দৈনিকবার্তা-লামা, ১৭ অক্টোবর ২০১৫: গত ১মাস যাবৎ বান্দরবানের লামা উপজেলার প্রধান দুই সড়কসহ আন্ত: সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। সড়কগুলোর কোথাও বড় আকারের ফাটল, গর্তের সৃষ্টি আবার বেশ কয়েকটি স্থানের পাশ ধসে পড়েছে। এছাড়া সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়েছে পাহাড়ের মাটি। পুরো শুকনো মৌসুম জুড়ে সড়কের ধারণ ক্ষমতার বেশি কাঠ, তামাক, ইটবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন ভারী যানবাহন চলাচলের কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বর্ষায় প্রবল বর্ষণের কারণে এসব সড়কগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। গত একমাসেও সড়কের বিভিন্ন স্থানে উপর ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি সরানো হয়নি।
শুধুমাত্র বিধস্ত সড়কের কিছু কিছু স্থানে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে সওজ ও এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত এসব বহি: ও আন্ত: সড়কগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন মরণ ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে শত শত যানবাহন। আবার প্রবল বর্ষণ নামলে সড়কগুলো ভেঙ্গে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। অদ্যাবদি এসব সড়ক সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে এসব সড়কে যে কোন সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে জানা গেছে। দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিন উপজেলার প্রধান সড়ক লামা-ফাঁসিয়াখালীসহ লামা-সুয়ালক, ইয়াংছা-বনফুর, আজিজনগর-গজালিয়া ও লামা-রুপসীপাড়া সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন অংশের বিটুমিন-ইট-সুরকী হারিয়ে গিয়ে এসব সড়কের মাঝখানে ও একপাশে সৃষ্টি হয়েছে ছোট খাটো পুকুর। রসিকদের মতে, সেখানে এখন আস্ত তেলাপিয়ার চাষ করা সম্ভব! বিশেষ করে চলতি বর্ষার কয়েক দফার প্রবল বর্ষণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আবার এসব গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের লাইনঝিরি, মিরিঞ্জা, বদুরঝিরিসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক ধসে পড়েছে। এখনিই প্রধান দুই সড়কের সংস্কার কাজ করা না হলে যে কোন মুহুর্তে রাস্তা ভেঙ্গে পড়ে সড়ক যোগাযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এসব পাকা সড়ক ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ইটের রাস্তার চেহারা আরো করুণ সুরত ধারণ করেছে। গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমূহের চেহারা সাম্প্রতিক বর্ষণ এবং সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলের পানির প্রভাবে একেবারে অচেনা রূপ ধারণ করেছে। ফলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
উপজেলার রূপসীপাড়া, গজালিয়া, লামা সদর, সরই, আজিজনগর, ফাইতং ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সড়কগুলোরও এখন বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কে চলাচলকারী জীপ চালক মো. সামশুল আলম জানান, সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় আকারের ফাটলসহ ধসে পড়েছে। বিকল্প কোন সড়ক না থাকায় মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে হলেও চলাচল করতে হচ্ছে। এছাড়া প্রবল বর্ষণের কারণে ধসে পড়ে সড়কটি প্রায় স্থানেই সরু হয়ে গেছে। তাই সড়কটি দ্রুত সংস্কার জরুরী। ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানিয়েছেন, চলতি বর্ষার প্রবল বর্ষণে ইয়াংছা হতে বনফুল সড়ক, মালুমঘাট-কমিউনিটি সড়ক ভেঙ্গে চুরে একাকার হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এ অবস্থা শুধু ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে নয়, পুরো উপজেলার সব’কটি সড়কেই এ অবস্থা বিরাজ করছে। সড়কগুলোর বেহাল দশার কথা স্বীকার করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। এ মুহুর্তে সেসব সংস্কারের বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কার করা হবে।