দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ অক্টোবর ২০১৫: সুপ্রিম কোর্টের সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ওপর লন্ডনে ফের হামলা করেছে দুবর্ৃত্তরা৷স্থানীয় সময় বুধবার রাতে লন্ডনের বেথনাল গ্রিনের ইয়র্কে এ হামলার ঘটনা ঘটে৷এর আগে ২০১২ সালের ২৭ জুন লন্ডনে অজ্ঞাতপরিচয় দুই বাঙ্গালি যুবক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর ওপর হামলা চালিয়েছিল৷
জানা গেছে, বুধবার রাতে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নেমে বাসায় যাওয়ার আগে বেথনাল গ্রিনের ইয়র্ক হলে হিন্দু সমপ্রদায়ের দুর্গা পূজার একটি মণ্ডপে যান বিচারপতি শামসুদ্দিন৷ এরপর ইয়র্ক হল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার আগে হামলার শিকার হন তিনি৷ এ সময় তার সঙ্গে তার মেয়েও ছিলেন৷ ফেইসবুকে ওই হামলার ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন শামসুদ্দিন চৌধুরীর মেয়ে৷ ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, হঠাত্ একজন তার বাবার কাছে এসে জানতে চান তিনিই শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক কি না৷ জবাব না দিলে সে মারধর শুরু করে৷ তার ধারণা, বিএনপির লোকেরাই তার বাবার ওপর এ হামলা চালিয়েছে৷ তাত্ক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷হামলার ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর ফেইসবুকে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন শামসুদ্দিন চৌধুরীর মেয়ে৷তিনি লিখেছেন, হঠাত্ একজন তার বাবার কাছে এসে জানতে চান তিনিই শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক কি না৷ জবাব না পেয়ে এরপর সে মারধর শুরু করে৷হঠাত্ টের পেলাম এক লোক বাবার গা ঘেঁষে হাঁটা শুরু করল, কাউকে বলে- ‘এই লোকই কি সে? তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমি পেছন থেকে বাবাকে আড়াল করার চেষ্টা করলাম৷ সে তখন বাবার সামনে চলে গেল, জিজ্ঞেস করল- আপনি কি জাস্টিস শামসুদ্দিন চৌধুরী’? জবাব না দিয়ে বাবা সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে আরও কয়েকজন আমাদের দিকে এগিয়ে এল এবং এরপর বাবাকে মারতে শুরু করল৷এক পর্যায়ে বিচারপতি শামসুদ্দিনের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় হামলাকারীরা৷ মেয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করলেও হামলাকারীদের লাথি আর ঘুষিতে এক পর্যায়ে রাস্তায় পড়ে যান শামসুদ্দিন চৌধুরী৷
তার মেয়ে লিখেছেন, প্রায় ৩০ সেকেন্ড ধরে তারা দুজন সাহায্যের জন্য চিত্কার করলেও আশেপাশের কেউ এগিয়ে আসেনি৷ হামলার ঘটনার পরপরই দৌড়ে ইয়র্ক হলে ফিরে আসেন বিচারপতি শামসুদ্দিন৷ এ সময় তাকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিক জানান৷কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ দেন বাংলাদেশের এই সাবেক বিচারক৷ এ সময় তিনি নিজের বিস্তারিত পরিচয় পুলিশের সামনে তুলে ধরেন৷ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের একজন মুখপাত্র জানান, হামলার বিষয়টি তারা জানেন এবং একটি ফোন চুরির বিষয়েও তারা শুনেছেন৷ তবে তাত্ক্ষণিকভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি৷হামলাকারীদের পরিচয় জানা নাগেলেও বিচারপতি শামসুদ্দিনের মেয়ে ফেইসবুকে লিখেছেন, এই গাট্টাগোট্টা বখাটেরা আমার বাবাকে চেনে না৷ কোনো সন্দেহ নেই, বিএনপির সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্দেশনা পেয়েই তারা এসেছে৷
স্ট্যাটাসের শুরুতেই তিনি লিখেছেন, লন্ডনে নেমেই আমরা হামলার শিকার হলাম, যে শহরে আরামে বসবাস করছেন তারেক জিয়া, তার মা বিএনপি প্রধানও এখন এই শহরেই অবস্থান করছেন৷ এর আগে ২০১২ সালের ২৭ জুন লন্ডনে অজ্ঞাতপরিচয় দুই বাঙ্গালি যুবক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর ওপর হামলা চালিয়েছিল৷ ২০০১ সালের ৩ জুলাই বাংলাদেশের হাই কোর্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়া এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী গত সেপ্টেম্বরে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে অবসরে যান৷এর কয়েকদিন আগেই প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতির বরাবরে একটি চিঠি পাঠান বিচারপতি শামসুদ্দিন, যা গণমাধ্যমে আলোচনায় আসে৷ এর আগে কটূ মন্তব্যের কারণে তার অপসারণ চেয়ে ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছিলেনএক আইনজীবী৷ আদালতে স্পিকারকে নিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিনের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কয়েকজন সংসদ সদস্যও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছিলেন৷হাই কোর্টের বিচারক থাকাকালে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী, কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার, বিজিএমইএ ভবন সংক্রান্ত মামলাসহ বহু আলোচিত রায় তার হাত দিয়ে আসে৷তিনি প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে ‘বিচার বিভাগের উপর আঘাত ৷সমপ্রতি নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবর্ধনায় বিচারপতি শামসুদ্দিন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়েছেন বলেও বিএনপির অভিযোগ৷