দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ অক্টোবর ২০১৫: রাজধানীর গাবতলীতে ব্যাগ তল্লাশির সময় ছুরিকাঘাতে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ইব্রাহিম মোল্লা হত্যাকাণ্ডে একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গ্রুপ জড়িত বলে জানিয়েছেন পুলিশের আইজিপি শহীদুল হক৷শুক্রবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ওই এএসআইয়ের জানাজা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি৷ আইজিপি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি৷ তার তথ্যের আলোকে আমরা কামরাঙ্গিরচরে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি৷ গ্রেপ্তার অভিযান চলছে৷ মনে হয়েছে তারা একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গ্রুপ৷ তারপরও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না৷এএসআই নিহতের ঘটনাটি ডিবি ও থানা পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত করছে বলে জানান তিনি৷
পুলিশের আইজিপি শহীদুল হক বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা এটি৷ এএসআই ইব্রাহিম অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করছিলেন৷ তিনি নির্দেশনা অনুযায়ী ওই ব্যক্তির লাগেজ তল্লাসী করছিলেন৷ আর এ সময়ই তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়৷এ হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত তা পুলিশ দ্রুত উত্ঘাটন করতে পারবে বলে তিনি আশা করেন৷এ ঘটনায় জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য এসেছে৷ তারপরও আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি৷ যখন যাচাই-বাছাই হবে তখন পূর্ণাঙ্গভাবে বলা যাবে কারা জড়িত৷ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, মাসুদের তথ্য মতে আমরা কামরাঙ্গিরচরে ব্যাপক বিস্ফোরক ও বোমা উদ্ধার করেছি৷ গাজীপুর থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি৷ পূর্ণাঙ্গ তদন্তেই বোঝা যাবে এর পেছনে কারা জড়িত এবং কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে৷জানাজায় অংশ নেয়া নিহত ইব্রাহিম মোল্লার ভগি্নপতি জামাল হায়দার জানা, তার (ইব্রাহিম) কোনো ধরনের শত্রু ছিল না৷ তিনি ২০০৩ সালে পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে যোগদান করেন৷ ২০১২ সালে এএসআই হিসেবে পদোন্নতি পান৷ এএসআই হওয়ার আগে তিনি ভাসানটেক থানায় কমর্রত ছিলেন৷ পরে দারুস সালামে বদলি হন৷তিনি আরও জানান, নিহত ইব্রাহীম এক পুত্র ও কন্যা সন্তানের জনক৷ বড় সন্তান জান্নাতুল ফেরদৌসের বয়স পাঁচ ও ছোট সন্তান পরাগের বয়স মাত্র দেড় বছর৷ ইব্রাহীমের জানাজা শেষে তার লাশ পুলিশের পাহারায় বাগেটহাটের কচুয়া উপজেরার পালপাড়া গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ সঙ্গে আছেন তার ভগি্নপতি জামাল হায়দার, স্ত্রী খায়রুন নেসা ও তার পরিবারের সদস্যরা৷
প্রসঙ্গত, রাজধানীর গাবতলী এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে দারুস সালাম থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ইব্রাহিম মিয়া (৪০) দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে খুন হন৷ বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে গাবতলীর পর্বত সিনেমা হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে৷ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (জনসংযোগ) মুনতাসীরুল ইসলাম বলেন, রাত নয়টার দিকে পর্বত সিনেমা হলের সামনে পুলিশের একটি নিয়মিত তল্লাশিচৌকি ছিল৷ সেখানে বিভিন্ন যানবাহন ও পথচারীদের তল্লাশি করা হচ্ছিল৷ বাস থেকে নামা এক যাত্রীকে সন্দেহ হলে তাঁকে তল্লাশি করার সময় ওই ব্যক্তি এএসআই ইব্রাহিমকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান৷ এ ঘটনায় একজনকে আটক করে দারুস সালাম থানায় আনা হয় জানিয়ে মুনতাসীরুল ইসলাম বলেন, ছুরিকাঘাতকারী পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে গিয়ে অপর ব্যক্তিকে আটক করেন৷ ওই ব্যক্তি ছুরিকাঘাতকারী ব্যক্তির সঙ্গেই ছিলেন৷ জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে তাঁর নাম মাসুদ বলে জানিয়েছেন৷ তবে নামটি সঠিক কি না, পুলিশ তা যাচাই করে দেখছে৷ পুলিশের ধারণা, মাসুদ একই চক্রের লোক৷ঘটনার প্রায় আধা ঘন্টা পর ইব্রাহিমকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন৷