম অভিযোগের পক্ষে তিন সাক্ষীর বক্তব্য পেপারবুক থেকে উপস্থাপন করা হয়।
নিজামীর আপিল মামলার শুনানিতে ৩ নভেম্বর থেকে যথারীতি এ মামলার পেপার বুক উপস্থাপন শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান। নিজামীকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর আপিল দায়ের করেন তিনি। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, ট্রাইব্যুনাল নিজামীর সর্বোচ্চ সাজার যে রায় দিয়েছে, তাতে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট। আসামির আপিল শুনানির বিপরিতে যুক্তি পেশ করবে রাষ্ট্রপক্ষ। ট্রাইব্যুনালে দেয়া দন্ডের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করে তা বহাল রাখতে আর্জি পেশ করা হবে।ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি ষষ্ঠ মামলা, যার চূড়ান্ত শুনানি শুরু হল। এর আগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আরো ৫টি মামলা আপিলে নিষ্পত্তি হয়েছে।
এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে আপিল বিভাগের দেয়া চুড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার জন্য (রিভিউ) আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আনা আবেদনের ওপর আগামী ২ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার জজ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানির দিন ধার্য করে গত ২০ অক্টোবর এ আদেশ দেয়। মৃত্যুদন্ড দিয়ে আপিল বিভাগের দেয়া চূড়ান্ত রায় রিভিউর জন্য জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী গত ১৪ অক্টোবর আবেদন দাখিল করেন।
আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদনের সুযোগ রয়েছে। সে অনুযায়ী আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন দাখিল করে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল নিষ্পত্তি করে গত ১৬ জুন মুজাহিদের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে রায় দেয়া হয়। সাকা চৌধুরীর আনা আপিল নিষ্পত্তি করে ট্রাইব্যুনালে দেয়া তার মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে গত ২৯ জুলাই রায় দেয়া হয়। আপিল বিভাগ গত ৩০ সেপ্টেম্বর মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ করে। এর পরদিন এ দুই আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ পরোয়ানা কারাগারে আসামিদের অবহিতকরনসহ সংশ্লিষ্ট জায়গায় প্রেরণ করা হয়।
আপিলের প্রথম রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তির পর ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয় আপিল বিভাগ। এর রায় রিভিউ’র আবেদনও খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। এরপর ওই বছর ১২ডিসেম্বর কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। আপিলের দ্বিতীয় রায়ে গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ট্রাইব্যুনালে দেয়া সাজা মৃত্যুদন্ড থেকে কমিয়ে তাকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয় আপিল বিভাগ। এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এখনো প্রকাশিত হয়নি। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে তার মৃত্যুদন্ডের রায় পুনর্বহালের আরজি জানিয়ে রিভিউ আবেদন করা হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে এ পর্যন্ত পাঁচটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে সাঈদী ছাড়া বাকী চারটি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে অচিরেই দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মাহবুবে আলম।
আপিলের তৃতীয় রায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালে দেয়া ফাঁসির দন্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। ফাঁসির দন্ড বহাল রাখার রায়ের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামানের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনও খারিজ করে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ১১ এপ্রিল শনিবার রাতে এ ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ট্রাইব্যুনালে দন্ডিতদের মধ্যে কামারুজ্জামান হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি যার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হলো।এ ছাড়াও আপিলে আরো ৭টি মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এসব মামলার আসামিরা হলেন- জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম, জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুস সুবহান, সাবেক এমপি পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার, মাহিদুর রহমান।