দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ অক্টোবর ২০১৫: প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শুক্রবার সারাদেশে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোত্সব শেষ হয়েছে৷ ঢাকের বাদ্য আর সিঁদুর খলা শেষে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কৈলাসে দেবালয়ে’ ফিরলেন ‘দুর্গতিনাশিনী দেবী’, সাঙ্গ হল বাঙালি হিন্দুর সবচেয়ে বড় পার্বণ শারদীয় দুর্গোত্সবের৷ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শোকের আবহে মা দুর্গাকে বিসজর্ন দিয়েছে৷ ঢাকায় বিকেল সাড়ে তিনটায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের মেলাঙ্গন থেকে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা শুরু হয়৷বড় ট্রাকের পাশাপাশি ছোট ছোট ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন ধরণের যানবাহনে করে মায়ের প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রাটি মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং বিকেল ৫টার পরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মা দুর্গাকে বুড়িগংঙ্গায় বিসর্জন দেয়৷
শোভাযাত্রায় ঢাক-ঢোল ও কাঁসার বাজনার সঙ্গে দেশি-বিদেশি গানের মিউজিক বাজিয়ে দুর্গাভক্তরা আনন্দ-উল্লাসে মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক মুখরিত করে তোলে৷ বিকেল ৪টার দিকে নিউ ইস্কাটন পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বীণ স্মৃতি ঘাটে প্রথম প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় বলে পূজা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা গেছে৷ ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি জানায়, বুড়িগঙ্গা ছাড়াও তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়৷ তুরাগ নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের লক্ষ্যে মহানগরীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা থেকে ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনে করে প্রতিমা নিয়ে নদী অভিমুখে পূজারীদের যেতে দেখা যায়৷ এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে পূজামন্ডপের কাছের পুকুর ও জলাশয়েও প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে ৷ এ বিসর্জনের মাধ্যমে দেবী দুর্গা মর্ত্যলোক থেকে আবার গমন করলেন স্বর্গলোকে৷ গত ১৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৫ দিনের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়৷ এরপর মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী এবং মহানবমী ও দশমীতে হিন্দু সমপ্রদায়ের হাজার হাজার নারী-পুরম্নষ ধর্মীয় আচারাদির মধ্যদিয়ে দেবী দুর্গাকে তুষ্ট করার চেষ্টা করেন৷বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানান, এবার নবমী ও দশমী একই দিনে হওয়ায় বেশির ভাগ মন্ডপে বৃহস্পতিবারই বিজয়া দশমীরআনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় এবং আজ শুক্রবার সারাদেশে একযোগে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়৷ দশ দিন আগে মণ্ডপে মণ্ডপে মহালয়ায় এ উত্সবের সূচনা হয়েছিল৷ বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীতে বিহিত পূজা’ আর ‘দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ঘটে দুর্গা পূজার শাস্ত্রীয় সমাপ্তি৷ আর একদিন পর শুক্রবার হল প্রতিমা বিসর্জন৷সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী ফিরে যান কৈলাসে স্বামীর ঘরে৷ এক বছর পর নতুন শরতে আবার তিনি আসবেন পিতৃগৃহ এই ধরণীতে৷হিন্দু পঞ্জিকা মতে, দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে এসেছেন, গেলেন দোলায় (পালকি) চড়ে৷কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেলা আড়াইটায় বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বিনাস্মৃতি স্নানঘাটে আদি মরণচাঁদ, নবকল্লোল পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়৷মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি জানান, বিভিন্ন ঘাটে রাজধানীর ২২৫টি মণ্ডপের প্রতিমা একে একে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে৷কঙ্বাজার ও চট্টগ্রামে প্রতিমা বিসর্জন চলছে সাগর সৈকতে৷ একইভাবে সারা দেশে বিভিন্ন নদী ও জলাশয়ে চলছে বিসর্জনের পর্ব৷
ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির প্রতিনিধিরা জানান, মূলত ‘দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে আগের দিনই দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে৷ মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রতিমা থেকে ঘটে এবং ঘট থেকে আবার ভক্তের হৃদয়ে মাকে নিয়ে আসাকে বিসর্জন বলে৷ বিসর্জনের আগে শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকার মন্দিরে মন্দিরে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ উত্সব৷ দুপুরে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা এনে জড়ো করা হয় পলাশীর মোড়ে৷ শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাক-ঢোলের সনাতনি বাদ্যের সঙ্গে আধুনিক উচ্চস্বরের সাউন্ড সিস্টেমে দেবী বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক দিয়ে কয়েক হাজার মানুষের এ শোভাযাত্রার সময় বিভিন্ন সড়কে জট দেখা যায়৷ পলাশী থেকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বুড়িগঙ্গা তীরে শেষ হয় শোভাযাত্রা৷প্রতিমা ঘাটে নিয়ে আসার পর ভক্তকূল শেষবারের মতো ধুপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠে৷ শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্যদিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেওয়া হয়৷ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের জানান, প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ পুলিশের পাশাপাশি নৌ-পুলিশ ও র্যাব সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন৷