1444591752

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ অক্টোবর ২০১৫: সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদএকাত্তরে গণহত্যার দায়ে মৃতু্যদণ্ডাদেশ পাওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ বুধবার সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছেন৷ বুধবার (১৪ অক্টোবর) আপিল বিভাগে পৃথকভাবে আবেদন দু’টি দাখিল করা হয়েছে৷ সকাল দশটা ১০ মিনিটে মুজাহিদ ও বেলা ১২টা ১০ মিনিটে সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদন জমা দেওয়া হয়৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর আইনজীবী মো. হুজ্জাতুল ইসলাম খান এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের অন্যতম আইনজীবী শিশির মনির এ তথ্য জানান৷অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ফৌজদারি মামলায় রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ কম৷ সাধারণত দৃশ্যমান কোনো আইনগত ত্রুটির ক্ষেত্রেই রায় পুনর্বিবেচনা আমলে নেওয়া হয়৷ তা ছাড়া রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ খুবই কম বলে তিনি উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, েেদশের সর্বোচ্চ আদালত যে দণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন তা বহাল থাকবে৷

সাকা চৌধুরীর আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম দুপুরের দিকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে৷ ১০৮ পৃষ্ঠার এ আবেদনে ১০টি যুক্তি দেওয়া হয়েছে৷সাকা চৌধুরী গাজীপুরের কাশিমপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এ ফাঁসির সেলে বন্দী রয়েছেন৷ গত ৬ অক্টোবর কারাগারে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত্‍ করেন আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম৷ সাক্ষাত্‍ শেষে এই আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের ব্যাপারে সাকা চৌধুরী তাঁকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন৷ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এ আবেদন করা হবে৷ সেই অনুসারে আজ রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হলো৷মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-১৷ পরে খালাস চেয়ে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন সাকা চৌধুরী৷ আপিলের রায়েও তাঁর সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে৷জামায়াত নেতা মুজাহিদের অন্যতম আইনজীবী শিশির মনির সকালের দিকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে৷ ৩৮ পৃষ্ঠার এ আবেদনে ৩২টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে৷ পরে মুজাহিদের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছি৷ এ জন্য আমরা বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছি৷ আমরা আশা করি, আমাদের যুক্তি ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত যে দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল, আদালত তা বাতিল করবেন৷মুজাহিদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে আছেন৷গতকাল মঙ্গলবার এই জামায়াত নেতার সঙ্গে তাঁর আইনজীবীরা সাক্ষাত্‍ করেন৷ সাক্ষাত্‍ শেষে আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, মুজাহিদ এই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ ওই আবেদন করলেন মুজাহিদ৷বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে সর্বোচ্চ সাজা দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২৷ খালাস চেয়ে ট্রাইবু্যনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি৷ কিন্তু বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায়ে আপিলেও তাঁর সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে৷

মুজাহিদের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ৩০ সেপ্টেম্বর৷ একই দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আপিল মামলারও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়৷ ওই দিন রাতে আপিল বিভাগের এই দুটি পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে পৌঁছায়৷ ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর মৃত্য পরোয়ানায় সই করে কারাগারে পাঠান৷দু’জনেরই প্রধান আইনজীবী হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদন দু’টির শুনানিতে আসামিপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, যিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা৷ দুপুরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন খন্দকার মাহবুব হোসেন৷ তিনি দাবি করেন, জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় রিভিউ আবেদনের যুক্তিগুলো সঠিকভাবে বিবেচনা করলে মৃতু্যদণ্ড বাতিল হবে৷মুজাহিদের রিভিউ সম্পর্কে শিশির মনির বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ২২ মাস ধরে তদন্ত করে আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির কোনো তালিকায় তার (মুজাহিদ) নাম খুঁজে পাননি৷ কিন্তু এ বিষয়ে আপিল বিভাগ কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে চূড়ান্ত রায়ে মুজাহিদকে আলবদর কমান্ডার বলছেন৷ এটা স্পষ্ট নয়৷ রিভিউয়ে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে৷এছাড়া আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, একাত্তরের ২৩ বছরের একজন ছাত্র ও বেসামরিক ব্যক্তি কিভাবে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর প্রধান হন?তিনি বলেন, এ রকম আরো কিছু বিষয় আছে৷ সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আশা করি, তিনি অভিযোগ থেকে রেহাই পাবেন৷একই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সাকা চৌধুরীর আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম আলফেসানিও৷

অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপিল মামলাগুলোর মতোই রিভিউ আবেদনগুলোর শুনানিতেও রাষ্ট্রপক্ষে েনেতৃত্ব দেবেন৷গত ১৬ জুন আলী একাত্তরের কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদ ও গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্তাকারে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ পৃথক পৃথকভাবে এ রায় দেন৷ অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী৷পরে ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের এই দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়৷ পরদিন ০১ অক্টোবর তাদেরকে আপিল বিভাগের রায় অবহিত করে কারাগার কর্তৃপক্ষ৷ একইসঙ্গে পড়ে শোনানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের জারি করা তাদের মৃতু্য পরোয়ানা৷নিয়ম অনুসারে সে থেকে নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করলেন মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী৷যদি এ আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে মৃতু্যদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না৷মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইবু্যনাল-২৷ চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন, বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়ার সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইবু্যনাল এ রায় দেন৷ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ৷ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন মুজাহিদ৷ পরে ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়৷অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-১৷ চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন৷এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপির এই নেতা৷২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হন সাকা চৌধুরী৷ পরে একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়৷