দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ অক্টোবর ২০১৫: বোমা বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার পরও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাজিয়া মিছিল বের করেছে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমরা। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেয়। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের ঐতিহ্যবাহী হোসেনী দালানের ইমাম বাড়া থেকে প্রধান তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মিছিলটি বের করা হয়। কালো-লাল-সবুজের নিশান উড়িয়ে, নিজ নিজ বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ ধ্বনি তুলে মিছিলটি এগিয়ে যায়।শোকের প্রতীক কালো পতাকা, লাল-সবুজের আলাম (দীর্ঘ লাঠির মাথায় ত্রিকোণাকৃতির পতাকা), ছোটো ছোটো পতাকা হতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু এই শোক মিছিলে অংশ নেয়। তাদের মুখে বিলাপ হায় হোসেন,হায় হোসেন। এ ছাড়া মিছিলের অগ্রভাগে ছিল দুলদুল ঘোড়া (ইমাম হোসেনকে বহনকারী ঘোড়ার প্রতীক), জিন (বসার আসন), মাথার খাপসহ বিভিন্ন উপকরণ। হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নাতি ইমাম হোসেনের মর্মান্তিত শাহাদাত বার্ষিকী স্মরণে এ আয়োজন করা হয়ে থাকে। শোক মিছিলটি হোসেনী দালন ইমাম বাড়া থেকে শুরু হয়ে বকশীবাজার, উর্দ্দু রোড, লালবাগ চৌরাস্তা হয়ে ঘোড়া শহীদের মাজার ও আজিমপুর হয়ে ধানমন্ডি জিগাতলায় গিয়ে শেষ হয়।এরআগে, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর দ্বিতীয় তাজিয়া মিছিলে অংশ নেয়াদের শরীর তল্লাশি করে হোসেনী দালন প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। মিছিলের সামনে ও পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুর সংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিল।প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে হোসেনী দালান চত্বরে পরপর তিনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। প্রথম তাজিয়া মিছিল বের করার মুহূর্তে এ বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে এক যুবক মারা যান। আহত হন শতাধিক।
হোসাইনী দালানের ইমামবাড়ায় শনিবার ভোররাতে হামলার কারণে ওই সময়কার তাজিয়া মিছিল না হলেও সকালে যথারীতি তাজিয়া মিছিল হয়েছে এবং তাতে ‘হায় হোসেন-হায় হোসেন’ মাতম তুলেছেন কয়েক হাজার শিয়া। শিয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের এক বিবৃতিতে হামলাকারীদের ইসলাম, দেশ ও জাতির শত্র“ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, তারা ভয় পাননি।এই হামলা কারা চালিয়েছে বলে মনে করেন- জানতে চাইলে তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারী আব্দুল জব্বার নামে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, ইয়াজিদের বংশধরেরা এই হামলা চালিয়েছে। ইমাম হোসেনকে যারা হত্যা করেছিল, তারা এখনও আছে।সকাল ১০টায় নাজিমউদ্দিন রোডের হোসাইনী দালান থেকে তাজিয়া মিছিল শুরু হয়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের (রা.) শহীদ দিবস আরবি মহররম মাসের ১০ তারিখকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে পালন করে মুসলমানরা।সপ্তম শতকে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন ইমাম হোসাইন।ক্ষমতা ধরে রাখতে মুয়াবিয়াপুত্র ইয়াজিদ ইমাম হোসাইনকে হত্যার পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন।
আশুরার দিনটি ঘটা করে পালন করে শিয়া মুসলিমরা। রাজধানীর ইমামবাড়ায় প্রায় ৪০০ বছর ধরে তাজিয়া মিছিল চলে আসছে বলে হোসাইনী দালান ইমামবাড়ি’র এক বিবৃতিতে বলা হয়।এ জাতীয় কাপুরুষোচিত ও ন্যক্কারজনক কাজ ৬১ হিজরি সনে প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ (স.) ও তার দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের (আ.) সঙ্গে ঘটেছিল। ঐতিহাসিক হোসাইনী দালান ইমামবাড়ায় এর পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
পাকিস্তানসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটলেও এই ধরনের হামলা বাংলাদেশে আগে দেখা যায়নি। এই হামলায় একজন নিহত এবং অর্ধ শতাধিক আহত হয়।
হোসাইনী দালান ইমামবাড়ার সুপারিনটেনডেন্ট এম এম ফিরোজ হোসেন বিবৃতিতে বলেন, বিগত রাতে দুষ্কৃতকারী কর্তৃক যে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, তা শুধু হোসাইনী দালান নয়, পুরো দেশের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর বিরাট আঘাত।ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার বিচার দাবি করার পাশাপাশি ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।