দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ অক্টোবর ২০১৫: নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, নদীর ধরে কাশফুলের দোলা, ভোরের বাতাসে শিউলি ফুলের সুবাস। এসবই মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতিতে শরতের ছোঁয়া লাগার কথা। এ ঋতুর অন্যতম আকর্ষণ হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদিয় দুর্গোৎসব। আর মাত্র কয়েক দিন পর মন্ডপে মন্ডপে বেজে উঠবে ঢাক-ঢোল আর কাঁসার শব্দ। মন্দিরে মন্দিরে উচ্চারিত হবে চন্ডী পাঠ।শারদীয় দুর্গোৎসবের আর মাত্র দুই দিন বাকি। এখন মন্দিরে মন্দিরে চলছে সাজসজ্জা ও প্রতিমায় শিল্পীর শেষ আঁচর আর আরাধনার প্রস্তুতি। আগামী ১৮ অক্টোবর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় এ দুর্গোৎসব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সবাই মেতে উঠবেন বাঙালির সার্বজনীন এ উৎসবে।
এদিকে, পূজাকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। গত ১২ অক্টোবর মহালয়ার উদযাপনের মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। উৎসবকে সার্থক করতে রাজধানীসহ সারাদেশের প্রতিমা শিল্পীরা নাওয়া-খাওয়া ভুলে রাতদিন কাজ করে চলেছেন। গত দুই মাস বিরামহীন প্রতিমা তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এখন শুধু প্রতিমার গায়ে রংয়ের শেষ ছোঁয়ার কাজ চলছে। ডেকোরেটরের মালিক-কর্মচারীদের ব্যস্ততাও কম নয়। এরই মধ্যে রাজধানীর অনেক পূজামণ্ডপে প্রতিমা রং করাসহ মণ্ডপ তৈরি ও আলোকসজ্জার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার রাজধানী ঢাকেশ্বরী, তাঁতিবাজার, শাঁখারিবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
এখনও যেসব মন্দিরের আলোকসজ্জার কাজ শেষ হয়নি, সেসব মন্দির প্রাঙ্গণকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে মন্দিরগুলোতেও চলছে ঘষা মাজা ও রংয়ের কাজ। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারাদেশে ২৯ হাজার ৭৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আর রাজধানীর ২২৩টি মণ্ডপে এ পূজা অনুষ্ঠিত হবে।সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন।শঙ্খ, উলুধ্বনি আর মঙ্গল সংগীতে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেবে সনাতন ধর্মাম্বলী ভক্তরা।
প্রসঙ্গত, ১৮ অক্টোবর সায়ংকালে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হবে। ১৯ অক্টোবর দেবীর ষষ্ঠী বিহিত পূজা, সায়ংকালে আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ২০ অক্টোবর দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, সপ্তমী ও মহাসপ্তমী বিহিত পূজা। ২১ অক্টোবর মহাষ্টমী। কুমারী পূজা, সন্ধিপূজা। ২২ অক্টোবর মহানবমী পূজা। ২৩ অক্টোবর দশমী পূজা ও প্রতিমা বিসর্জন। তবে মহালয়ার দিন থেকেই মূলত শুরু হয়েছে দেবী দুর্গার আগমন ধ্বনি।ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, উৎসবকে জমজমাট করতে কমিটির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। অন্য বছরের মতো এবারো রাজধানীর পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পূজা কমিটি জানায়, সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা মোতায়েন করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এদিকে, ঢাকেশ্বরী মেলাঙ্গনসহ রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপে এ উপলক্ষে আয়োজন করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার। আগামী ১৮ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৮টায় দেবীর ষষ্ঠাদী কল্পারম্ভ, দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসরের মধ্য দিয়ে পূজার মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। এদিন দেবী দুর্গার আগমন ঘটবে। দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে মর্ত্যে নেমে আসার জন্য।পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ বছর সবচেয়ে বেশি পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে সূত্রাপুর থানায়। তবে অন্য বছরের মতো এবারো এলাকাভিত্তিক মণ্ডপ তৈরিতে এগিয়ে আছে শাঁখারিবাজার ও তাঁতিবাজার।
এদিকে, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের পক্ষ থেকে গরীব জনগণের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ আজ কেরাণীগঞ্জ থানার রামকানাই মন্দির প্রাঙ্গণে সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত দুঃস্থ-গরীর সহ¯্রাধিক নারী-পুরুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও পরিধেয় বস্ত্র বিতরণ করেন।এ সময় রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সন্নাসী স্বামী দিব্যযোগানন্দ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জজ মিঞা, মন্দিরের পুরোহিত ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও উর্ধ্বতন কর্মকতা উপস্থিত ছিলেন।