দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ২৩ অক্টোবর ২০১৫: রাজধানীর কাঁচাবাজারে আবারও দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের। পাশাপাশি বেড়েছে টমেটো ও গাজরের দাম। তবে সিম, বেগুন, মূলার দাম কমলেও অস্থিতিশীল রয়েছে বেশিরভাগ সবজির দাম। ক্রেতাদের অভিযোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে দাম বেশি হওয়ায় বাজারে এসে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তবে, গরু ও খাসির মাংসের আগের দামে বিক্রি হলেও বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম।প্রতিদিনের মতোই সকাল সকাল বাজারে এসেছেন ক্রেতারা। শুক্রবার হওয়ায় তাদের বেশিরভাগরেই লক্ষ্য কয়েকদিনের বাজার একদিনে করার। দরদামও করছেন দরকারি পণ্যটির। তবে ফুলকপি আর পাতাকপি ৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ সবজির দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা হওয়ায় কেনার আগে আরও একবার ভাবতে হয় তাদের। আবারও বেড়েছে কমতে থাকা কাঁচামরিচের দাম। কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। এছাড়া, টমেটো গাজরের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০টাকায়। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সরবরাহ সংকটকে দায়ীকে করছেন বিক্রেতারা।রাজধানীর কাঁচাবাজারে বেড়েই চলেছে শাক-সবজির দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে এসব খাদ্যপণ্য কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে রাজধানীর মুগদা বাজার, মালিবাগ বাজার, গুদারাঘাট বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে শাক-সবজির দাম বাড়ার বিষয়টি চোখে পড়ে। টানা দুই সপ্তাহ এসব খাদ্যপণ্যে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শীতের নতুন সবজি বাজারে না আসাই এ দাম বৃদ্ধির কারণ বলে দাবি বিক্রেতাদের। এদিকে, মুগদা, মালিবাগ ও গুদারাঘাট বাজারে বেশিরভাগ সবজি একই দরে বিক্রি হলেও কিছু কিছু পণ্যের দরে হেরফের দেখা গেছে।এসব বাজারে কেজি প্রতি শশা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। গত সপ্তাহে এর দাম ছিল কেজি প্রতি ৪০ টাকা। এছাড়া, টমেটো, বেগুন ও কচুরমুখীর দামও ১০ টাকা করে বেড়েছে। শুক্রবার রাজধানীর কাঁচাবাজারে টমেটো কেজি প্রতি ১২০ টাকা করে, বেগুন ৯০ টাকা ও কচুরমুখী ৬০ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা যায়। কাঁচা পেঁপে ও লাউ প্রতিটা যথাক্রমে ৩৫ টাকা ও ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। সিংহভাগ সবজির দাম বাড়লেও বরবটির দাম কমেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ টাকা কমে শুক্রবার এটি কেজি প্রতি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।এদিকে, বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দরে বিক্রি হচ্ছে করলা। আর অস্থিরতা বিরাজ করছে কাঁচামরিচের দামে। রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, করলার দাম কেজি প্রতি ৭০ থেকে ১২০ টাকা করে হাঁকা হচ্ছে। আর কাঁচামরিচ দুই সপ্তাহ আগে কেজি প্রতি ১৬০-১৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বিক্রি হয় ২৪০ টাকায়। আর শুক্রবার এর দাম ২০০ টাকায় নেমেছে।করলার দামে হেরফের প্রসঙ্গে বিক্রেতারা বলছেন, বিভিন্ন জাতের করলা রয়েছে। জাত অনুযায়ী দামের হেরফের হচ্ছে।
সবজির দাম প্রতি সপ্তাহে কেন বাড়ছে জানতে চাইলে একাধিক বিক্রেতা বলেন, বন্যার কারণে শীতের অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। নতুনভাবে গাছ লাগিয়েছে কৃষক। তবে সে পণ্য এখনও বাজারে আসেনি। আগামী সপ্তাহে সবজির দাম আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।সবজির পাশাপাশি শাকের দামেও ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। প্রতি আঁটি লাউ শাক শুক্রবার ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। গত সপ্তাহের এর দর ছিল ৩০ টাকা। পুঁই শাক গত সপ্তাহের তুলনায় ৫ টাকা বেশি দরে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে পালং শাকের দাম। রাজধানীর বাজারে এটি প্রতি আঁটি ৩০ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা যায়।ভারতের নাসিকে সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার লাসালগাঁওয়ে গত ২২ আগস্ট প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) পেঁয়াজের দাম উঠেছিল পাঁচ হাজার ৭০০ রুপি। ঠিক দুই মাস ব্যবধানে এখন সেই পেঁয়াজের দর নেমেছে আড়াই হাজার রুপিতে। দর কমেছে ৫৬ শতাংশ।এই দর কমার কারণ নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ। নাসিক অঞ্চলে খরিফ মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার সেখানে এক হাজার ৪৫০ টনের মতো পেঁয়াজের নিলাম হয়েছে, যার মধ্যে এক হাজার টনই নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ। হঠাৎ করে দর অস্বাভাবিকভাবে পড়তে থাকায় ভারতের উত্তর কর্ণাটকে কৃষকরা সড়ক অবরোধ পর্যন্ত করেছে।ভারতে দর কমে যাওয়া এবং দেশি পেঁয়াজের যথেষ্ট সরবরাহ থাকায় এখন বিপদে আছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। বেশ কিছু আমদানিকারক ভারত, চীন ও মিসর থেকে শেষ দিকে বেশি দামে পেঁয়াজ এনে বড় ধরনের লোকসান দিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় ফড়িয়ারা দাম বাড়ার আশায় পেঁয়াজ মজুদ করে এখন কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
ঢাকার শ্যামবাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় বেঙ্গালুরুর পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪২-৪৩ টাকা কেজি দরে। আর মিসরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা ২৭-২৮ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার পাইকারি বাজারে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দর ৮০ টাকায় উঠেছিল। ঢাকার খুচরা বাজারগুলোতে মানভেদে দেশীয় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত বছর দেশে ১৭ লাখ চার হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছিল। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আমদানি ও উৎপাদন মিলিয়ে দেশে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের জোগান নিশ্চিত হয়, যা বছরের মোট চাহিদার সমান। কিন্তু ভারত সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য টনপ্রতি ৭০০ ডলারে বেঁধে দেওয়ায় বাংলাদেশে দর চড়ে গিয়েছিল। দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন ও আমদানি হওয়ার পরও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় তখন বাজারে কারসাজির সন্দেহ করা হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলেছিলেন, কৃষক ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ মজুদ করা আছে। তা বাজারে না ছাড়লে পরে লোকসান দিতে হবে।
ভারতে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। বাংলাদেশেও আগামী মাসের শেষ দিকে এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। ফলে ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের হাতে মজুদ থাকা পেঁয়াজ বিক্রির জন্য বেশি সময় অবশিষ্ট নেই। এ কারণেই দর কমছে বলে জানা গেছে।শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী শহীদ ভূঁইয়া বলেন, দেশে বাড়তি দর দেখে অনেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানি করেছিলেন। পুরনো আমদানিকারকদের পাশাপাশি অন্য পণ্যের আমদানিকারকরাও ঝুঁকেছিলেন পেঁয়াজ ব্যবসায়। এতে চাহিদার চেয়ে আমদানি বেশি হয়ে গেছে। এখন বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই লোকসানে আছেন। তিনি আরো বলেন, ভারতীয় রপ্তানিকারকরা পেঁয়াজের সংকট হবে জানিয়ে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের আমদানিতে উৎসাহিত করেছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে, দর পড়ে যাচ্ছে। আরো বেশি লোকসান ঠেকাতে আমদানিকারকরা পেঁয়াজ বিক্রি করে দিচ্ছেন। কৃষকরাও তাদের পেঁয়াজ ছেড়ে দিচ্ছে।