দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ অক্টোবর ২০১৫: দেশকে অস্থিতিশীল ও সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে রাখতে ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেলা হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিঞা৷ সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশ ডিএমপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি৷কমিশনার বলেন, এ চার জনকে হত্যাকাণ্ডের জন্য কোনো একটি মহল ভাড়া করেছিল পৃথক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে তারা এ ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করেছে তারা৷ এদিকে, ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটদিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত৷সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান পুলিশের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে এ আদেশ দেন৷
এই তিনজন হলেন- রাসেল চৌধুরী ওরফে চাকতি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগ্নে রাসেল ওরফে কালা রাসেল এবং শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরীফ৷পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী কমিশনার মিরাশ উদ্দিন জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জিহাদ হোসেন ওই তিনজনকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত চান৷বিচারক শুনানি শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আটদিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার অনুমতি দেন৷, বলেন তিনি৷ গ্রেপ্তারদের মধ্যে তামজিদ আহম্মেদ রুবেল ওরফে শুটার রুবেল হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ায় তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়নি বলে মিরাশ উদ্দিন জানান৷গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের সড়কে তাভেল্লাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা পালিয়ে যায় মোটর সাইকেল আরোহী দুবর্ৃত্তরা৷ আইসিসিও কো-অপারেশন নামে একটি সংস্থার প্রুফ (প্রফিটেবল অপরচু্যনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন ইতালির এই নাগরিক, ঢাকায় তিনি একাই থাকতেন৷এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে রোববার ওই চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ করে পুলিশ৷পুলিশ বলছে, সরকারকে চাপে ফেলার জন্য বাংলাদেশে বিদেশিরা নিরাপদ নয় বোঝাতে কোনো একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লাকে খুন করা হয়৷ কথিত এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে নির্দিষ্ট টাকার চুক্তিতে দুই রাসেল ও রুবেল এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় এবং এ কাজে তারা শরীফের মোটরসাইকেল ব্যবহার করে বলে পুলিশের দাবি৷
কথিত এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে ইতালিয়ান নাগরিক তাভেল্লা সিজারকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া৷তিনি জানান, আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে একজন কথিত বড় ভাইয়ের নির্দেশে এ খুন করা হয়েছে এমন কথা স্বীকার করেছেন৷ তারা (আটককৃতরা) বড়ভাইয়ের নামও বলেছেন৷ তদন্ত করে এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত হওয়া গেছে৷ তিনি বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চান, যারা জানুয়ারিতে টানা ৯২ দিন অবরোধ দিয়েছে৷ কিছুদিন আগে যারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন৷ তাদের সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অনুমান নির্ভর হয়ে কোনো কথা বলছি না৷ তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুনিশ্চিত হয়েছি৷ এখন এই কথিত বড় ভাইকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷ এই বড় ভাইকে গ্রেপ্তার করতে পারলে ঘটনার মাস্টারমাইন্ড (মূলহোতা) কে বা কারা আছেন তা জানা যাবে৷
এসময় তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডে আইএসের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, সাইট (ঝওঞঊ) নামে একটা বিদেশি ওয়েবসাইট থেকে বারবার বলা হচ্ছে বিদেশি হত্যাকাণ্ডের জন্য আইএস দায়ী৷ কিন্তু আইএসের কোনো ওয়েবসাইটেই তাদের সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া যায়নি৷ আমরা তাদের সব সাইট সার্চ করেছি৷ তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে কে আইএসের সংশ্লিষ্ঠতা প্রমাণ করতে চাইছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷এর আগে রোববার রাতে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন তিন খুনিসহ চারজনকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ৷ এসময় তাদের কাছে থাকা একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়৷
এ সময় তাবেলা হত্যায় ব্যবহৃত সাদা ও সোনালী রঙের এফজেডএস মডেলের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়৷চাকতি রাসেলকে গুলশান, ভাগ্নে রাসেলকে বাড্ডার সাঁতারকুল, রুবেল ও শাখাওয়াত হোসেন শরিফকে বাড্ডা থেকে গ্রেফতার করা হয়৷ হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি শরিফের৷ এটি শরিফের মধ্যবাড্ডার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়৷আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, চাকতি রাসেল ও ভাগ্নে রাসেল ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত ও বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি৷ রুবেল ঠাণ্ডা মাথার খুনি৷ শাখাওয়াত হোসেন ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী৷হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, অপারেশন আছে বলে ভাগ্নে রাসেল মোটরসাইকেলটি দিতে শরিফকে অনুরোধ জানান৷ ভাগ্নে রাসেলের সঙ্গে শরিফের সুসম্পর্ক থাকার কারণে আগেও শরিফ তাকে মোটরসাইকেল দিয়েছেন৷ সকালে মোটরসাইকেল দিলে বিকেলে ফেরত দিয়ে দিতেন৷গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে জগিং করার সময় দুবৃর্ত্তদের গুলিতে নিহত হন ইতালিয়ান নাগরিক ও নেদারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিওবিডির কর্মকর্তা তাবেলা সিজার৷