দৈনিকবার্তা-সিলেট, ১৬ অক্টোবর ২০১৫: সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে হত্যার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামকে সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে আনার এক দিনের মাথায় আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।কামরুলকে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সিলেটের মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করার পর বিচারক আনোয়ারুল হক এই আদেশ দেন। আগামী রোববার এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন রাখা আছে।এদিকে, রাজন হত্যার প্রধান আসামি কামরুলের ফাঁসি দেখতে চান শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান আলম।
তার একটাই চাওয়া, মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামের প্রকাশ্য জনতার মঞ্চে ফাঁসি দেওয়া হোক।শুক্রবার সকালে সিলেট মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজের চাওয়ার কথা জানান আজিজুল ইসলাম। এসময় তিনি ছেলে হত্যার প্রধান আসামি কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় আনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।তবে, কামরুলের সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়ার পেছনে যাদের হাত রয়েছে তদন্তের মাধ্যমে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তিনি। তাছাড়া মামলায় পলাতক অন্য দুই আসামি শামীম ও পাভেলকে গ্রেফতার করার জোর দাবি করেন আজিজুর।
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে খুঁটিতে বেঁধে ১৩ বছরের শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যার পর বিদেশে পালিয়ে যান কামরুল । মধ্যপ্রাচ্যের ওই দেশেই তিনি থাকেন। রাজনকে নির্যাতনের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর সারাদেশে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তখন প্রবাসীদের সহায়তায় কামরুলকে আটক করে সৌদি পুলিশের হাতে তুলে দেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।এরপর কামরুলকে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ পুলিশ, জারি করা হয় রেড নোটিস।পুলিশের এআইজি (গণমাধ্যম) মো. নজরুল ইসলাম জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকলেও সরকারি পর্যায়ে আলোচনার ভিত্তিতে কামরুলকে ফিরিয়ে আনা হয়।বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার পর কামরুলকে নিয়ে যাওয়া হয় সিলেটে।
রাতে তাকে রাখা হয় কোকোয়ালি থানা পুলিশের হেফাজতে।ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই দিন শিশু রাজনকে পেটানোয় কামরুলই বেশি সক্রিয় ছিলেন।ঘটনার দেড় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে গত ১৬ অগাস্ট ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার।এরপর ২২ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে আলোচিত এই হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। বুধবার পর্যন্ত এ মামলায় মোট ২৯ জনের জবানবন্দি শুনেছে আদালত।কামরুলকে নিয়ে এই মামলার আসামিদের মধ্যে মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পলাতকদের মধ্যে কামরুলের ভাই সদর উপজেলার শেখপাড়ার বাসিন্দা শামীম আহমদের সঙ্গে পাভেল আহমদ নামে আরেকজন রয়েছেন। কামরুলের আরও দুই ভাই মুহিত আলম ও আলী হায়দার গ্রেপ্তার হয়ে রয়েছেন কারাগারে।পলাতক শামীম ও পাভেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে।
সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে সিলেট মহানগর মুখ্য হাকিম দ্বিতীয় আদালতে হাজির করা হয় সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা রাজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি কামরুলকে। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতের বিচারক আনোয়ারুল হক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকা থেকে রাত ১০টার দিকে সিলেটে নিয়ে আসার পর তাকে কোতোয়ালি থানা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়। ওই দিন বিকেল ৩টার দিকে কামরুলকে নিয়ে ঢাকা হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান পুলিশ কর্মকর্তারা। পরে তাকে বিমানবন্দর এপিবিএনের কাস্টোডিতে রাখা হয়। সেখানে সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেল ৪টার দিকে তাকে নিয়ে সড়কপথে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয় পুলিশ।
রাত ১০টার দিকে তারা সিলেট মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরে এসে পৌঁছান।কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনতে রোববার (১১ অক্টোবর) সৌদি আরবে যান সিলেটের তিন পুলিশ কর্মকর্তা। তারা হলেন-পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুল করিম, সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্লাহ ও সিলেট মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আ ফ ম নিজাম উদ্দিন।৮ জুলাই ভোরে চোর’সন্দেহে শিশু রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নির্যাতনের ২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশে বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর সুরঞ্জিত তালুকদার ১৬ আগস্ট ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।