দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ অক্টোবর ২০১৫: সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি প্রয়াত শামসুর রাহমানের ৮৭তম জন্মদিন আগামীকাল শুক্রবার৷ এ কবির কবিতায় শুধু স্বাধীনতাই নয়, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, প্রেম, দ্রোহ ও বিশ্বজনীনতা সবই উঠে এসেছে৷ যা আজও আমাদের উজ্জীবিত করে৷ এ কারণে তিনি বাঙালীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিদের একজন এবং আমাদের চলার পথের পাথেয়৷ পঞ্চাশ দশক থেকে বাঙালি জাতির নানা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, সামাজিক জীবনের অসংগতি, বৃটিশ ও পশ্চিমাদের শোষণের বিরম্নদ্ধে তার সোচ্চার কন্ঠ কবিতায় নির্মিত হয় এক অনন্য বাক-প্রতিমা৷ এ জন্যে তাকে স্বাধীনতার কবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়৷ কবি শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মোগলটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পৈত্রিক নিবাস বর্তমান নরসিংদী জেলায়৷ ২০০৬ সালের ১৭ আগষ্ট কবি ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিত্সাধীন অবস্থায় ইনত্মেকাল করেন৷
কবির জন্মদিন স্মরণে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে৷ এর মধ্যে রয়েছে বনানী কবরস্থানে কবির সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, গান ও কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান৷তার স্মরণে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ ও শামসুর রাহমান স্মৃতিপরিষদ যৌথভাবে একাডেমির রবীন্দ্র চত্ব্বরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে৷শুক্রবার বিকাল ৪টায় এ অনুষ্ঠানে শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে আবৃত্তি, কবিকন্ঠে নিবেদিত কবিতা, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশিত হবে৷ এতে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির ও শামসুর রাহমান স্মৃতিপরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান৷
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেবেন কবি সৈয়দ শামসুল হক, কবি-রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান৷ জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ স্বাগত বক্তব্য দেবেন৷ কবিকন্ঠে নিবেদিত কবিতা পাঠ করবেন রবিউল হুসাইন, হাবীবুলস্নাহ সিরাজী, রুবী রহমান, মুহম্মদ নূরুল হুদা, নূহ-উল-আলম লেনিন, কাজী রোজী, হালিম আজাদ, শিহাব সরকার, নাসির আহমেদ, কাজল বন্দোপাধ্যায়, রবীন্দ্র গোপ, কামাল চৌধুরী, আসাদ মান্নান, মুনীর সিরাজ, শাহজাদী আঞ্জুমান আরা, আমীরুল ইসলাম, আসলাম সানী, তারিক সুজাত, অঞ্জনা সাহা, মৃত্তিকা গুণ ও দীপিতা রাহমান৷
শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে আবৃত্তি করবেন লায়লা আফরোজ, রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন নিপু, আহ্কাম উল্লাহ ও নায়লা তারান্নুম কাকলি৷সংগীতে অংশ নেবেন রফিকুল আলম, মহীউজ্জামান চৌধুরী, বুলবুল মহলানবীশ, মাহজাবিন রহমান শাওলী, উত্তম ঘোষ প্রমুখ৷ এম আর ওয়াসেকের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করবে নন্দন কলা কেন্দ্রের শিল্পীরা৷ শুক্রবার সকালে কবির সমাধিতে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পমাল্য অর্পণ করবে৷
স্বাধীনতার এ কবি দেশের ও দেশের মানুষের বিরম্নদ্ধে কোন অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে, কোন অনাচার হতে দেখলে নিজেকে একাত্ম করে নিতেন এবং তার জবাব দিতেন কবিতার ভাষায়৷ আশা, বেদনা, ভালোবাসা, দ্রোহ কোনো কিছুই বাদ যায়নি তাঁর কবিতা থেকে৷তাই এ কবি প্রসঙ্গে কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ বাসসকে জানান, বাঙালীর জীবনে শামসুর রাহমানের প্রয়োজন কতটুকু তা অনুধাবন করা যায় তাঁর কবিতা পাঠ করলেই৷ তাঁর কবিতায় স্বাধীনতা, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, প্রেম, দ্রোহ, বিশ্বজনীনতা সবই উঠে এসেছে৷ যা আজও আমাদের উজ্জীবিত করে৷তিনি বলেন, শামসুর রাহমান নামটির সঙ্গে বাংলাদেশ ও এ দেশের কবিতাপ্রেমীদের নাড়ির যোগ রয়েছে৷ কারণ তিনি আমাদের স্বাধীনতার কবি৷ তিনি মৌলবাদ ও ধর্মান্ধতার বিরম্নদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বলেই শ্যামলীর নিজ বাড়িতে তাঁকে কৃষ্ণপক্ষের শক্তি দ্বারা আক্রানত্ম হতে হয়েছিল৷ কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, শামসুর রাহমান বাঙালীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি৷ তিনি নগরে বাস করলেও শুধু নাগরিক কবি ছিলেন না, ছিলেন জনতার কবি৷তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমানের প্রতি সেদিনই আমরা সঠিক শ্রদ্ধা জানাতে পারব যেদিন বাংলার মাটি থেকে চিরতরে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ নিমর্ূল এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে ঘোষিত রায় কার্যকর করতে পারব৷