দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ অক্টোবর ২০১৫: দেশে এখনো ৩ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ দরিদ্র। যার মধ্যে ১ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র যা মোট জনগোষ্ঠীর ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ দারিদ্রের হার কমলেও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা একই রকম বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, এ প্রেক্ষিতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বর্তমান বিধানসহ গৃহীত হলে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে কি না তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। সোমবার বেলা ১২টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে আয়োজিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা: খাদ্য অধিকার প্রেক্ষিত শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তারা এ কথা বলেন।
বক্তরা বলেন, বিশ্ব নেতারা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) গ্রহণের মধ্যে দিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বগড়ার যে প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন তার মাধ্যমে পৃথিবীর সব মানুষের খাদ্য অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া সাংবধানিক নির্দেশনা, জাতীয় খাদ্য নীতিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতি ও আইন যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য আর্জন করা সম্ভব।অনুষ্ঠানে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ মহসিন আলী বলেন, সকল উন্নয়নশীল দেশের প্রধান সমস্যা ক্ষুধা ও দারিদ্র্য। শুধুমাত্র খাদ্য চাহিদা পূরণ হলেই দারিদ্র্য দূর হয় না। দারিদ্র্যের বহুমাত্রিক দিক আছে। দেশের সব মানুষের পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের নিশ্চয়তা প্রদান করে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার দাবিও জানান তিনি।
তিনি বলেন, এমডিজির বিভিন্ন দিক বিশেষভাবে দারিদ্র্যের হার হ্রাস বাংলাদেশের অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে সারাবিশ্বে সমাদৃত। এজন্যই “টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০” গৃহীত হয়েছে। যেখানে ক্ষুধামুক্তি এবং দারিদ্র্য নির্মূলের অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে। দেশে এখনো ৩ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ দরিদ্র। যার মধ্যে ১ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র যা মোট জনগোষ্ঠীর ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ দারিদ্রের হার কমলেও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা একই রকম। এ প্রেক্ষিতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বর্তমান বিধানসহ গৃহীত হলে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে কি না তা পর্যালোচনার দাবি রাখে।এ সময় তিনি খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নের দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে খাদ্যের পর্যাপ্ততা ও ব্যবহারের উপরে। যদিও দরিদ্র মানুষের জন্য বেশি প্রয়োজন খাদ্যে তার অভিগম্যতা ও খাদ্যের ক্ষেত্রে স্থায়িত্বশীলতা। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থার মধ্যে থেকেও রাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে ভারত এ লক্ষ্যেই একটি আইন করেছে। এজন্য তিনি আয়োজক সংস্থাকে খাদ্য অধিকার আইনের একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করার আহ্বান জানান।
ড. কাজী খালীকুজ্জামান আহমদ বলেন, বাংলাদেশে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কিছু দিক নির্দেশনা থাকলেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে বাৎসরিক পরিকল্পনা। এমডিজির বেশকিছু ভালো অর্জন সত্ত্বেও শুধুমাত্র আয়ের প্রেক্ষিতে নয়, বহুমাত্রিকভাবে পরিমাপ করলে আমাদের দারিদ্র্যের হার আরো বাড়বে। খাদ্য অধিকারের ক্ষেত্রে অতিদরিদ্রদের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।মতবিনিময় সভায় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়ন রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, ইউএনডিপির জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ একেএম মামুনুর রশীদ, জিআইজেডের উপদেষ্টা সুজিত চৌধুরী প্রমুখ।