দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ অক্টোবর ২০১৫: সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও মুজাহিদের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন নিয়ে শুনানির দিন নির্ধারণের আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় বৃহস্পতিবার আবেদন দুটি জমা দেওয়া হয়।পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন,দুটি আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ২০অক্টোবর চেম্বার বিচারপতির আদালতে এগুলো উপস্থাপন করা হবে।ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল হক জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। এ কারণে দ্রুত রিভিউ শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানানো হয়েছে।
একাত্তরে গণহত্যার দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে দেওয়া আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। পরদিন তাঁদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ওই দিনই কারা কর্তৃপক্ষ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুজাহিদ এবং গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে সাকা চৌধুরীকে ওই পরোয়ানা পড়ে শোনান।আপিল বিভাগের রায় অনুসারে, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে হবে। আর পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে দণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাবে। এ জন্য নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার একদিন আগে বুধবার (১৪ অক্টোবর) সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের পক্ষে ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়। এতে বিষয়টি নিষ্পত্তির আগে তাঁদের দণ্ড আর কার্যকর করা যাবে না।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ওই সময়ের আলবদর নেতা মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২।আর মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একই বছরের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে মুত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। তাঁরা দুজনেই ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন।পরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ বছরের ১৬ জুন মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। একই বেঞ্চ সাকা চৌধুরীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে রায় দেন ২৯ জুলাই।এর আগে একাত্তরে গণহত্যার দায়ে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তাঁরা দুজনই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিলেন। পরে দুটি আবেদনই খারিজ হয়ে যায়। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। আর চলতি বছরের ১২ এপ্রিল জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তবে সাঈদীর মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশিত হয়নি
মোট ৩৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ৩২টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়েছেন মুজাহিদ। রিভিউয়ের পেপারবুক দাখিল করা হয়েছে তিন শতাধিক পৃষ্ঠার। অন্যদিকে সাকা চৌধুরী তার মোট ১০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়েছেন। দু’জনেরই প্রধান আইনজীবী হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদন দু’টির শুনানিতে আসামিপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন,যিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা। অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপিল মামলাগুলোর মতোই এ শুনানিতেও রাষ্ট্রপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন।সুপ্রিম কোর্টে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে অবকাশকালীন ছুটি চলছে, শেষ হবে ৩১ অক্টোবর।তাই অবকাশকালীন সময়ে রিভিউ আবেদনের শুনানি হবে কি-না সে বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার সম্পূর্ণ প্রধান বিচারপতির।
আগামী মঙ্গলবার আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি বসবেন। খুব সম্ভবত ওইদিনই রিভিউ আবেদনের শুনানির দিন নির্ধারিত হতে পারে বলেও মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। গত ১৬ জুন আলী একাত্তরের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদ ও গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্তাকারে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ পৃথক পৃথকভাবে এ রায় দেন। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।পরে ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের এই দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়।
পরদিন ০১ অক্টোবর তাদেরকে আপিল বিভাগের রায় অবহিত করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে পড়ে শোনানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা তাদের মৃত্যু পরোয়ানা।নিয়ম অনুসারে সে থেকে নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করেছেন মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী।যদি এ আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন, বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়ার সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন মুজাহিদ। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-১। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপির এই নেতা।২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হন সাকা চৌধুরী।পরে একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।